ঝালকাঠি আ’লীগ ও বিএনপি’র দলীয় দ্বন্ধ আর কলহে তৃনমূল রাজনীতিতে হতাশার ছায়া

আহমেদ আবু জাফর, ঝালকাঠি ॥ ঝালকাঠির রাজনীতিতে দ্বন্ধ, আত্মকলহ, ক্ষমতার মোহ, গ্রুপিং পাল্টা গ্রুপিংয়ের মধ্য দিয়ে চলছে এখানকার বড় দু’দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড। রাজনৈতিক চর্চ্চা না থাকার কারনে একে অপরকে মেনে নিতে পারছেনা। সংগঠন এখন চলে গেছে ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের হাতে। যে যেভাবে পারে সিনিয়র নেতাদের সাথে হাত মিলিয়ে সংগঠনের ভাবমূর্তির কোন তোয়াক্কা না করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছেন। তাই ঝিমিয়ে পড়েছে এখানকার সংগঠন দু’টির তৃনমূল নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে সরকার দলীয় সংগঠন আওয়ামী BNPরাজনীতিতে বেড়েছে না পাওয়ার ক্ষোভ।

নেতাকর্মীরা হতাশার সূরে বলেছেন- আন্দোলন সংগ্রাম বিএনপির মামলা-হামলায় যারা ঘর ছাড়া ছিল তারা আজ ক্ষমতার ভাগ থেকেও বঞ্চিত। ধীরে ধীরে ত্যাগী নেতাকর্মীরা সংগঠনের কর্মকান্ড থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক যুবলীগ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জেলার নেতাদের পাশে উঠতি ঠিকাদার, ব্যবসায়ী, আতœীয়-স্বজনের মটর সাইকেলের ঝনঝনানিতে নেতাদের আশপাশেও বেড়া যাচ্ছেনা।

অভিযোগের সূরে বলেন- হায়রে আওয়ামী লীগ! আজ নেতাকর্মীরা পাত্তা পাচ্ছেনা। ক্ষমতার মোহে নেতারা দ্বিগবিদিক ভাবে হাটছেন। ত্যাগী কর্মীদের কোন খোঁজ খবর নিচ্ছেন না। নেশাখোর, নেশা বিক্রেতা এবং অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িতরা কিছু প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় নিয়মিত  আসতে শুরু করে। প্রভাবশালী ঐ নেতারা তাদেরকে দলীয় কর্মী মনে করে আর্থিক সহযোগিতা করে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করায় হতাশায় ভূগছে ত্যাগী কর্মীরা। আগামীতে ঐ নেশাখোর, নেশা বিক্রেতা অবৈধ কর্মকান্ডে যারা জড়িত এবং লুটেরারা দলকে সংঘঠিত করবে। ত্যাগী নেতাকর্মীদের আর প্রয়োজন নেই। আ’লীগসহ সহযোগি সংগঠন সমুহের কেন্দ্রীয় কমিটি তৃনমূল পর্যায় থেকে সংগঠনের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলে দ্ধন্ধ বাঁেধ নেতাদের মাঝে। যার ফলে আ’লীগ ও তার সহযোগি সংগঠন সমুহের মেয়াদ পেরিয়ে যুগপূর্তি হলেও নতুন কমিটির মুখ দেখা যাচ্ছেনা। ফলে মুখ থুবরে পড়েছে সংগঠনটির রাজনৈতিক কর্মকান্ড।

জেলা আ’লীগের রাজনীতি এখন দ্বি-খন্ডিত হয়ে পড়েছে। একদিকে দেশের প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা আমির হোসেন আমু ও তার এক সময়কার শিষ্য জেলা আ’লীগ সাধারন সম্পাদক এ্যাড. খান সাইফুল্লাহ পনিরের মধ্যে বছর দু’য়েক আগে রাজনৈতিক দ্বন্ধ সৃষ্টি হয়। সেই দ্বন্ধের কোন্দল এখন আ’লীগসহ সহযোগি সংগঠনের তৃনমূল পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। তারই বাস্তবতা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কমিটি গঠনের পর প্রকাশ্যে রুপ নেয় গ্র“পিংয়ের। এমপি আমির হোসেন আমুর হস্তক্ষেপে এ দুটি সংগঠনের কমিটি গঠন হওয়ায় জেলা আ’লীগ সাধারন সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির ও পৌর মেয়র আফজাল হোসেন রানার সমর্থকরা স্থান না পাওয়ায় তারা পাল্টা কমিটি ঘোষনা করে। এতে প্রকাশ্য দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ে আমু ও পনির সমর্থক নেতাকর্মীরা। দফায় দফায় হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হন দু’যুবলীগ নেতা।

এদিকে শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগের কমিটি গঠন না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ সংগঠন গুলোয় দ্রুত কমিটি গঠনের কাজ চলছে বলে জানাগেছে। ইতিমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা আ’লীগ সাধারন সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির।

এভাবে দ্বন্ধ চলতে থাকলে আগামী সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের ভরাডুবির সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলের এক নেতা জানায়।

Awamiligঅপরদিকে বিএনপির মধ্যে রয়েছে ত্রিমূখী লড়াই। সংগঠনের মূল কার্যক্রম পরিচালনা করার ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ী মিঞা আহমেদ কিবরিয়া। জেলা বিএনপির সভাপতি ব্যারিষ্টার এম শাহজাহান ওমর বীরোত্তম জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় এলাকার সাংগঠনিক কার্যক্রম সহ-সভাপতি কিবরিয়া ও সাধারন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর পরিচালনা করছেন। তৃনমূল পর্যায়ে তারা দলের কার্যক্রম পরিচালনা করে দলটিকে সুসংগঠিত করে চলছে। জেলার রাজনীতিতে সকল অঙ্গসংগঠন সমুহের নেতাকর্মীরা কিবরিয়ার নেতৃত্বকে মেনে দলীয় কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যেই প্রতিটি ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সংগঠনের গতি ফিরে আসছে।  তাতে ঈম্বান্বিত হয়ে অপর প্রতিপক্ষ ডা. টি আহমেদ ঘরোয়া রাজনীতি শুরু করছেন। কেন্দ্র ঘোষিত রাজনৈতিক কর্মসূচীতে কিবরিয়া অংশ গ্রহন করলে ডা. টি আহমেদ গ্র“প আ’লীগের সাথে আঁতাত করে কর্মসূচী পন্ড করার চেষ্টা চালায়।

এদিকে সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ইসরাত সুলতানা ইলেন ভূট্টো পর্দার আড়ালে থেকে ওয়ান ইলেভেনের সময় এলাকা থেকে বিতাড়িত নেতাকর্মীদের নিয়ে শহরের একটি মুরগীর খাবারের দোকানে সাইন বোর্ড টানিয়ে  আবারো রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চাচ্ছেন। মাইনাস টু ফমূলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ত্যাগী নেতাকর্মীরা ও তৃনমূল পর্যায়ের অঙ্গসংগঠনের কোন কমিটিই তাকে মেনে নিতে পারছেনা। তাদের মতে দলের চেয়ারপার্সনকে যিনি মাইনাস করার ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল তাকে ঝালকাঠি বিএনপির রাজনীতি থেকে মাইনাস করার সময় এসেছে। গ্রাম পর্যায়ের সংগঠনের নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্ধে ভূগছে তিনটি জেলা কার্যালয়ের সাইনবোর্ড থাকলে আমরা কোন দিকে অগ্রসর হবো। দলের এই সংকটময় মূহুর্তে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত সভাপতি শাহজাহান ওমর নেতৃত্বাধীন জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মিঞা আহমেদ কিবরিয়া দলের হাল ধরলে তার পেঁছনে হাটা বাঞ্চনীয় বলে মনে করেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। দলের সুসময়ে যারা লুটপাট করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এখন দলের বিপর্যয়ের সময় তাদেরকে পাওয়া যাচ্ছেনা। নেতাকর্মীরা এদেরকে মৌসুমী নেতা আখ্যা দিয়ে বলেন- এদেরকে এখনই প্রতিহত করতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলে তাদের পদচারনায় ত্যাগী কর্মীরা টিকে থাকতে পারবেনা।