ভরা ইলিশ মৌসুমেও ইলিশের জন্য জেলেদের হাহাকার!

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ ভরা ইলিশ মৌসুমে মেঘনা-তেঁতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগরে চলছে ইলিশের জন্য জেলেদের হাহাকার। কোথাও ইলিশের দেখা মিলছে না। বর্ষার আশায় মৌসুমের প্রায় দু’মাস কেটে গেছে। আশাছিল বর্ষা আসলে ইলিশের দেখা মিলবে। কিন্তু গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণে জেলেদের সে আশা নিরাশায় রূপ নিয়েছে। মেঘনা-তেঁতুলিয়ার মতই দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশঘাটগুলোতে ব্যবসায়ীদের মাঝে শুধুই হাহাকার। কোথাও ইলিশের দেখা মিলছে না। ফলে গত ১০ জুলাই ইলিশ ধরার জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা ইলিশের জন্য বিশেষ দোয়া-মোনাজাত করেছেন। বরিশালের পোর্টরোড মাছঘাট, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, চরকুকরি-মুকরি, চর পাতিলা, আটকপাট ও তজুমদ্দিনের শশীগঞ্জসহ বিভিন্ন মাছ ঘাটে খবর নিয়ে জানা গেছে সর্বত্রই চলছে ইলিশ সংকট।

জেলেরা জানায়, গত জুন মাস থেকে তারা জাল-নৌকা-ট্রলার নিয়ে নদীতে নেমেছে। জুন মাস শেষে জুলাই মাসের ১২ দিন কেটে গেলেও কোথাও ইলিশের দেখা মিলছে না। জুন মাসের শেষদিকে বৃষ্টির সাথে পূর্নিমার জোতে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও এবারের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। নদীতে ইলিশ না থাকায় জেলেদের মনে উৎসবের আমেজ নেই। শূন্য হাতে সাগর থেকে ফেরা জেলেরা জানায়, দিন-রাত সমানতালে জাল ফেলে তারা সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ হালি ইলিশ পাচ্ছেন। ঢালচর ও চরপাতিলার দু’টি মৎস্য ঘাটি থেকে প্রত্যেক মৌসুমে শত শত ট্রলার ছেড়ে যায় সাগরে ইলিশ শিকারের জন্য। পাশাপাশি হিজলা, মেহেন্দিঞ্জ ও ভোলার মেঘনায়ও চলে মাছ ধরার মহাউৎসব। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পাইকার মহাজনরা ইলিশ ক্রয় করতে ছুটে আসেন এসব মোকামে। এবার ইলিশ ধরা না পড়ায় মোকামগুলোতে পাইকারদের দেখা মিলছে না।

চরপাতিলার মৎস্য আড়তদার হাসেম আলী মহাজন জানান, চলতি ইলিশ মৌসুমের জন্য তিনি ২০ লক্ষ টাকা জেলেদের দাদন দিয়েছেন। ধারনা ছিল বর্ষা আসার পরে কিছু ইলিশ ধরা পড়বে। কিন্তু তার সে আশা এখনো পূরন হয়নি। ইতোমধ্যে যেসব জেলেরা সাগর থেকে ফিরে এসেছেন তারা বলতে গেলে একেবারে শুন্য হাতেই এসেছেন। ১৫/২০ জনের জেলেদের দল ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরের এ মাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত ঘুরে বেড়িয়েও ২/৩ হালির বেশি ইলিশ নিয়ে আসতে পারেনি। ভরা মৌসুমেও ইলিশ ধরা না পড়ায় মহাজন পাইকার থেকে শুরু করে জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে চলছে হাহাকার। মৌসুমের শুরুতে যে সামান্য পরিমানে ইলিশ ধরা পড়ছে তা দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করাও সম্ভব হচ্ছে না।

বরিশালের হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ও ভোলার চরফ্যাশন, তজুমদ্দিন, পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও গলাচিপাসহ যেসব উপজেলার মানুষ প্রতিবছর এই সময়ে পানির দামে ইলিশ ক্রয় করেন তারাও এখন একটি ইলিশ চোখেও দেখতে পান না। মূল মৎস্য ঘাটিগুলোতেই ইলিশ এখন দুষ্পাপ্য হয়ে উঠছে। তবে আড়ৎদার ও জেলেরা জানিয়েছেন, চলতি মাসের শেষের দিকে ইলিশের দেখা মিলতে পারে।