কৌশলে হিজবুত তওহীদ – যতো গ্রেফতার ততো প্রচার

খোকন আহম্মেদ হীরা, গৌরনদী ॥ আইন শৃংখলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান ও দলের প্রতিষ্ঠাতা বায়েজীদ খান পন্নীর মৃত্যুর কারনে দীর্ঘদিন গাঁ ঢাকা দিয়ে থাকার পর ফের নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে উগ্রপন্থি মৌলবাদী সংগঠন হিজবুত তওহীদের প্রশিক্ষিত সদস্যরা। বায়েজীদ খান পন্নীর স্থলাভিসিক্ত নতুন ইমাম নোয়াখালী এলাকার হোসেন মোহাম্মদ সেলিম ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনের কার্যক্রমকে পূর্ণরায় সচল করার কৌশল হিসেবে গ্রেফতারের পথকেই বেঁছে নিয়েছেন। হিজবুতের সদস্যরা যতো বেশি গ্রেফতার হবে মিডিয়ায় তাদের সংবাদ ততো বেশি প্রচার করবে। এরই মাধ্যমে তাদের সংগঠনের প্রচারনা আরো বেড়ে যাবে, এমনই কৌশল নিয়ে হিজবুত তওহীদের সদস্যরা তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। ফলশ্র“তিতে গত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হিজবুতের প্রায় শতাধিক সদস্য-সদস্যরা পুলিশের হাতে কৌশলে ধরা দিয়েছেন। সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে একান্ত আলাপকালে জনকন্ঠের এ প্রতিনিধির কাছে কথাগুলো বলেছেন, হিজবুত তওহীদের দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার আমীর বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সাকোকাঠী গ্রামের আব্দুল মান্নান মীরের সেকেন্ড ইন-কমান্ড মোঃ জামাল শরীফ। একইভাবে জানিয়েছেন, পুলিশের হাতে আটক হওয়া মান্নান মীরের স্ত্রী বকুল বেগম।

সূত্রমতে, বিগত বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের প্রথমার্ধ থেকেই দক্ষিণাঞ্চলে উগ্রপন্থী জঙ্গী সংগঠন হিজবুত তওহীদের সদস্যরা শক্ত ঘাটি গড়ে তুলেছে। বিভাগের সকল জেলা ও উপজেলায়ই এদের প্রশিক্ষিত সহস্রাধিক সদস্য-সদস্যা রয়েছে। বেশ জোরেশোরেই তাদের জেহাদী পরিকল্পনার কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। মাঝখানে বরিশাল অঞ্চলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও ব্যাপক ধরপাকরে তারা আত্মগোপনে থেকে হিজবুতের প্রশিক্ষিত নারী সদস্যদের মাধ্যমে কৌশলে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন ইমামের যোগদানের পর ফের এরা প্রকাশ্যেই মাঠে কার্যক্রম পরিচালনায় নেমেছে। অবশ্য প্রশাসনও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে বরিশাল ও পটুয়াখালী থেকে জেহাদী বই লিফলেট সিডিসহ বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। এরমধ্যে ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর বাসা থেকেও আটকের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ও প্রশাসনে তোলপাড় চলছে।

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার হিজবুত তওহীদের আমীরের দায়িত্বে রয়েছে গৌরনদী উপজেলার সাকোকাঠী গ্রামের মৃত জয়নাল ওরফে সেদু মীরের পুত্র আব্দুল মান্নান মীর। তার অধীনে রয়েছে প্রশিক্ষিত সহস্রাধীক সদস্য-সদস্যা। গত ১৫ মে হিজবুত তওহীদের কার্যক্রম পরিচালনাকালে মান্নান মীরের স্ত্রী বকুল বেগম (৫০), একই গ্রামের আব্বাস বেপারীর কন্যা বিথী আক্তার (১৮), মফসের খানের স্ত্রী মাহিনুর বেগম (৪২), মোবারক হাওলাদারের কন্যা ও কলেজ ছাত্রী নাজমুন নাহার বিথী (১৯), শাহজিরা গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম (৪৫) ও ঝালকাঠীর নলছিটি এলাকার হারুন-অর রশিদের কন্যা আমেনা আক্তারকে (১৮) পুলিশ আটক করে। গৌরনদীর সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ শাহজালাল খলিফা জানান, আটককৃতদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান জেহাদী আপত্তিকর বই, লিফলেট ও সিডি উদ্ধার করা হয়েছে। একইদিন রাতে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ধর্মপ্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোঃ শাহজাহান মিয়ার পটুয়াখালীর বাসা থেকে পুলিশ হিজবুত তওহীদের সদস্য শহরের কলাতলা এলাকার জাহাঙ্গীর মৃধার পুত্র হান্নান মৃধা (২৫) ও বল্লভপুর এলাকার মোজাম্মেল তালুকদারের পুত্র জসিম উদ্দিন তালুকদারকে (২৮) আটক করে। পুলিশ তাদের কাছ থেকেও বই ও লিফলেট উদ্ধার করেছে। একইদিন বিকেলে বানারীপাড়া থেকে ২ জন ও গত ১২ মে গৌরনদীর হোসনাবাদ থেকে ৪ জন, ১৫ মে হিজলা থেকে ৩ জন হিজবুত তওহীদের সদস্যকে পুলিশ আটক করে। আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে প্রেরন করা হলেও কয়েকদিন পর তারা জামিনে বেড়িয়ে এসে পূর্ণরায় সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে হিজবুত তওহীদে স্কুল-কলেজগামী কিশোর-কিশোরী কিংবা মহিলাদের অর্ন্তভুক্ত করায় উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন সচেতন মহল।