বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে কদর বেড়েছে ক্যাডারদের

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গন। কেন্দ্র ঘোষিত যেকোনো সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলার জন্য শক্তি সঞ্চয়ে মাঠে নেমেছে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে কদর বেড়েছে ক্যাডারদেরবিএনপি ও আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা। বিএনপির কেন্দ্রীয় যেকোনো কর্মসূচী পালনের লক্ষ্যে বিবদমান জেলা ও মহানগর বিএনপির কাছে এখন কদর বেড়েছে ক্যাডারদের। পূর্বে হরতালসহ যেকোনো কঠোর কর্মসূচী ও দলীয় কোন্দল ঠেকাতে জেলা বিএনপির ভরসা ছিলো ছাত্রদলের সরকারি বরিশাল কলেজ শাখার আহবায়ক ও নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসী রাফসান আহমেদ জিতু। অনুরূপ মহানগর বিএনপিতেও ছিলো ১৯ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নগরীর ত্রাস ফিরোজ খান কালু ও তার ভাই মিরাজ। এরইমধ্যে গত ২৪ মার্চ ছাত্রদল নেতা জিতু প্রতিপক্ষ ক্যাডার কালু ও মিরাজের হাতে খুন হয়। জিতু খুন হওয়ায় ক্যাডার সংকটে পড়ে জেলা বিএনপি। একইভাবে কালু ও তার ভাই মিরাজ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ায় মহানগর বিএনপিও ক্যাডার সংকটে পড়ে। ফলে রাজপথে আওয়ামীলীগকে মোকাবেলা করাতো দূরের কথা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল মোকাবেলাতেই শক্তিহীন হয়ে পড়ে বিবদমান বিএনপির দু’গ্রুপ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ঘটনায় কেন্দ্র ঘোষিত হরতালে এর প্রভাব দেখা দেয়ায় দু’গ্রুপই ক্যাডারদের নিজ নিজ গ্র“পে অন্তর্ভুক্ত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। হরতাল ও পরবর্তী বিক্ষোভ সমাবেশে দেখা গেছে মহানগর বিএনপিতে কালুর স্থানে যোগ দিয়েছেন নতুন নতুন ক্যাডার। জেলা বিএনপিও এগুচ্ছে সমান তালে। এতে সংঘাতের আশংকা করছেন খোদ দলীয় নেতারাই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর বিএনপি দলীয় হওয়ায় সন্ত্রাসী প্রকৃতির এসব কর্মীকে দলে ভেড়াতে তাদের ওপরই দায়িত্ব দিয়েছেন শীর্ষ এক নেতা। পিছিয়ে নেই ওয়ার্ডে থাকা বিএনপি নেতারাও। তারা আগামী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে নিজেদের সন্ত্রাসী বাহিনী গঠনের পাশাপাশি তাদের দলীয় কাজে ব্যবহার করছেন। হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচীতে এদের পিছনে মোটা অংকের টাকা ছড়ানো হচ্ছে।

জানা গেছে, বরিশাল মেট্রো পলিটন (বিএমপি) পুলিশকে চার ভাগে বিভক্ত করায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কিংবা ওয়ার্ডের গডফাদারদের সুবিধা বেড়েছে। নগরীর কাউনিয়া থানা, বিমানবন্দর থানা, কোতয়ালী থানায় কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশ নির্ভর করে স্থানীয় কাউন্সিলর ও নেতাদের ওপর। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করে। এতে করে এসব নেতার শক্তি বেড়ে যাওয়ায় এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করে চলছে তারা। গত ৭ মে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপিসহ ১৮ দলের হরতালসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের সাথে জড়িতদের প্রতিহত করতে দলের সকল নেতা-কর্মীকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। ওই সমাবেশে রাজনৈতিক যেকোনো বাঁধা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে বলে ঘোষনা দেয়া হয়েছে। এরপর গত ৯ মে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে মহানগর বিএনপি ও জেলা বিএনপিতে দেখা গেছে ওয়ার্ডে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রাজপথে নেমেছে। ফলে রাজনৈতিক সংঘাতের আশংকা করছেন এলাকাবাসি।

শাসক দল আওয়ামীলীগেও সন্ত্রাসীদের অবস্থানের কথা স্বীকার করে মহানগর আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক ও সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন বলেন, অশ্লীল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ব্যানার ও বিলবোর্ডে প্রধান অতিথি হিসাবে আমার নাম লেখা হয়। পুলিশ যাতে বিরক্ত না করে সে কারনেই অপরাধীরা এ কৌশল অবলম্বন করছে। অথচ এসব অনুষ্ঠান সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।