দলের দুর্দিনে সংস্কারপন্থীদের কাছে টানছেন খালেদা জিয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ হার্ডলাইনে থাকায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ জোটের নেতাদের দুর্দিন চলছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের ৩৩ জন শীর্ষ নেতারা মামলার পর জামিন না পেয়ে কারাগারে যাওয়ার পর দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও ভীতি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় দলের হাল ধরতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দলের নেতা-কর্মীদের রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যেতে তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেছেন, কে সংস্কারপন্থী আর কে নয়, তা বিবেচনা করলে চলবে না। বিএনপি ও জোটে যে অবস্থা চলছে তাতে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সময় এটা নয়। এখন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সময়। দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, সারাদেশের সব পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সরকারের দমন-পীড়ন নীতির বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। শীর্ষ নেতারা জেলে থাকায় বিএনপি ও জোটের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে খালেদা জিয়া পরপর দু’দিন গুলশানের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি দল ও জোটের নেতাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশের মানুষ সোচ্চার। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও জামিন না দিয়ে সরকার শুভ আচরণ করেনি। বিএনপিকে ভাঙ্গার জন্যই আওয়ামীলীগ এ ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না। বিএনপির ওই নেতা আরো বলেন, চেয়ারপারসন বলেছেন, কে সংস্কারপন্থী আর কে নয় তা দেখার সময় এটা নয়। দলের সঙ্গে যাঁরা জড়িত আছেন এবং দলের পক্ষে যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এটা। বিএনপি কঠিন সময় পার করছে। তবে সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে। গ্রেফতার হওয়ার দু’দিন আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যিনিই বিএনপির সঙ্গে থাকবেন তাঁদের পথ সব সময় খোলা। সেই ব্যক্তি সংস্কারপন্থী ছিলেন কি না, তা বিবেচ্য নয়।

এদিকে সংস্কারপন্থী বলে পরিচিত দলের বড় একটি অংশ বিএনপিতে মিশে গেলেও একটি অংশ এখনো সক্রিয় হতে পারেনি। দলের কট্টরপন্থীদের কারণে তাঁদের এই হাল। দলের জন্য তাঁরা কাজ করছেন ভেতরে ভেতরে। অপেক্ষায় আছেন আনুষ্ঠানিক ডাক পাওয়ার। বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ডাক পেলেই তাঁরা দলের জন্য সরাসরি কাজ শুরু করবেন। সংস্কারপন্থীর ধূয়া তুলে যাদের দল থেকে সড়িয়ে রাখা হয়েছেন সেসব নেতারা এমন অভিমতই ব্যক্ত করেছেন।

সংস্কারপন্থীর তালিকার উপরের দিকে যাঁদের নাম রয়েছে তাঁদের অনেকেই ইতিমধ্যে বিএনপির বিভিন্ন পদে ফিরেছেন। তাঁদের এখন আর কেউ তেমন একটা সংস্কারপন্থী বলেন না। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন-দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, এম.কে আনোয়ার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু-এমপি, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, সাবেক কমিশনার নবী উল্লাহ নবী প্রমুখ।

এখনো ফিরিয়ে নেয়া হয়নি এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক হুইপ আশরাফ হোসেন (বহিষ্কৃত), মফিকুল হাসান তৃপ্তি (বহিষ্কৃত), মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান, শাহ মোঃ আবুল হোসাইন, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, নজির হোসেন, এম. জহির উদ্দিন স্বপন (সাবেক এম.পি), তাসমিম রানা, শাম্মি শেখ, যুবদল নেতা আলী আক্কাস নাদিম, নব্বইয়ের সাবেক ছাত্রনেতা সুরঞ্জন ঘোষ, ছাত্রদল নেতা মনির হোসেন প্রমুখ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্কারপন্থী অথচ বিএনপি থেকে বহিষ্কার হননি এমন অনেক নেতাই চক্ষুলজ্জায় দূরে থাকলেও তারা অনায়াসেই বিএনপির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁরা অন্য কোনো দলে ভিড়তেও নারাজ। বিশেষ করে দলের চেয়ারপারসন ডাক দিলেই তাঁরা ছুটে যাবেন। অনেকে ইতিমধ্যে গুলশানের কার্যালয়ে আসা-যাওয়াও শুরু করেছেন। অনেকে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে বিএনপির পক্ষে সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক, টিভি টক শো ও মানববন্ধন করে যাচ্ছেন।

বিএনপির জন্য কাজ করছেন অথচ সরাসরি দলীয় মঞ্চে যাচ্ছেন না এমন এক নেতা বলেন, বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, বিএনপির সঙ্গেই আছি। সংস্কার চাইলেও দলের ক্ষতি চাইনি। তাছাড়া অনেক সংস্কারপন্থী এখন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। বর্তমানে বিএনপির যে অবস্থা তাতে কে সংস্কারপন্থী আর কে নয় তা ভাবনায় রাখা ঠিক হবে না।