বিদ্যুৎ ও পানির তীব্র সংকট – ওষ্ঠাগত গরমে বরিশালের জনজীবন অতিষ্ঠ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ প্রচন্ড তাপদাহ ও তীব্র পানি সঙ্কটে বরিশালসহ দক্ষিণ জনপদের জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রচন্ড গরমের সাথে পাল্লাদিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং। পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নেই বরিশাল নগরীতে। ফলে জনজীবনে শুরু হয়েছে হাহাকার।

বরিশালে বর্তমানে ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও প্রতিদিন বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ২৮ মেগাওয়াট। এ ২৮ মেগওয়াট বিদ্যুৎ থেকে পল্লী বিদ্যুৎকে দিতে হচ্ছে ১০ মেগাওয়াট বাকি ১৮ মেগওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে বরিশাল নগরী বাখেরগঞ্জ, নলছিটিসহ বেশ কয়েকটি এলকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু রখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। বিদ্যুৎ বিতরন কর্র্তৃপক্ষ জানায়, বরিশাল নগরীর ১৮ টি ফিডারে দিনে ও রাতে দুটি সিপ্টে লোডশেডিং করা হয় দেড় ঘন্টা করে। বর্তমানে খুলনার লোড ম্যানেজমেন্ট দপ্তর থেকে ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম দেয়া হচ্ছে। ফলে নগরজুড়ে এলাকা ভিত্তিক ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং চলছে। অপরদিকে বরিশাল নগরীতে পানির জন্য চলছে হাহাকার। নগরীর ১ কোটি গ্যালন পানির চাহিদা থাকা সত্বেও ১২ হাজার গ্রাহকের চাহিদার ৬৫ লাখ গ্যালন পানি পানি সরবরাহ করতে পারছে না নগর কর্তৃপক্ষ। মাত্র ৪০ লাখ গ্যালন পানি সরবরাহ করেই দায়িত্ব শেষ করছে বিসিসির পানি বিভাগ। তার মধ্যে চরম বিদ্যুৎ সংকট দেখা দেয়ায় পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে পানি সরবরাহ কর্যক্রম। ২৪টি পাম্পের ১৯টি পাম্প সচল থাকলেও বিদ্যুতের অভাবে তাও বন্ধ থাকছে দিনের পর দিন। ফলে নগরবাসী চরম দূর্ভেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে বিসিসির পানি বিভাগের প্রকৌশলী শফিকুল আলম জানান, বিদ্যুৎ সমস্যার কারনেই পানি সরবরাহে বিঘœ ঘটছে। তাছারা নগরীর পানির সমস্যা সমাধানে নতুন ১২টি পাম্প ও ২ টি ট্রিটম্যান্ট প্লান্ট স্থাপনের কাজ চলছে এগুলো স্থাপন স¤পন্ন হলে পানির সমস্যা থাকবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে বিদ্যুতের জন্য পাম্প চালু রাখতে না পারলে যে সমস্য সৃষ্টি হচ্ছে তা থেকে উত্তরণের কোন পথ  নগর কর্তৃপক্ষের নেই।

অপরদিকে, নগরীরর পাশাপাশি গ্রামগঞ্জের বিদ্যুতের অবস্থা আরো নাজুক। নগরসংলগ্ন গ্রামগুলোতে এখন শুধুমাত্র পল্ল¬ী বিদ্যুতের খুঁটি ও ক্যাবল লাইন আছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকা সত্ওে গ্রামের বাসিন্দারা গড়ে ২৪ ঘন্টায় ২/১ ঘন্টা করে বিদ্যুৎও পাচ্ছেন না। কোনদিন আবার কখনোই বিদ্যুৎ আসে না। কেরোসিনের কুপি বাতি জ্বালিয়ে এদের কাজ কর্ম সারতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও মাস শেষে বিদ্যুৎ বিভাগকে বিল পরিশোধ করতে হয়। এ ভোগান্তি চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। দিনে দিনে অবস্থা উন্নতির পরিবর্তে অবনতির দিকে যাচ্ছে। শহর নগরের অবস্থারও অবনতি ঘটেছে। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও গত কয়েক বছরে সরবরাহ কমেছে। যে কারণে অধিকাংশ সময় নগরীতে বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ না থাকায় সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ পানি সরবরাহ করতে পারছে না। এরমধ্যে শুরু হয়েছে প্রচন্ড গরম। পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই আছে শুধু ভ্যাবসা গরম। প্রখর রোদে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে। এখানকার আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল বৃহস্পতিবার  ৩০.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। কিছুতেই তাপমাত্রা কমছে না। বর্ষার দেখা মেলছে না কোথাও। গ্রামের মাঠ ঘাট ফেঁটে চৌঁচির হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কৃষক ফসলের মাঠে পানি তুলতে পারছে না। এ দুর্ভোগ কবে শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছে না। মানুষ অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি কিংবা গরম কমে যাওয়ার কোন সু-সংবাদ নেই কারো কাছে।