অনাবৃষ্টির কারনে ছিট রোগে আক্রান্ত – বরিশালের পেয়ারা চাষীদের ঘরে এখন বিষাদের ছায়া

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ অনাবৃষ্টি আর প্রখর রোদের কারনে বরিশালের স্বরূপকাঠী উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারা চাষীদের ঘরে এখন বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। গত বছরের তুলনায় এবার এখানকার বাগানে পেয়ারার ফলন খুবই কম হয়েছে। যাও ফলন ধরেছে তাও ছিট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাই ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না পেয়ারা চাষীরা।

অনাবৃষ্টির কারনে ছিট রোগে আক্রান্ত - বরিশালের পেয়ারা চাষীদের ঘরে এখন বিষাদের ছায়াগত বছরের চেয়ে প্রতিমন পেয়ারা এক থেকে দেড়শ টাকা কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। চাষীদের মতে এবার যে ফলন হয়েছে তা দিয়ে খরচ পোষানোই দুরহ হয়ে পড়বে। আটঘর-কুড়িয়ানার ২৬টি গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে পেয়ারা চাষ। বিশাল বাগানে প্রতি মৌসুমে তারা পেয়ারা চাষ করে যে অর্থ উপার্জন করেন তা দিয়েই পুরো বছর সংসারের খরচ মেটানো হয়। এবার একদিকে ফলন কম অপরদিকে পেয়ারার মধ্যে ছিট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় চাষীদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়ে দাড়িয়েছে। আটঘর-কুড়িয়ানার আন্দারকুল গ্রামের পেয়ারা চাষী পরিমল হালদার জানান, এ বছর পেয়ারার মুকুল ওঠার সময়ই প্রখর রোদ ছিলো। পরবর্তীতে অনাবৃষ্টির কারনে ফলন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ওই গ্রামের প্রায় শতভাগ মানুষের প্রধান পেশাই হচ্ছে পেয়ারা চাষ। ওই গ্রামের এমন কোন পরিবার নেই যাদের দুই থেকে চার একর জমিতে পেয়ারার বাগান নেই। বাংলার আপেল বলেখ্যাত পেয়ারা আটঘর-কুড়িয়ানার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল অঞ্চলের স্বরূপকাঠী, বানারীপাড়া ও ঝালকাঠী সদর উপজেলার একটি বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা এই পেয়ারা বাগান যুগ যুগ ধরে সারাদেশে পেয়ারার যোগান দিয়ে আসছে। এখান থেকে পেয়ারা ক্রয় করে ঢাকায় নিয়ে তৈরী করা হয় জেলি। এছাড়াও ফেনি, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এখান থেকে পেয়ারা ক্রয় করে নিয়ে যায়। সূত্রমতে, ভয়াল ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর এ অঞ্চলে ক্রমেই পেয়ারার ফলন কমে আসতে শুরু করে। সিডরের সময় বাগানের গাছ ভেঙ্গে যাওয়ায় ফলনে কিছুটা ভাটা পরে। নতুন রোপিত গাছে পেয়ারার ফলন হলেও তাতে অনাবৃষ্টির কারনে ছিট রোগ দেখা দেয়ায় চাষাবাদ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

পেয়ারা চাষী কঠুরাকাঠী গ্রামের রবিন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, অনাবৃষ্টির কারনে পেয়ারা মৌসুমের শুরুতেই মুকুল ঝরে যাওয়ায় এ বছর শতকরা ৪০ ভাগ ফলন কম হয়েছে। ফলন কম হওয়ার পাশাপাশি ছিট রোগের কারণে পাইকার ও ক্রেতাদের কাছে পেয়ারার কদর কমে গেছে। তিনি আরো জানান, গত বছর প্রতি মন পেয়ারা বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৫’শ টাকা থেকে ৬’শ টাকায়। এবার সেই পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে প্রতি মন ৪’শ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪’শ টাকায়। আটঘর-কুড়িয়ানা এলাকার বাস্তুকাঠী, আদাবাড়ি, খায়েরকাঠী, আদমকাঠি, আন্দারকুল, জিন্তাকাঠি এলাকার প্রতিটি পেয়ারা বাগানে ছিট রোগ দেখা দেয়ায় একের পর এক বাগানের পেয়ারা নষ্ট হয়ে গাছে ঝুলে আছে। ওই পেয়ারা তুলে বাজারে নিলে ক্রেতারা তা ক্রয় করতে চান না। তাই গাছেই রোগাক্রান্ত পেয়ারা ঝুলে রয়েছে। অসংখ্য চাষীরা জানান, প্রতিবছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বাগানে ফুল ফলের সমাহার দেখে চাষী পরিবারের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বয়ে যেতো। গ্রামে গ্রামে কবিগান আর কীর্ত্তনের আয়োজন করে রাতভর গানের অনুষ্ঠান, পেয়ারা বাগান পাহারা দেয়া ও ভাল খাবারের আয়োজন করা হতো। কিন্তু পূর্বের সে সব দৃশ্য এবার আর নেই পেয়ারা চাষীদের মধ্যে। ফাল্গুন মাসে বাগানে প্রচুর পরিমানে মুকুল ধরলেও খাল ও নালায় পানি না থাকায় এবং অনাবৃষ্টির কারনে অধিকাংশ মুকুল ঝরে গেছে।

সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্বরূপকাঠী উপজেলার ৬’শ ৩৪ হেক্টর জমির পেয়ারা বাগানের মধ্যে শুধু কুড়িয়ানায়ই রয়েছে ৫’শ ২২ হেক্টর বাগান। পেয়ারা বাগানের সংখ্যা ২ হাজার ৫টি, পেয়ারা চাষী পরিবার ১ হাজার ২’শ ৩৪টি। প্রতি হেক্টরে বছরে প্রায় ৯ মেট্টিক টন পেয়ারার ফলন হয়। চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারনে পেয়ারা বাগানে ছিট রোগ দেখা দেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ কফিল উদ্দিন বলেন, নতুন এ রোগ থেকে পরিত্রান পেতে ইতোমধ্যে চাষীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরামর্শ মেনে চাষাবাদ করলে আগামি মৌসুমে পেয়ারার বাম্পার ফলন ফলানো সম্ভব হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।