বিদেশি মিডিয়ায় সাম্প্রতিক বাংলাদেশ

মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ॥ বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার গত সপ্তাহে ভারতের ত্রিপুরা সফর করেছেন। সেখানে তিস্তাচুক্তি, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার, বন্দি প্রত্যার্পণসহ বাংলাদেশ-ভারত প্রসঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। কথাগুলো এসেছে ত্রিপুরার বিভিন্ন পত্রিকায়। বাংলাদেশে সাংবাদিকতা আরো ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। এ বিষয়ে ডয়েচে ভেলে, বিবিসিসহ অনেক মিডিয়া সংবাদ প্রকাশ করেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জয়পুরহাট জেলায় চুনাপাথরের খনির সন্ধান পাওয়া গেছে এ খবরটিও ব্যাপক কভারেজ পেয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায়। ঢাকার সঙ্গে টিপাইমুখ নিয়ে আলোচনা করবে ভারত গত সপ্তাহের এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর।

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা আইএএনএস জানিয়েছে, ভারতের ত্রিপুরা সফররত বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ বলেছেন, তিস্তাচুক্তি সই হওয়ার বিষয়টি এখন সংশ্লিষ্ট ‘সব পক্ষের রাজনৈতিক সমঝোতার’ উপর নির্ভর করছে। অন্যদিকে ঢাকা-দিল্লি বন্দি প্রত্যার্পণ চুক্তি খুব শিগগিরই সই হচ্ছে। এ ছাড়া, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের প্রশ্নেও বাংলাদেশের সাথে ইতিবাচক আলাপ-আলোচনা চলছে।

ত্রিপুরায় গত ৭ জুন তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। ঢাকা ও দিল্লির মধ্যকার প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে চারদিনের এক সফরে তিনি মেঘালয় ও ত্রিপুরা সফরে যান।

আইএএনএস আরো জানায়, উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তরের আইনি বাধা দূর হচ্ছে। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের কারাগারে আছেন। শরণ বলেন, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই চুক্তি দেখতে আগ্রহী। ভারত যদি এটা সই করে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা ইস্যুতে বিরাট ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। গত ৮ মে দিল্লিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ কনসালটেটিভ কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ এতে রাজি হয়েছে এবং তারা সে জন্য একটি প্রতিনিধিদল দিল্লি পাঠাচ্ছে বলে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ ত্রিপুরায় সাংবাদিকদের বলেন।

গত ৭ জুন তিনি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ও রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী জিতেন্দ্র চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে গত ৪ জুন পঙ্কজ শরণ মেঘালয়ের গভর্নর আর এস মুশাহারির সাথে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সাম্প্রতিক অগ্রগতির নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি মেঘালয় ও ত্রিপুরায় উভয় স্থানের সাংবাদিকদের কাছে তিস্তা পানিচুক্তির বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বশেষ অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
হাইকমিশনার বলেন, তিস্তা নদীর পানির উপরে এবং অন্যান্য ইস্যুতে যাদের স্টেক বা স্বার্থ রয়েছে সেইসব পক্ষের মধ্যে আমরা একটি রাজনৈতিক বোঝাপড়া সৃষ্টির প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছি।

পিটিআই জানায়, বাংলাদেশ হাইকমিশনার এর আগে মেঘালয়ে বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের সাথে এ পর্যন্ত নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও পর্যটনবিষয়ক যত চুক্তি সম্পাদন করেছে তার সবটাই ভারতের জন্য ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে মেঘালয় হবে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী রাজ্য। কারণ বাংলাদেশের সাথে এই রাজ্যের সীমান্তই সবচেয়ে দীর্ঘ। মেঘালয় সরকার ও সীমান্তবর্তী এলাকার জনগণ অধিকতর সীমান্ত হাট চায়। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কথা বলা হবে গুরুত্ব দিয়েই।

ভারতের ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত বাংলা দৈনিক সংবাদ লিখেছে, ভারতের ত্রিপুরায় ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ঢাকার ব্যবসায়ী মহল যথেষ্ট ইতিবাচক। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে ঢাকার কোনো অসুবিধা নেই। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন পঙ্কজ শরণ গত ৬ জুন ত্রিপুরা সীমান্ত এলাকার ফেনী নদী পরির্দশন শেষে এ কথা বলেন। এ সময় হাইকমিশনের সচিব শম্ভু সিংহ, কূুটনৈতিক কে কে মিত্তাল, বিএসএফের আইজি পিসি মিনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, আন্তঃইসলামিক মানি মার্কেট চালু করেছে বাংলাদেশ। ইসলামী শরীয়া মোতাবেক লেনদেন করার জন্য এই মার্কেট চালু করা হয়। এর ফলে ইসলামী ব্যাংকগুলো একে অন্যের তারল্য ব্যবহার করার আরো সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স এ খবর প্রকাশ করে। রয়টার্স জানায়, বাংলাদেশের ১৫ শতাংশ ব্যাংকিং হিসাব ইসলামী ব্যাংকগুলো পরিচালনা করে।

বাংলাদেশে সাংবাদিকতা আরো ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে লিখেছে ডয়েচে ভেলে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা পেশায় ঝুঁকির মাত্রা দিনকে দিন বাড়ছে, বৈ কমছে না। আততায়ীর হাতে সাংবাদিক খুনের কোনো বিচার হয় না, এখন সরকারসহ নিরাপত্তা বাহিনীও খড়গহস্ত হয়েছে গণমাধ্যমের ওপর।

ডয়েচে ভেলে আরো লিখেছে, সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ইন্টারনেটে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রতীকী প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। সাংবাদিক হাফসা হোসাইনের মতে, প্রতিকার না পেয়েই সাংবাদিকরা এখন ইন্টারনেটকে বেছে নিয়েছেন। তার ভাষায়, ‘একের পর এক এতগুলো ঘটনা ঘটলো তার কোনো কিছুরই কিন্তু সুরাহা হয়নি। যেমন সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পর এত প্রতিবাদ হলো, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা সেই ব্যাপারে কোনো কিছুই জানতে পারিনি। তাই আমার মনে হয়, অনেকটা নিরূপায় হয়েই সাংবাদিকরা এখন সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে তাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।’

তবে এতসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে, যেমনটি বললেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা এই পেশায় আছি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়েই এই পেশায় এসেছি। তাই চারপাশে হতাশা সত্ত্বেও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মানসিকতা থাকার কারণে আমি এখনো আশাবাদী। হয়তো সরকার কিংবা প্রশাসনের হুঁশ ফিরবে।

উত্তরাঞ্চলীয় জয়পুরহাট জেলায় চুনাপাথরের খনির সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর বা জিএসবি’র মহাপরিচালক মুনিরা আখতার চৌধুরী জানান, পাঁচবিবি উপজেলায় মাটির প্রায় ৫০০ ফুট গভীরে চুনাপাথরের বড় একটি মজুদ সনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের ধারণা, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই খনি থেকে সিমেন্ট শিল্পের মূল কাঁচামাল চুনাপাথর উত্তোলন করা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ১০০ ফুট পুরু স্তরটি ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে। এ বিষয়ে বিবিসি বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছে, ওই খনি থেকে চুনাপাথর উত্তোলন লাভজনক হবে কিনা, তা নির্ভর করবে মাটির কতটা গভীরে চুনাপাথর আছে, তার ওপর।
জয়পুরহাট এলাকায় মাটির নিচে চুনাপাথরের সন্ধান অবশ্য একবারে নতুন কিছু নয় বলে লিখেছে বিবিসি। এতে আরো বলা হয়, বেশ অনেক বছর আগে জেলার জামালগঞ্জে চুনাপাথরের খনি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু মাটির বেশি গভীরে থাকা এবং চুনাপাথরের স্তরের পুরুত্ব কম হওয়া, অর্থাৎ মজুদ কম হওয়ার কারণে তা আর উত্তোলন করা হয়নি। এ ছাড়া, আরেকটি উল্লেখযোগ্য খনি ছিল সিলেটের ছাতকে। কিন্তু সেটি থেকে চুনাপাথরের পুরো মজুদ উত্তোলন শেষ করা হয়েছে।

সিমেন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল চুনাপাথর। পাঁচবিবিতে নতুন মজুদ পাওয়ার খবর তাই একটি সুসংবাদ বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।

ঢাকার সঙ্গে টিপাইমুখ নিয়ে আলোচনা করবে ভারত। ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকা জানিয়েছে এ খবর। এতে বলা হয়, ভারতের মণিপুরে বহুমুখী পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশকে শেয়ার দেয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় কিছু মন্ত্রী যে আপত্তি তুলেছেন তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমর্থনে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অফিস। এ প্রকল্পের সম্ভাব্য সমতা নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের একটি দল শিগগিরই ভারত সফর করবে। ভারত নিরাপদে থেকে তাদের সঙ্গে এ নিয়ে প্রথমেই আলোচনা করতে চায়। সরকারি বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে গত ২ জুন অনলাইন দ্য হিন্দু ‘ইন্ডিয়া টু ডিসকাস ঢাকা ইকুইটি ইন টিপাইমুখ প্রজেক্ট’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে। এতে আরও বলা হয়, এ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশে ভুল বোঝাবুঝি বেড়েছে। সেখানে আতঙ্ক আছে, এ প্রকল্পের কারণে বর্ষা মওসুমে বাংলাদেশে বড় রকমের বন্যা হবে এবং খরা মওসুমে পানি প্রবাহ একেবারে কমে যাবে। এর ফলে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের একটি দল বিমানে ওই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে যাতে জনগণকে বোঝানো যায়, এ প্রকল্পটি শুধুই পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং এর মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এটি কোনো সেচ প্রকল্প নয়। টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা থেকে সিকিমে তিস্তা নদীর ওপর যৌথ মালিকানায় একটি পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের আলোচনার পথ দেখাতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে এ তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি শেষ মুহূর্তে আটকে যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণে। এতে গত বছরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফরকালে কূটনৈতিক পর্যায়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। কিন্তু মনমোহন সিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিশ্চয়তা দেন, বাংলাদেশের বড় ধরনের ক্ষতি করে এমন কোনো পদক্ষেপ ভারত নেবে না।

ভারতের নাগরিকরা বাংলাদেশে তাদের ফেলে আসা (অর্পিত) সম্পত্তির জন্য দাবি জানাতে পারবেন না। তবে বাংলাদেশে তাদের কোনো উত্তরাধিকারী বা অংশীদার থাকলে এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হলে অর্পিত সম্পত্তির জন্য দাবি জানাতে পারেন। গত ২ জুন ভারতের কোলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে এ খবর।

এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ইব্রাহিম হোসেন খান জানান, নতুন সংশোধিত ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন ২০১২’ নিয়ে নানা মহলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সংসদে পাস হওয়া আইন শুধু বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সরকার এই আইন করেছে। যুগ্ম সচিব জানিয়েছেন, বাংলাদেশের নাগরিকরাই যে অর্পিত সম্পত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন, আইনের মুখপত্রে তার উল্লেখ রয়েছে।

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর পোশাক বানানোর অর্ডার পেয়েছে বাংলাদেশ। গত ২ জুন এমন সুসংবাদটি দিয়েছে নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ। এতে বলা হয়, ঢাকা ইপিজেডে অবস্থিত বাংলাদেশের গার্মেন্টস কোম্পানি সেটেক্সকো আগামী ১০ বছরের জন্য এই পোশাক বানানোর অর্ডার পেয়েছে। মোটা কোমরবন্ধসহ গুলির ঝুলি, বেয়োনেট হোল্ডারসহ পোশাকগুলোতে থাকবে পিস্তল ঝোলানোর সুবিধাও। সেটেক্সকোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইকবাল হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে এই খবর জানান। এটি বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের জন্য আরেকটি সুসংবাদ বলে বিবেচিত হচ্ছে। ইকবাল হোসেন জানান, তারা ব্রিটিশ আর্মির জন্য আগামী ১০ বছরে গাঢ় জলপাই রঙের পোশাক, উইনটার জ্যাকেট, উইন্ডগ্রুফ জ্যাকেট, মরুভূমির জন্য উপযোগী জ্যাকেটসহ নরমাল জ্যাকেটও বানাবে। এ ছাড়া সেটেক্সকো ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ডেনমার্কসহ বিভিন্ন ইউরোপিয়ান দেশের সামরিক পোশাক বানিয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশে শিশু কন্যাকে ফিরে পেতে আইনি লড়াই শুরু করেছেন এক পাকিস্তানি মা। গত ২ জুন পাকিস্তানের দি নেশন পত্রিকা এ খবর জানায়। এতে বলা হয়, মা পাকিস্তানে আর চার বছরের কন্যা বাংলাদেশে। শিশু কন্যাকে ফিরে পেতে মা এখন পাগল প্রায়। নিরূপায় হয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন আইনের। মা’র আবেদনে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানের আদালত ওই  শিশুকে উদ্ধারে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে। শিশু শবনম বাংলাদেশে তার পিতার সঙ্গে আছেন। আর মা কাউসার সাদিককে না জানিয়ে শবনমকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তার পিতা আমিনুল হক। শিশুটির মা কাউসার সাদিকের কৌঁসুলি আদালতকে জানান, তারা এ ব্যাপারে বাংলাদেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে যাওয়ায় কাউসার সাদিককে সহযোগিতা করতে অপারগতার কথা জানিয়েছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, পাকিস্তান সরকারের উপযুক্ত মাধ্যমে কোনো নির্দেশ না পেলে এ ব্যাপারে কিছু করতে পারবেন না। বাদীর আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পর আদালত ডেপুটি এটর্নি জেনারেলের কাছে এ ব্যাপারে অগ্রগতি জানতে চান। ডেপুটি এটর্নি জেনারেল আদালতকে জানান, কোর্টের নির্দেশের ব্যাপারে সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। লাহোর হাইকোর্ট এরপর অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যদি নির্দেশ পালন না করতে চান, তাহলে সরকারের এ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। লাহোরের অধিবাসী কাউসার সাদিক আদালতে দায়ের করা পিটিশনে বলেছেন, বাংলাদেশের নাগরিক আমিনুল হক নামের এক বিহারিকে তিনি ২০০৬ সালে বিয়ে করেন। কয়েক বছর পর তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হওয়ায় আমিনুল তার চার বছরের কন্যা শবনমকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। কাউসার বলেছেন, কন্যাকে উদ্ধারের জন্য তিনি পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে অনেকবার চিঠি লিখেছেন। কিন্তু তিনি কোনো জবাব পাননি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাকে বলা হয়েছে এ ব্যাপারে তিনি যেন পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেন। আইনগতভাবে তিনি মেয়ের প্রকৃত অভিভাবক হওয়ায় তিনি হাইকোর্টকে অনুরোধ করেছেন তারা যেন তার মেয়েকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।

ই-মেইল : pavelmostafiz@gmail.com