পরিবারকে অবরুদ্ধ করেছে আ’লীগ নেতা – সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কিশোরী কন্যাকে অপহরন

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ সম্পত্তি আত্মসাতের লক্ষ্যে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত প্রত্যন্ত সাতলা ইউনিয়নের পশ্চিম সাতলা গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক দিনমজুরের কিশোরী কন্যাকে ফিল্মিষ্টাইলে রাতের আধাঁরে অপহরন করে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপহরনকারী যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মান্নুর চাচা সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ফজলুল হক হাওলাদার ও তার সহযোগীরা বিষয়টি যাহাতে থানা পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে জানানো না হয় সেজন্য গত ১৩ দিন ধরে অপহৃতার পরিবারকে জিম্মি করে রেখেছে। অবশেষে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে সংবাদকর্মীদের সহায়তায় থানা পুলিশ জিম্মিদশা থেকে সোমবার রাতে অপহৃতার পরিবারকে উদ্ধার করে। অপহরনের ঘটনায় ওইদিন রাতেই থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

এজাহার ও অপহৃতার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের দিনমজুর অখিল হালদারের সহয় সম্পত্তি আত্মসাতের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন থেকে নানামুখী ষড়যন্ত্র করে আসছে একই গ্রামের ভূমিদস্যু মোশারেফ হোসেন হাওলাদার ও তার পুত্র প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মান্নু। এ ঘটনার জেরধরে গত ২৪ এপ্রিল রাতে মান্নু ও তার ৭/৮ জন সহযোগীরা দিনমজুরের কিশোরী কন্যা শম্পা হালদারকে (১৬) ফিল্মিষ্টাইলে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক অপহরন করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর পরই অপহরনকারীর চাচা সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক হাওলাদার ও তার সহযোগীরা অপহৃতার পরিবারকে জিম্মি করে রাখে।

দিনমজুর অখিল হালদার জানান, অপহরনকারী মান্নুর পিতা মোশারেফ হোসেন হাওলাদার তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের অপহরনের বিষয়টি কাউকে (থানা পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের) না জানানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদর্শন করেন। তিনি আরো জানান, প্রভাবশালী ফজলুল হক হুমকি দিয়ে তাদের বলেছেন, তাদের  কথামতো না চললে অপহৃতা শম্পাকে মেরে লাশ গুম ও তাদের স্ব-পরিবারকে হত্যা করা হবে।

ঘটনার দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়া সত্বেও প্রভাবশালীদের হুমকির মুখে অপহৃতার পরিবার কারো কাছে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। অবশেষে লোকমুখে খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা অপহৃতার বাড়িতে গেলে অপহরকারী মান্নুর সহযোগী সোহেল হাওলাদার সংবাদকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ হুমকি প্রদর্শন করে বলেন, এ ঘটনা জানাজানি হলে অখিলের লাশও কেউ খুঁজে পাবে না। অবশেষে সংবাদকর্মীরা বিষয়টি উজিরপুর থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশ সোমবার রাতে অপহৃতার পরিবারকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করেন। ওইদিন রাতেই অপহৃতার বাবা অখিল হালদার বাদি হয়ে উজিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

অপরদিকে গত ১৪ দিনেও অপহৃতা শম্পার কোন খোঁজ না পাওয়া তার মা ঝর্ণা হালদার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।

এ ব্যাপারে সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্লা রিয়াজ উদ্দিন সোহাগ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল খালেক আজাদ, যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বালী, খায়রুল বাসার লিটনসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, ফজলুল হক ও তার ভাই মোশারফ হোসেন দীর্ঘদিন থেকে দিনমজুর অখিলের জমিজমা আত্মসাত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করে আসছে। যে কারনেই মান্নুকে দিয়ে অখিলের মেয়ে শম্পাকে অপহরন করানো হয়েছে। বিলম্বে হলেও তারা অপহরনের খবর জানতে পেরে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের ও থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেছেন বলেও তারা উল্লেখ করেন। উজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সুকুমার রায় মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আসামিদের গ্রেফতার ও অপহৃতাকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের জোড় প্রচেষ্টা চলছে।