নাদিয়া হত্যা মামলার এক বছর বীরদর্পে খুনী রেজাউল সিকদার

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো বরিশালের বহুল আলোচিত পিতৃ হত্যাকারী লম্পট রেজাউল সিকদার কর্তৃক চতুর্থ স্ত্রী অন্তঃস্বত্তা কামরুন নাহার নাদিয়া হত্যা মামলার একটি বছর। নাদিয়াকে হত্যা করে লাশ গুমের সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলো ঘাতক রেজাউল। কয়েক মাস কারাভোগের পর অর্থের জোরে জামিনে বেরিয়ে আসে খুনী রেজাউল। বর্তমানে খুনী বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মামলার বাদি নিহত নাদিয়ার ভাইকে মামলা উত্তোলনের জন্য দিচ্ছে নাদিয়ার ন্যায় হত্যার হুমকি। এ নিয়ে চরম আতংকের মাঝে দিনাতিপাত করছেন আলোচিত এ মামলার বাদি সজিব আহম্মেদ শাহ্রিয়ার সুজন।

সূত্রমতে, বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার টরকী বন্দরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউল। ঢাকায় বসবাসের সুবাধে রেজাউলের সাথে পরিচয় হয় বনানী ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি কলেজের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ও বরিশালের কাউনিয়া এলাকার ধনার্ঢ্য ব্যক্তি মরহুম এ্যাডভোকেট রিয়াজ উদ্দিনের কন্যা কামরুন নাহার নাদিয়ার সাথে। পরিচয়ের সূত্রধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রেজাউল তার পূর্বের তিনটি বিয়ের কথা গোপন রেখে ২০১০ সনের নবেম্বর মাসে নাদিয়াকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে তারা রায়েরবাজারের ৯১ হাতেমবাগের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলো। এরইমধ্যে নাদিয়া দু’মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পরেন। বিয়ের পর থেকেই নাদিয়ার পিতার অঢেল সম্পত্তির ওপর রেজাউলের লোলুপ দৃষ্টি পরে। হত্যাকান্ডের একমাস পূর্বে রেজাউল তার সহযোগীদের নিয়ে নাদিয়ার পিতার কাউনিয়া এলাকার একটি বিশাল পুকুর দখল করে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। এ নিয়ে নাদিয়ার সাথে রেজাউলের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এ ঘটনার জেরধরে গত বছরের ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা বাঁধে। একপর্যায়ে রেজাউল তাকে (নাদিয়াকে) পরিকল্পিত ভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। নিহত নাদিয়ার লাশগুমের জন্য ওইদিন রাতে রেজাউল তার নিজস্ব প্রাইভেটকারযোগে গৌরনদীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার শাহাবাগ থানা পুলিশ ওইদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে লাশবাহী প্রাইভেটকারসহ ঘাতক রেজাউল, চালক গৌরনদীর কটকস্থল গ্রামের আদার আলী আকনের পুত্র রবিউল আকনকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় নিহত নাদিয়ার ভাই সজিব আহম্মেদ শাহরিয়ার সুজন বাদি হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ডিবি পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে খুনী রেজাউলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চাজশ্টী দাখিল করেন। ওই মামলায় কয়েক মাস কারাভোগের পর রহস্যজনক কারনে গত ৬ মাস পূর্বে রেজাউল জামিনে বেরিয়ে আসে। এরপর থেকেই আলোচিত মামলাটি উত্তোলনের জন্য রেজাউল ও তার ক্যাডাররা বাদিকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি সহ নাদিয়ার ন্যায় হত্যার হুমকি অব্যাহত রাখে।

ঢাকার আলোচিত নাদিয়া হত্যা মামলার বাদি ও হতভাগ্য কামরুন নাহার নাদিয়ার ভাই সজিব আহম্মেদ শাহ্রিয়ার সুজন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, “শুনেছি ওর (রেজাউলের) নাকি বিশাল একটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। মামলা উত্তোলনের জন্য ওরা যেকোন সময় আমাকে আমার বোনের ন্যায় হত্যার জন্য বিভিন্ন ধরনের হুমকি অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে আমি ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে আতংকের মাঝে দিনাতিপাত করছি। আমার বোনের মতো আর যেন কোন মেয়ের জীবন ওই লম্পট রেজাউলের হাতে অকালেই ঝড়ে না যায়। আমি আমার বোনের খুনীর ফাঁসি চাই। আমার জীবনের নিরাপত্তাসহ বোন কামরুন নাহার নাদিয়ার হত্যাকারীর ফাঁসির দাবিতে আমি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগীতা কামনা করছি।

উল্লেখ্য, গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরের ফিরোজ মিয়ার কাপরের দোকানের মধ্যে বসে প্রকাশ্যে দিবালোকে ২০০৩ সনের ১ এপ্রিল সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদার তার পিতা বার্থী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাবুল শিকদারকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছিলো।