বিদ্যুৎ সমাচার

বর্তমান মহাজোট সরকারের সাড়ে তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার হিসেব-নিকেশ হচ্ছে। গণমাধ্যমে সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে নানামুখী বিশ্লেষণ চলছে। সরকারের পক্ষ থেকেও তারা কোন কোন ক্ষেত্রে কি অর্জন করেছেন তা তুলে ধরা হচ্ছে। বিদ্যুৎ সেক্টরে বর্তমান সরকার কতদূর কি করতে পেরেছে সে নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কারণ বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে বিদ্যুৎ খাতের ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্র“তি রয়েছে। বিগত সরকারগুলোর সময়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে বিদ্যুতের অবস্থা এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, সেখান থেকে উত্তরণ ব্যতীত উপায় ছিল না। এ কারণেই বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেয়। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৬০ দশমিক ৪৬ ভাগ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ হারে। এই সময়ে ভাড়াভিত্তিক, কুইক রেন্টাল ও অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মোট ৪৯টি চুক্তি সই হয়েছে। এরমধ্যে ২০টি চুক্তি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে এক হাজার ৯৪৪ মেগাওয়াট। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের পরিমাণ হচ্ছে দুই হাজার ৮৯৪ মেগাওয়াট। যার পুরোটাই ডিজেল ও ফার্নেস তেলভিত্তিক।

২০১২ সনে এক হাজার ৯৮৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হবে। একইভাবে আগামী বছর যোগ হবে আরও তিন হাজার ৩৩৯ মেগাওয়াট। ২০১৪ সনে হবে তিন হাজার ২৯৭ মেগাওয়াট। ২০১৫ সনে দুই হাজার ১৮২ মেগাওয়াট এবং ২০১৬ সনে নতুন বিদ্যুত আসবে দুই হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে ২০২১ সনের মধ্যে মোট নতুন বিদ্যুত উৎপাদিত হবে ১৩ হাজার ১৫৪ মেগাওয়াট। আবার বিদু্যুত উৎপাদনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সনের মধ্যে মোট ৩৮ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুত উৎপাদন হবে। এসবই আশার কথা। এর সবই নির্ভর করছে সময়মতো প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নের ওপর। দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তো রয়েছেই। তার ওপর নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় জ্বালানি পাওয়া যাবে কিনা। কিংবা সম্ভাব্য জ্বালানি উৎসগুলো উন্নয়নের কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নিয়েও রয়েছে অস্পটতা। কাজেই এ অবস্থায় কাল্পনিক। বিদ্যুৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের দাম নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী তিন বছর বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু জ্বালানি উপদেষ্টা এর বিরোধীতা করে বলেন, অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেয়া ঠিক হবে না। এ থেকেও মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্ময়হীনতার একটি চিত্র পাওয়া যায়। তবে এটি নিশ্চিত করে বলা যায় যে, বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ খাতে একটি পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। তবে এই পরিবর্তন জনপ্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পেরেছে তা এখনও প্রশ্ন সাপেক্ষ। কোনো দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আধুনিক জীবনাযাত্রায় বিদ্যুৎ ছাড়া একটি মুহুর্তের কথা চিন্তাও করা যায় না। সেক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে কোন শৈথিল্য কাম্য নয়।