তিন নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে হুমকির মুখে বরিশাল বিমানবন্দর ও দোয়ারিকা সেতু

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ রাক্ষুসী আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা ও সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত এবং ভয়াবহ ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পড়েছে বরিশাল বিমান বন্দর ও দোয়ারিকা সেতুসহ বাবুগঞ্জ উপজেলার নদীর তীরবর্তী এলাকার সহস্রাধীক পরিবার। ওইসব পরিবারের সদস্যদের এখন চরম আতংকে দিন-রাত অতিবাহিত করতে হচ্ছে। রাক্ষুসী এ তিন নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে গত কয়েক বছরে নিঃস্ব হয়েছেন এ উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী, এমপি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শনে এসে শুধু সাধারন মানুষদের কাছে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু এ আশ্বাস শুধু মুখেই থেকে যায় বাস্তবে এর কিছুই হচ্ছেনা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাবুগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা ও সন্ধ্যা নদীর ভাঙ্গনের ফলে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নই নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হচ্ছে। বিগত ৮০ দশক থেকে নদী ভাঙ্গনের ফলে উপজেলার মানচিত্র ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের রফিয়াদী, কুমারিয়ার পিট, কোলচর, নমরহাট, রহমতপুর ইউনিয়নের, মীরগঞ্জ বাজার, লোহালিয়া, রাজগুরু, নুতনচর রাজগুরু, ক্ষুদ্রকাঠী, মানিককাঠী, দোয়ারিকা, বাহেরচর, ঘোষকাঠী, রাকুদিয়া, রাহুতকাঠী, ছানি কেদারপুর, কেদারপুর, মোল্লারহাট, ভাঙ্গার মুখ, লাশঘাটা, রহিমগঞ্জ এলাকার হাজার-হাজার মানুষ নদী ভাঙ্গনের ফলে গৃহহীন হয়ে পরেছে। অনেকেই ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেকে আবার সড়কের পাশে পলিথিনের চালা দিয়ে খুঁপরি ঘর বানিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। একইসাথে বসতবাড়ির পাশাপাশি কয়েক হাজার আবাদি জমি, গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে গেছে কয়েক হাজার পরিবার। রাক্ষুসি তিনটি নদী শুধু ঘরবাড়ি কেড়ে নিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, কেড়ে নিয়েছে এ উপজেলার কয়েক শতাধিক মানুষের প্রান।

বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সরদার খালিদ হাসান স্বপন জানান, রাক্ষুসি নদীগুলোর তান্ডবে মীরগঞ্জ বাজার, ফেরী ঘাট, বরিশাল বিমান বন্দর, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (দোয়ারিকা) সেতু, আবুল কালাম ডিগ্রী কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন স্মৃতি যাদুঘর ও পাঠাগার এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে। যেকোন মুহুর্তে এসব সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাগুলো রাক্ষুসি নদী গর্ভে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, ২০১১ সনে বর্তমান সরকারের পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মাহাবুবুল হক তালুকদার স্প্রীড বোর্ডযোগে সুগন্ধা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। ওইসময় তিনি জরুরি ভিত্তিতে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যবস্তা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আশ্বাসের বানী আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। চলতি বছর তিনটি নদীর ভাঙ্গনের তীব্রতা বিগত বছরের তুলনায় অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এরইমধ্যে গত ৬ জুলাই ভোরে আকস্মিক ভাবে আড়িয়াল খাঁ নদীর মীরগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকার চারটি বসতঘর নদী গর্ভে বিলিনসহ আনোয়ার হোসেন নামের এক যুবকের মৃত্যুতে নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার সাধারন মানুষের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে। ফলে বর্তমানে তাদের দিন-রাত কাটছে নির্ঘুম ও চরম আতংকে। নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার লোকজনেরা ইতোমধ্যে বসত বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।