মাধবকুন্ড জলপ্রপাত যেন মৃত্যুকূপ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের মাধবকুন্ড প্রতি বছরই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক এ জলপ্রপাতে যাতায়াতের রাস্তাটি কাদাপানিতে সয়লাভ হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এ রাস্তায় তুলনামূলক তেমন কোন উন্নয়ন না হওয়ায় এ রাস্তা দিয়ে যানবাহন নিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এখানে আগত পর্যটক নারী-পুরুষ। মাধবকুন্ডের ঝরনার পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন দর্শনার্থীরা। রীতিমতো এটি এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। একটি মৃত্যুর ঘটনার পর ঘটা করে নানা পরিকল্পনা নেয়া হলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে প্রায় প্রতি বছরই ঘটে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত ২৭ বছরে এখানে কূপে গোসল করতে এবং ঝরনার চূড়ায় উঠে নিচে পড়ে ২০ জন দর্শনার্থী প্রাণ হারিয়েছেন। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার পাথারিয়ায় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত অন্যতম এ পর্যটন কেন্দে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাধবকুণ্ডে বেড়াতে আসা যুবক, ইউনিভার্সিটি ও স্কুল-কলেজের ছাত্র, তরুণ-তরুণী পর্যটকরা উচ্ছ্বাসের টানে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে নেমে যে স্থানে ওপর থেকে পানি পড়িয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে কোন নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় কূপে গিয়ে গোসল করা, সাঁতার কাটা শুরু করে। তাদের কেউ কেউ মাঝে মধ্যে অসাবধানতাবশত একেবারে ওপর থেকে পড়া পানির ধারার নিচে চলে যায়। আর তখনই ঘটে বিপত্তি। পানির কুণ্ডলিতে পড়ে গর্তে তলিয়ে যায় এবং ডুবে মারা যায়। এছাড়া পিচ্ছিল পাহাড়ের গা বেয়ে প্রায় ২০০ ফুট উঁচু থেকে আছড়ে পড়া পানি অর্থাৎ ঝরনার ওপরিভাগ দেখতে গিয়ে পা পিছলে নিচে পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু মাধবকুণ্ডের এসব বিপজ্জনক স্থান সম্পর্কে পর্যটকদের সচেতন ও সাবধান করে দেয়ার জন্য কেবল সাইনবোর্ড টানানো ছাড়া কোন উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার পর ২০০৭ সালের ৩১ মে মাধবকুণ্ড এলাকায় বেড়া দেয়া হয়েছিল। এখন সে বেড়াটিও দেখা যায় না। মাধবকুণ্ডে বেড়াতে আসা লোকজনের অভিযোগ, বন বিভাগ মাধবকুণ্ড এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য ২০০৭ সালে প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়। কয়েক মাস আগে পর্যটন পুলিশ দেয়া হলেও লোকবল ও যানবাহন পর্যাপ্ত নেই। এতে সংঘটিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে। এদিকে বড়লেখার কাঁঠালতলি বাজার থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার মাধবকুণ্ড রাস্তার বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পিচঢালা উঠে কার্পেটিং নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া রাস্তার পাশে পাহাড়ের বৃষ্টির পানি রাস্তার ওপর জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে স্থানভেদে পর্যটকদের গাড়ি থামিয়ে অনেক দূরে রেখে হেঁটে জলপ্রপাতে যেতে হয়।