বরিশাল অঞ্চলে ধান এখন কৃষকের গলার কাঁটা

খোকন আহম্মেদ হীরা, গৌরনদী ॥ বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়ার চরআইচা গ্রামের কৃষক জালাল বেপারী এক একর জমিতে ইরি-বোরা চাষ করে ধান পেয়েছেন ৬০ মন। ২২ টাকা দরে প্রতিকেজি সার ক্রয়সহ সব মিলিয়ে প্রতিমণ ধান উৎপাদনে তার খরচ পড়েছে ৫’শ ৫০ টাকা। কৃষক জালাল বেপারীর ভাবনাছিলো উৎপাদিত ধান বিক্রি করে সেচ, সার, বীজ, কীটনাশকসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বকেয়া ঋণের টাকা শোধ করবেন। কিন্তু বিধিবাম, ধান বিক্রি করতে গিয়ে তিনি দেখছেন প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৪’শ থেকে ৪’শ ৫০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিকেজি ধানের মূল্য পড়ছে ১০ থেকে ১১ টাকা, এতে প্রতিমণ ধানে ওই কৃষকের লোকসান হচ্ছে ১’শ থেকে ১৫০ টাকা। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে হতাশ কৃষক জালাল বেপারী বলেন, ‘ধানের পাইকার (ব্যাপারি) এখন আমাদের কোনো পাত্তাই দেয় না, হেরা কয়-এই দামে ধান বেচলে বেচো নইলে যাও। তিনি আরো বলেন, এমন অইলে তো সামনের দিকে আর ধান চাষ করোন যাইবো না’। অসহায় কৃষক জালালের মতোই সোনালী ধান এখন বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকার প্রতিকেজি ধানের মূল্য ১৮ টাকা এবং চাল ২৮ টাকা মূল্য নির্ধারণ করলেও এর সুফল পাচ্ছে না কৃষকেরা। গত ৩ মে থেকে সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করার কথা থাকলেও বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে এখন পর্যন্ত এ কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি বরিশালের খাদ্য বিভাগ।

এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ধানের ব্যাপারি, ফড়িয়া ও আড়তদাররা কৃষকদের ঠকিয়ে যাচ্ছেন। ঋণের দায়ে জর্জরিত কৃষকরাও বাধ্য হয়ে উৎপাদনের চেয়ে অনেক কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। ঘাম ঝড়ানো শ্রমে উৎপাদিত ফসল লোকসান দিয়ে বিক্রি করার কারনে হতাশ অনেক কৃষক আগামীতে ধান উৎপাদন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বরিশাল কৃষি অঞ্চলে মোট ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫৪৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পরিমাণ ধান উৎপাদিত হয়েছে।

বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, বরিশাল বিভাগ থেকে এবছর ৪ হাজার ৫৭২ মেট্টিক টন ধান এবং ১ হাজার ৫৭৪ মেট্টিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে। এরমধ্যে বরিশাল জেলা থেকে সংগ্রহ করা হবে ১ হাজার ৯’শ ৯২ মেট্টিক টন ধান এবং ৭’শ ১১ মেট্টিক টন চাল। ভোলা জেলা থেকে ১৬’শ ১৮ মেট্টিক টন ধান এবং ৬১ মেট্টিক টন চাল, পিরোজপুর থেকে ধান ৫৯৫ মেট্টিক টন, চাল ৫৪ মেট্টিক টন, পটুয়াখালী থেকে ৯৮ মেট্টিক টন ধান, ৭৪৮ মেট্টিক টন চাল, ঝালকাঠি থেকে ২৫৭ মেট্টিক টন ধান ও বরগুনা থেকে ১২ মেট্টিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। তবে এই দু’জেলা থেকে কোনো চাল সংগ্রহ করা হবে না।

ধান চাল সংগ্রহের সার্বিক বিষয়ে বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্বপন কুমার বণিক বলেন, ধান-চাল সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শিগরই ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে