চারটি সাশ্রয়ী প্যাকেজ নিয়ে র্যাংকসটেলের নতুন যাত্রা শুরু হলো। দুটো পোস্টপেইড, দুটো প্রি-পেইড প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ‘কথা’, ‘নিখুঁত রেগুলার’, ‘নিখুঁত পিসিও’ এবং ‘আস্থা’ নামে চারটি সাশ্রয়ী প্যাকেজ চালু করা হয়। রোববার আবারও অনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলো দেশের অন্যতম তারহীন ল্যান্ডফোন অপারেটর (পিএসটিএন) র্যাংকসটেল । এরই মধ্যে গ্রাহকদের টেলিকম সেবা দিতে সব ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। র্যাংকসটেলের সুইচ রুমও এখন প্রস্তুত। এদিন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু র্যাংকসটেলের নবযাত্রার উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এসময় মন্ত্রী বলেন, র্যাংকসটেলের পরিবারকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি আপনাদের সফলতা কামনা করি। আপনারা এগিয়ে যান এই প্রত্যাশায় নবযাত্রার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।’ এর আগে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল জিয়া আহমেদ (অব:) ফোনে শুভেচ্ছা জানান।
চার প্যাকেজ
পোস্টপেইড ‘কথা’ প্যাকেজে যে কোনো র্যাংকসটেল নম্বরে সারা মাস যত ইচ্ছে ফ্রি কথা বলা যাবে। এর জন্য মাত্র ২০০ টাকা ভ্যাট দিতে হবে।
পোস্টপেইড ‘আস্থা’, ১০ পয়সা র্যাংকসটেলে এবং অন্য অপারেটরে ৬০ পয়সা প্রতি মিনিট। ১ মিনিট পালস।
সবচেয়ে কম টাকায় কথা বলার জন্য ‘নিখুঁত রেগুলার’ প্রি-পেইড যে কোনো মোবাইলে ৫০ পয়সা প্রতি মিনিট, র্যাংকসটেল নম্বরে ১০ পয়সা, যে কোনো ল্যান্ডফোন নম্বরে ৪০ পয়সা, প্রতি মিনিট পালস ।
‘নিখুঁত পিসিও’ প্রি-পেইড ৫৫ পয়সা প্রতি মিনিট ১ সেকেন্ড পালস যে কোনো মোবাইলে। ‘নিখুঁত’ যে কোনো রিম ১২০ টাকা । ‘আস্থা’ ও ‘কথা’ ৩০০ টাকার মধ্যে।
সেট
সেট ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকায় মধ্যে দুই ধরনের সেট পাওয়া যাবে। আগামী মাসে আরও দুটি সেট আসবে। ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ ও গাজীপুর নেটওয়ার্ক কাভারেজ আছে। কক্সবাজার থেকে ফেনী এবং চৌমোহনী পর্যন্ত সংযোগ আছে।
করপোরেট সংযোগ আলাদা সুযোগ আছে। ৩ ডিজিডের শর্টকোড নাম্বারে তারবিহীন পিএবিএক্সসহ ইন্টারকমের সব ধরনের সুবিধা থাকবে।
শোরুম
র্যাংকস-তোশিবার সব শো রুম কাস্টমার কেয়ার হিসেবে চালু হবে। কারওয়ানবাজারে ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। এসব সেন্টারে র্যাংকসটেলের সব ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে।
নেটওয়ার্ক
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে র্যাংকসটেলের চিফ অপারেটিং অফিসার আবুল কালাম শামসুদ্দিন বলেন, ‘সাশ্রযী কলরেট নিযে র্যাংকসটেলের নেটওয়ার্ক দীর্ঘ ১৫ মাস পর আবার চালু হচ্ছে। এর ফলে প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে র্যাংকসটেল থেকে র্যাংকসটেলে কথা বলা যাবে। যে কোনো প্রান্তের যে কোনো অপারেটরে কথা বলা যাবে। বন্ধ হওয়ার আগে এ নেটওয়ার্কে ৩ লাখ গ্রাহক ছিলো। আমাদের পাঁচ লাখ সংযোগ একসঙ্গে চালানোর মতো সুযোগ আছে। আশা করি আমরা এগিয়ে যাবো।’
অনুষ্ঠান
পরিচালক রুমি এ হোসাইন বলেন, ‘আমরা মূলত আজ মিডিয়াকে জানাতেই এই অনুষ্ঠানের আযোজন। সাংবাদিক বন্ধুরা আমাদের সমর্থন দিয়েছেন।
আমাদের চলার পথ বন্ধুর জেনেও আমরা কাজ করেছি। কারণ দেশের অন্য মোবাইল কোম্পানিগুলো বহুজাতিক। সাহস করে সারা দেশে কাজ করেছি। এদেশের মাটিতে শিকড় আমাদের অনেক গভীরে। দেশের টাকা দেশে রাখতেই যত ঝড় আসুক আমরা কাজ করবো।’ তিনি স্বদেশি প্রতিষ্ঠানকে মনের তাগিদে সমর্থন করতে অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা পুরনো সব গ্রাহককে বিনামূল্যে নতুন করে সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে ২০ হাজার গ্রাহক সংযোগ পেয়েছে। সেটগুলোও বিনামূল্যে মেরামত করা হচ্ছে। আমরা আপাতত হুয়াওয়ে সেট দিচ্ছি। ক্রমান্বয়ে নতুন নতুন প্যাকেজ ও সেট বাজারজাত করা হবে। আমরা সাশ্রয়ী কলরেটকে প্রধান্য দিচ্ছি।’
চলতি বছর মার্চে অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে কোম্পানিটি। আনুষ্ঠানিক যাত্রা উপলক্ষে রোববার বিজয় স্মরণির র্যাংকসটেলের করপোরেট অফিস সংলগ্ন থাইচি রেস্টুরেন্টে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
পরিচালক ফজলে সেলিম বলেন, ‘টেলিযোগাযোগ খাতে র্যাংগস গ্রুপ বিনিযোগ করে। কারণ মানুষের জীবনব্যাপী যোগাযোগ দরকার। সরকারের অনেক শর্ত মেনে, অনেক বাধা পেরিয়ে, অনেক সংগ্রাম করে আমরা টিকে থেকেছি।’
সিইওর বক্তব্য
র্যাংগস গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং র্যাংকসটেলের প্রেসিডেন্ট ও সিইও এ রউফ চৌধুরী বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের জন্য আনন্দের দিন। আমরা অনেক বড় করে বা ঘটা করে না জানিয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানাতে চাই। একবার যাত্রা শুরুর পর যাত্রা ভঙ্গ হওয়ায় আমরা ব্যথিত ছিলাম। ২০০৫ সালে পহেলা বৈশাখে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। কিন্ত ২০১০ সালে সরকার দেশি ১৯টি পিএসটিএন কোম্পানিকে বন্ধ করে দেয়। এখন আর আমরা ছাড়া অন্য কাউকে সরকার আর বাজারে আনতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্লোগান দিয়েছিলাম দেশের টাকা দেশে রাখুন। আমি এখনো বুঝি না সরকার কেন দেশি কোম্পানিগুলোকে বন্ধ করেছিল। দেশের কোম্পানিকে অনেক শর্তের মাধ্যমে সরকার অনুমতি দিয়েছে। আমাদের ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন করে দেওয়ায় আবার নতুন করে শুরু করতে হলো।’
তিনি দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন। সেইসঙ্গে সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ করার ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হুয়াওয়ের পরিচালক মিস্টার লিও, র্যাংকসটেলের পরিচালক জাকিয়া রউফ চৌধুরী, অপর পরিচালক রোকসানা বেগম ও কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ফ্ল্যাশব্যাক
র্যাংকসটেল লাইসেন্স পায় ২০০৪ সালে। অপারেশন শুরু হয় ২০০৫ সালে ঢাকার বাইরে। ২০০৭ সালে দেশব্যাপী লাইসেন্স পায়। ২০১০ সালে তিন লাখের উপর গ্রাহক হয়। ২০১০ সালে মার্চে সরকার অপারেশন স্থগিত করে। ২০১১ সালের জুলাই থেকে আবারও অনুমতি পেলে কাজ শুরু করে। অনেকগুলো সেনসেটিভ যন্ত্রপাতি রিপ্লেস, মেরামত ও নতুন করে আমদানি করতে হয়েছে।এখন আর কারিগরী কোনো সমস্যা নেই।