পরিবারের কল্যান ও গুপ্ত ধনের আশায় ॥ স্বপ্নে দেখে কন্যা শিশুকে হত্যা করল মা-বাবা

পারুল বলো মিস্ত্রি জানান, তার পুত্রবধূ আরতি রানী মিস্ত্রি সম্প্রতি রাতে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখে নিজের পরিবারের কল্যানে ও গুপ্ত ধন পাওয়ার জন্য তার কোলের শিশু কন্যাকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করেছে গর্ভধারীানি মা ও বাবা। পুলিশ বহু নাটকীয়তার পর নির্জন কলা বাগান থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে। মরা দেহ পুলিশ গতকাল শনিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে প্রেরন করেছে। ঘটনার পর থেকে নিহত শিশুর পাষন্ড মা-বাবা পলাতক রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের আধুনা গ্রামে।
গৌরনদী থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম জানান, ওই গ্রামের দিনমজুর শুকরঞ্জন মিস্ত্রির স্ত্রী আরতি রানী মিস্ত্রি গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘুমের ঘোরে  স্বপ্ন দেখেন তার কোলের শিশু কন্যাকে হত্যা করে ফেলতে হবে। নচেৎ তাদের বড় ধরনের বিপদ ও পরিবারের অকল্যান হবে। এর বিনিময়ে পাবেন গুপ্ত ধন।  পরেরদিন তার স্বামীকে আরতি স্বপ্নের কথা জানায়। স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য (পরিবারের কল্যান ও গুপ্ত ধনের আশায়) মা আরতি রানী ও বাবা শুকরঞ্জন শুক্রবার দুপুরে তার শিশু কন্যা বন্যাকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় পাশ্ববর্তী বাড়ির গীতা রানী মন্ডলের কাছ থেকে সাবল আনেন। পরবর্তীতে নিরজন ঘরের মধ্যে শিশু কন্যাকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করা হয়। এক পর্যায়ে নিহত শিশুর পিতা-মাতা সাবল দিয়ে বাড়ির লেট্রিনের স্লাব জাগিয়ে ভিতরে ফেলে দেয়। কিছুক্ষন পর লোক দেখানো ভাবে পাষন্ড মা-বাবা কান্নাজুড়ে দেয়।
প্রতিবেশী লিটন শাজী আরো বলেন, শুকরঞ্জন ও আরতির কান্নাকাটি শুনে গ্রামবাসি এগিয়ে এসে শিশুকে খুঁজতে থাকি। এক পর্যায়ে লেট্রিনের স্লাবের আংশিক নতুন ভাঙ্গা দেখে সন্দেহ হয়। স্লাব জাগিয়ে বাঁশদ্বারা লেট্রিনের ভিতরে খোঁজ করে বন্যার লাশ পাওয়া যায়। লাশ উত্তোলন করে সৎকারের প্রস্তুতি নেয়। ঘন্টাখানেকের মধ্যে নিহত শিশুর পিতা-মাতা জানায় লাশের সৎকার হয়ে গেছে। এতে এলাকাবাসির সন্দেহ হয়। খবর পেয়ে গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন শেখ, স্থানীয় পলাশ হালদার ও হালিম হাওলাদার ওইদিন সন্ধ্যায় পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করে। পরবর্তীতে তাদের কাছে স্বপ্নে দেখার বিষয়টি খুলে বলেন। ওইদিন রাতেই লাশ সরিয়ে নিয়ে পাশ্ববর্তী নিরজন কলাবাগানে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। লোকদেখানো ভাবে বাড়ির পার্শ্বে একটি গর্ত করে ছাইয়ের স্তুপ করে রেখে সৎকার হয়েছে বলে এলাকাবাসিকে জানায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত দশটার দিকে গৌরনদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পাষন্ড পিতা-মাতা তাদের অপর দুই সন্তান নিয়ে গাঁ ঢাকা দেয়।
পুলিশ গ্রামবাসির সহায়তায় মাটিচাপা দিয়ে রাখা লাশ উদ্ধার করে। ওইদিন রাত সাড়ে ১০ টার দিকে স্থানীয় হালিম হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করলে হালিম আরতি রানী মিস্ত্রির ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখার বিষয়টি ফাঁস করে দেয়।
এ ঘটনায় গৌরনদী থানার এস.আই শাহজালাল বাদি হয়ে নিহত শিশুর বাবা-মাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের মানসিক বিভাগের ইনচার্জ ডাক্তার তপন কুমার সাহা ও গৌরনদী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জয়নাল আবেদীন খানের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা বলেন, একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিই তার নিজ সন্তানকে হত্যা করতে পারে। এ ঘৃনিত কাজ যারা করেছে তারা অবশ্যই মানসিক রোগী। এদের চিকিৎসা প্রয়োজন।