আওয়ামীলীগ নেতার বাসায় ফতোয়াবাজদের গোপন বৈঠক

ধর্ষিতা গৃহবধূ অভিযোগ ও এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ মে রাতে পাশ্ববর্তী নন্দনপট্টি গ্রামের প্রভাবশালী নুরু সন্যামাতের পুত্র সাইদুর রহমান কৌশলে ঘরে প্রবেশ করে গৃহবধূকে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করে। ওইসময় তার (গৃহবধূর) আত্মচিৎকারে বাড়ির লোকজনে এগিয়ে এসে ধর্ষককে আটক করে। এ ঘটনায় ওইসময় (৩০ মে) মামলা না করার জন্য ধর্ষকের প্রভাবশালী আত্মীয়রা গৃহবধূকে চাপ প্রয়োগ করে। এ ঘটনায় স্থানীয় কতিপয় আওয়ামীলীগ নেতা গত ৩১মে রাতে বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে ধর্ষককে উপস্থিত না করে ফতোয়া দিয়ে গৃহবধূকে নষ্টা আখ্যায়িত করা হয়। এক পর্যায়ে প্রবাসী স্বামীকে না জানিয়ে গৃহবধূর কাছ থেকে জোড়পূর্বক তালাক নামায় স্বাক্ষর আদায় করে ফতোয়াবাজরা। পরবর্তীতে  শারিরীক নির্যাতনের পর গৃহবধূর ব্যবহৃত স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য মালামাল রেখে ওইরাতেই দু’শিশু সন্তানসহ গৃহবধূকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। অসহায় গৃহবধূ উপায়অন্তুর না পেয়ে তার পৈত্রিক বাড়ি কটকস্থলে আশ্রয় নেন।
এ ঘটনায় ধর্ষিতা গৃহবধূ ধর্ষক সাইদুর রহমান সন্যামাত ও তার সহযোগী বার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা নান্নু মৃধা, ফতোয়াবাজ ও বৈঠকের আয়োজক গৌরনদী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ইউনুস সিকদার, বার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা নিতাই লাল মন্ডল, আকবর সিকদার, ভাসুর আব্দুল হাই সরদারকে আসামি করে গত ১ মে গৌরনদী থানায় মামলা দায়ের করেন। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ধর্ষকের নিকট আত্মীয় ও ফতোয়াবাজ উল্লেখিত আসামিরা গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা রাজু আহম্মেদ হারুন হাওলাদারের টরকী বন্দরস্থ বাসায় ঘন্টাব্যাপী গোপন বৈঠক করেন। নামপ্রকাশ না করার শর্তে গোপন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, ধর্ষিতা গৃহবধূ ও পুলিশকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করতে বৈঠকে উপস্থিত দু’প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আওয়ামীলীগ নেতার বাসায় গোপন বৈঠকের কথা অস্বীকার করে রাজু আহম্মেদ হারুন বলেন, আসামিরা ও তার আত্মীয়-স্বজন সকালে আমার বাসায় অন্য একটি কাজে এসেছিলো। অপরদিকে গত বুধবার ধর্ষিতা গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। একইদিন গৃহবধূ হালিমা বেগম (২৬) বরিশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মৃত্যুঞ্জয় মিস্ত্রির কাছে ধর্ষিতা হওয়ার কথা ও ফতোয়ার জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বরিশাল জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা অনতিবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেন।