পূণর্জন্ম হোক বাকশালের-ওয়াচডগ

 

আমাদের মত দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র কাজ করেনা, করতে পারে না। পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র আমাদের উপহার দিয়েছে পারিবারিক স্বৈরতন্ত্র যা না গণতন্ত্র না সমাজতন্ত্র। দু সপ্তাহ হয়নি সরকার দুটা টিভি ষ্টেশন বন্ধ করেছে, আজ বন্ধ করল ’আমার দেশ’ নামক একটা দৈনিক। দেশের প্রচার মাধ্যমগুলো কোন ভ্রূণে জন্ম হয় তা সবারই জানা। ’আমার দেশ’ তেমনই একটা মাধ্যম, যার জন্ম হয়েছিল দুর্নীতির ভরা যৌবনে। দলীয় ক্ষমতার বাস্টার্ডস সন্তান আমাদের টিভি, রেডিও ও পত্রিকা সমূহ, এমনটা বললে খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবেনা নিশ্চয়। নেত্রী ও দলীয় স্তুতি-বন্দনার মাধ্যমে ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতিবিদরা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে আবর্জনার মত জন্ম দিচ্ছে্ন টিভি ও পত্রিকার মত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। ’আমার দেশ’ পত্রিকা ক্ষমতাহীন দলের পত্রিকা, এবং তা সত্য মিথ্যায় সরকারের সমালোচনা করে যাচ্ছে দিনরাত। কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেলে সরকারকে এ পথে নামতে হয়? তাহলে আমরা কি ধরে নেব সরকার বাকশালের পথে এগুচ্ছে? যদি তাই হয় তাহলে সরকারকে তা খোলামেলা করতে হবে। ’আমার দেশ’ পত্রিকা বন্ধ করে সরকার যদি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে গুনগত পরিবর্তন আনতে পারেন তাহলে প্রকাশ করা হোক সে চাহিদার বিবরণ। মাহমুদুর রহমান একজন মিথ্যুক, দুর্নীতিবাজ ও ক্ষতিকর এলিমেন্ট, মানতে বাধা নেই। কিন্তু কার জন্যে ক্ষতিকর, জাতির না ক্ষমতাসীন দলের? তা হলে মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে আমরা কি হিসাবে নেব? এই কি সেই আমলা নন যিনি চাকরী অবস্থায় জনতার মঞ্চ বানিয়ে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার রসদ যুগিয়েছিলেন? তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ায়, দুই দল স্বার্থবাজ নিজেদের স্বার্থ নিয়ে মারামারি করছে আর আমাদের সামনে ঝুলানো হচ্ছে গনতন্ত্রের মূলা!

নাচতে নেমে ঘোমটা দিয়ে লাভ কি, নেংটি দিয়ে ভাল করে নাচলেই বোধহয় ভাল ফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বাকশাল কায়েম-ই যদি সরকারের আসল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, আলো দেখুক সে উদ্দেশ্য। আমরা স্বৈরশাসন দেখেছি, মিলিটারি শাসন দেখেছি, দেশনেত্রী আর জননেত্রীর শাসন আমাদের জন্যে ডালভাত। এ বিচারে বাকশাল জন্ম নিয়েও আলোর মুখ দেখেনি। ক্ষতি কি এমন শিশু নতুন করে জন্ম নিলে?


Writer : WatchDog.AmarBlog.com


বাকশাল সম্পর্কে আরও :

 


আসুন বাকশাল গঠন করি,বর্তমান বাস্তবতায় যা সম্ভব-হামীম

জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু ছিলেন সূদুর প্রসারী পরিকল্পনাবিদ। তিনি এই পদ্ধতি আবিস্কার করে বাস্তবায়ন শুরু করার পর বাংলাদেশের তখনকার সচেতন জনগণ এই বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেধে ছিল।

বাকশাল কেন প্রয়োজন , এখনতো বঙ্গবন্ধু নেই। কিন্তু বাকশাল কেন প্রয়োজন।

আপনার জানেন যে, চুরের ও সিন্ডিকেট আছে। তারা ও ঐক্যবদ্ধ।যারা দূর্নিতি করে সমাজের আমলা তারাও ঐক্যবদ্ধ। শুধু ঐক্য নেই রাজনীতিবিদের।

বাকশালের একটা উত্তম স্থান ছিল জাতীয় সংসদ। কিন্তু কেউ কেউ বাকশাল কার্যকর হয়ে যাবে এই জন্যে সংসদে যান না।
তখন ছিল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ। সংক্ষেপে বাকশাল।
তার বাস্তবতা এবং উপকারীতা প্রথিবীর অনেক দেশে বাকশাল টাইপে তখন সরকার পরিচালনা হতো। ইরাক কিউবা গণচীন তার উদাহরন।
বঙ্গবন্ধু বাকশালকে সাময়িক ঘোষনা করার পর ও কুচক্রি মহল একে পুজি করে আওয়ামীলীগকে অনেক দিন ক্ষমতার বাহিরে রাখতে পেরেছে।
তার সাথে ঘুরে ফিরে এসেছে ভারত যুজু, তালপট্রি, সীমান্ত বাণিজ্য,অভিন্ন নদী, এবং ফারাক্কা বাঁধ। এই সমস্যার সমাধান বিগত কোন সরকার করতে পারেনি জাতীয় ঐক্যের অভাবের কারনে। জাতীয় ঐক্য থাকলে ভারত জুযু কেন আমেরিকা জুযু্ও কাজে আসবে না।

বঙ্গবন্ধু সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তখন জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনিয়তা নিয়ে মানূষ এত জটিল ভাবে ভাবেনি।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিংশ শতাব্দির মানূষ। তিনি অগ্রিম ৫০ বছর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ দেখতে পেরেছিলেন। আপনি বঙ্গবন্ধুর স্থানে হলে হয়তো ১০০বছর দেখতে পেতেন।

মানূষ কে অবিশ্বাস জন্মানোর কুচক্রি মহলটি সফলকাম হয়।

বাকশাল এখন বাস্তবতা। হয়তো আমাদের দু-নেত্রী একহতে পারবেন কিনা জানিনা। তারা ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছেন।
হয়তো বাকশালের মতো এক আওয়ামীলীগ অথবা এক বিএনপি মানূষ সময় হলে বেছে নিবে। এবং ইতিহাসের প্রয়োজনে একটি দলকে বাকশাল কায়েমের জন্যে বেছে নিবে , অন্যদলকে ইতিহাসের আস্থাকূড়ে ফেলে দিবে।


প্রসঙ্গ : আমার দেশ- আবেদ খান

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপটি আমার কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি এ কারণে যে সেখানে যে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক-কর্মচারী কর্মরত, তাঁরা বর্তমান পরিস্থিতিতে ভীষণ অনিশ্চয়তার আবর্তে নিক্ষিপ্ত হলেন। সাংবাদিক-কর্মচারীর সংখ্যা যদি ৭০০ হয়, তাহলে কমপক্ষে সাড়ে চার হাজার মানুষের রুটি-রুজির সংস্থান বিপর্যয়ের মুখে পড়ে গেল। ক্ষতিগ্রস্ত হলেন এজেন্ট এবং হকাররাও।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিকের সম্পাদকরা একটি যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন। স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে আমি আমার সংশ্লিষ্টতা প্রত্যাহার করেছি একটি বিশেষ কারণে এবং সে কারণটি এখানে ব্যক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করি।

যুক্ত বিবৃতির খসড়া নিয়ে স্নেহভাজন কবি-সাংবাদিক হাসান হাফিজ যখন তাঁর দুই সহকর্মী নিয়ে আমার অফিসে আসেন, তখন তাঁদের কাছে খসড়ার বিষয়বস্তু জানতে চাই। তাঁরা খসড়াটি পাঠ করার পর আমি তাঁদের বলি যে এ ব্যাপারে আমার সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আছে, যা এ ক্ষেত্রে সংযোজিত হওয়া প্রয়োজন। আমি আমার বক্তব্যে বলি_এক. সংবাদপত্রের মালিকানা হস্তান্তর কিংবা প্রকাশক পরিবর্তনবিষয়ক জটিলতা সম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষীয় ও সরকারের ভেতরকার বিষয়। আইনগত কোনো ব্যত্যয় থাকলে তা আইনের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি করা উচিত এবং এ জন্য প্রকাশনা বন্ধ করার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। কারণ এ শিল্পের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীর জীবিকা জড়িত; এবং দুই. প্রকাশনাগত কোনো ব্যত্যয় থাকলে বিষয়টি সরকার প্রেস কাউন্সিলে উপস্থাপন করতে পারত। এতে প্রেস কাউন্সিল গুরুত্ব লাভ করত। সরকার অন্তত প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে একে অধিকতর দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারত এবং পাশাপাশি সাংবাদিক-মালিকদের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে নিজস্ব বক্তব্য দিতে পারতেন।

আমার এই যুক্তি যদি যুক্ত বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে আমি তাতে স্বাক্ষর প্রদান করব। তাঁরা আমার মন্তব্য লিখে নেন এবং আমাকে জানান যে তাঁরা অবশ্যই এ বিষয়গুলো যুক্ত বিবৃতির অন্তর্ভুক্ত করবেন। আমি এ কথাও বলি যে এ ক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে আমি লিখিতভাবে আমার স্বাক্ষর প্রত্যাহার করব এবং এ নিয়ে আমি নিজেই নিজের মতো করে লিখব। রাতে সংবাদপত্রে প্রেরিত যুক্ত বিবৃতির বক্তব্য পূর্ণাঙ্গ পাঠ করার পর আমি দেখতে পাই যে সাংবাদিক-কর্মচারীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়টি গৌণ হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে যা বলেছি, সেটাই আমাকে করতে হয়েছে। অর্থাৎ আমাকে বিবৃতি প্রত্যাহার করতে হয়েছে।

আমি সেই পাকিস্তান আমল থেকেই সাংবাদিক ইউনিয়ন করা লোক। সাংবাদিক-কর্মচারীদের স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েই আমি আমার পেশায় অবস্থান করছি এবং অতীতেও করেছি। মালিকানার দ্বন্দ্ব প্রকাশনা শিল্পে যে কী ভয়াবহ অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে এবং সাংবাদিক-কর্মচারীদের মধ্যে যে কী মর্মান্তিক বিভাজন সৃষ্টি করে, তা আমরা সেই পাকিস্তান আমল থেকেই প্রত্যক্ষ করে আসছি। বাংলাদেশ সৃষ্টির পরও এ রকম দৃষ্টান্ত রয়েছে। এর ফলে পেশা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সাংবাদিকদেরও কারো কারো মধ্যে একধরনের সুবিধাবাদী প্রবণতার সৃষ্টি হয়। আমার শঙ্কা ঠিক এ জায়গায়ই। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে আমি সব সময় চাই সাংবাদিকরা যেন কখনো দলীয় বা ব্যক্তিস্বার্থ দ্বারা পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত না হন। যে জন্য আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা সরকার বন্ধ করার পর আমরা আমাদের সম্পাদকীয় স্তম্ভে অত্যন্ত কঠোরভাবে এ পদক্ষেপের সমালোচনা করেছি।

এ প্রসঙ্গে এখানে একটি পুরনো কথার অবতারণা প্রয়োজন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে অত্যন্ত জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশন অবৈধতার প্রশ্ন তুলে বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুজন প্রবীণ সাংবাদিক একুশে টেলিভিশন বন্ধের দাবিতে আদালতে মামলা করেছিলেন। তাঁদের একজন তাঁর মালিকানাধীন সাপ্তাহিকীতে অন্তত তিন-তিনবার এই বন্ধের পক্ষে কঠোর বক্তব্য দিয়েছিলেন। আমি সে সময় ফ্রিল্যান্স কলাম লেখক হিসেবে বিনীতভাবে লিখেছিলাম, যে শিশু সবল ও প্রাণবন্ত হয়ে জ্যোতি ছড়াচ্ছে, সেই শিশুকে তার জন্মের বৈধতার প্রশ্ন তুলে নিষ্ঠুরভাবে বধ করাটা শিশু হত্যার সমতুল্য অপরাধ। আমার সে সময়কার ওই মন্তব্যে যাঁরা নানাবিধ ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেছিলেন, তাঁদেরও কেউ কেউ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বন্ধের যুক্ত বিবৃতিতে স্বাক্ষর দিয়েছেন। পঁচাত্তর সালে চারটি পত্রিকা রেখে অন্য সব পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের পরও যাঁরা সানন্দ চিত্তে বাকশালে স্বাক্ষর করেছিলেন, তাঁদেরও দেখলাম পরবর্তী সময়ে কালো দিবস পালন করতে। তাঁদেরও কেউ কেউ আমার দেশ পত্রিকা বন্ধের প্রতিবাদে স্বাক্ষর প্রদান করেছেন দেখলাম।

সাংবাদিক-কর্মচারীদের স্বার্থের প্রশ্নে আমার অবস্থান অতীতেও যেমন অস্বচ্ছ ছিল না, এখনো তেমন অস্বচ্ছ নয়। আমি চাই, আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত থাকুক, মালিকানার জটিলতা কিংবা প্রকাশকবিষয়ক দ্বন্দ্বে সাংবাদিক-কর্মচারীরা জড়িত না হোক।
সাংবাদিকরা তো পারেই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে প্রকাশনা চালিয়ে যেতে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে কেন প্রকাশনা বন্ধে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে?

আরেকটি বিষয়ে সরকারের উচিত বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া। তা হচ্ছে প্রেস কাউন্সিল। এই প্রেস কাউন্সিল যদি শক্তিশালী হয়, সংবাদপত্র শিল্পের বিকাশের জন্য কাউন্সিলকে যদি প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং নির্বাচিত সংসদের কাছে যদি এর জবাবদিহিতা ন্যস্ত থাকে, তাহলে সংবাদপত্র কিংবা মিডিয়া জগতে এত বিশৃঙ্খলা, স্বেচ্ছাচারিতা কিংবা অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ থাকে না। মামলা-মোকদ্দমা, সাংবাদিক হয়রানি_এমন অনেক কিছুরই ফয়সালা করতে পারে প্রেস কাউন্সিল। মূল কথাটি হলো, সমাধানের পথ যেখানে আছে, সেখানে কেন এমন পথ বেছে নিতে হবে, যা কখনো সুফল আনে না?
(সূত্র, কালের কন্ঠ, ০৭/০৬/১০)

 


 

আমার দেশ-এর টার্নিং পয়েন্টঃ প্রকাশনা নিষিদ্ধ- শফিক রেহমান

কিছু কাল জুড়ে শোনা যাচ্ছিল বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মসূচিতে বিদুøৎ-গ্যাস এবং পানি নয়­ যে দুটি বিষয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে তা হলো, এক. ক্যান্টনমেন্টে যে বাড়িতে সাড়ে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ম্যাডাম খালেদা জিয়া বসবাস করছেন, সেখান থেকে তাকে উৎখাত করা এবং দুই. দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও লেখক মাহমুদুর রহমানকে জেলে নেয়া।
চলমান বিদুøৎ-গ্যাস ও পানি সংকটের চাইতেও আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে গভীরতর সংকট হয়েছে খালেদা জিয়ার বাসস্থান এবং মাহমুদুর রহমানের দৈনিক পত্রিকা, এমনটা অনেকেই বিশ্বাস করছিলেন না। একটি বাড়ি এবং একটি পত্রিকা আওয়ামী লীগ সরকারকে এমনই দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে যে, তারা বিদুøৎ-গ্যাস ও পানির অভাব, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, কর্মসংস্থানের নিুগতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মোকাবিলার বদলে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে শুধু ওই দুটি বিষয় সর্বাগ্রে মোকাবিলার জন্য? এটা বিশ্বাস করতে অনেকের কষ্ট হলেও গত সপ্তাহে মাহমুদুর রহমানকে সত্যিই জেলবন্দী করা, দৈনিক আমার দেশ-এর প্রেস গালাসিল করে দেয়া এবং আমার দেশ পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে। এ সবই ঘটেছে মঙ্গলবার ১ জুন ২০১০-এর বিকেল পাচটা থেকে পরবর্তী ১১ ঘণ্টার মধ্যে।

ওই দিন দুপুর থেকেই মোবাইল ফোন ও এসএমএস-এর রিং টোনের সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছিল একটি সংবাদঃ আজ মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার হবেন ও আমার দেশ বন্ধ হয়ে যাবে।
কেউ যদি জানতে চান এই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার খবরটির ভিত্তিটা কি, তাহলে উত্তর আসে আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশক ও মুদ্রাকর মোহাম্মদ হাসমত আলীকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আটকে রেখেছে তাদের অফিসে। তখনই আমার মনে পড়ে গেল ১৯৮৫ এবং ১৯৮৬-তে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন নিষিদ্ধ ঘোষিত হবার পূর্ব সময়গুলো। তফাৎ এই যে, তখন বাংলাদেশে মোবাইল ফোন যুগ ছিল না। ফলে খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই জানতেন সরকার কিভাবে দমনপীড়ন কাজগুলো করবে। সুদীর্ঘ পচিশ বছর পরে আবার সেই প্রক্রিয়াটি কিভাবে সম্পন্ন হতে চলেছে সেটা জানার জন্য বিকেল চারটার সময়ে আমি চলে যাই কাওরানবাজারে এয়ারপোর্ট রোডের ইস্পাত ভবনের এগারো তলায় আমার দেশ-এর সম্পাদকের অফিসে।

মাহমুদুর রহমানের সাথে একাত্মতা প্রকাশের জন্য কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মাহমুদুর রহমান তাদের বলেন, তিনি খবর পেয়েছেন হাসমত আলীকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে কয়েক ঘণ্টা আটক রাখার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে ছেড়ে দেয়ার আগে দুটি শাদা কাগজে হাসমত আলীকে সই দিতে হয়েছে।

সাবেক এমপি মোসাদ্দেক আলী ফালুর ভাই আলহাজ্ব মোহাম্মদ হাসমত আলী আমার দেশ পত্রিকার সূচনালগ্ন থেকে প্রকাশক ও মুদ্রাকরের দায়িত্ব পালন করছিলেন। যেসব পাঠক পত্রিকা প্রকাশের আইনগত মারপ্যাচ জানেন না, তাদের এখানে জানিয়ে রাখছি, একটি পত্রিকার টাইটেল বা নামের মালিক হন পত্রিকাটির প্রকাশক ও মুদ্রাকর। এ জন্য প্রকাশের আগে স্থানীয় ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার (ডিসি)-এর মাধ্যমে তাকে আবেদন করতে হয় সরকারের কাছে যে, তিনি একটি পত্রিকা প্রকাশে ইচ্ছুক। এরপর সেই ব্যক্তির বিভিন্ন যোগ্যতা সম্পর্কে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) তাদের তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করে এবং তাদের রিপোর্ট ডিসি অফিসে পেশ করে। ওই রিপোর্ট যদি ভালো হয় অর্থাৎ সরকারের মনোঃপূত হয় তাহলে নির্ধারিত দিনে আবেদনকারীকে সশরীরে উপস্থিত হতে হয় ডিসি অফিসে। সেখানে ডিসির সামনে তাকে ফর্ম-বি নামে একটি ঘোষণাপত্রে সই করতে হয়। এই ঘোষণাপত্রে লেখা থাকেঃ
আমি, এই মর্মে আরও ঘোষণা করিতেছি যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অথবা বাংলাদেশ সরকারের স্বার্থের প্রতিকূলে এমন কোন অপরাধজনক বা আপত্তিকর বিষয় আমার উপরোক্ত পত্রিকায় মুদ্রণ বা প্রকাশে বিরত থাকিব এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ডিক্লারেশন ও রেজিস্ট্রেশন) আইনের নিয়মাবলী মানিয়া চলিতে বাধ্য থাকিব।
এটিকেই বলা হয় ডিক্লারেশন। এই ডিক্লারেশনের পর থেকে আবেদনকারী পত্রিকাটির নামের একক মালিক বা সোল প্রোপ্রাইটর হয়ে যান­ তিনি পত্রিকাটি প্রকাশ করুন আর নাই করুন। এই মালিকানার কোনো ভাগাভাগি বা অংশীদারিত্ব সম্ভব নয়।
দৈনিক ইত্তেফাক-এর প্রকাশনা সংকট ছিল এখানেই। দুই ভাইয়ের প্রচণ্ড বিরোধ মীমাংসার লক্ষ্যে ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠানটির সকল সম্পদ ভাগাভাগি করা গেলেও ইত্তেফাক নাম, যা টাইটেল বা ডিক্লারেশনের ভাগাভাগি সম্ভব ছিল না। তাই সম্প্রতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দশ কোটি টাকার বিনিময়ে তার বড় ভাই মইনুল হোসেনের কাছ থেকে ইত্তেফাক টাইটেলটি ফেরত নিয়েছেন এবং তিনিই এখন এককভাবে দৈনিক ইত্তেফাকের মালিক।

প্রকাশক ও মুদ্রাকরের পক্ষে যদি কোনো কারণে সেই দায়িত্ব পালন অসম্ভব হয়ে পড়ে তাহলে প্রায় একই পক্রিয়ায় তাকে আবার ডিসির সামনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আরেকটি ঘোষণাপত্রে (ফরম সি) সই দিয়ে তার অপারগতা জানাতে হয়। যদি পত্রিকাটির প্রকাশনা চলমান থাকে তাহলে একই প্রক্রিয়ায় পত্রিকাটির নতুন প্রকাশক ও মুদ্রাকরকে ফরম বি-তে সই করতে হয় এবং তারপর থেকে তিনিই হন নতুন মালিক।

এখানে পাঠকদের জানিয়ে রাখছি, পত্রিকার প্রকাশক ও মুদ্রাকরই নিয়োগ করেন পত্রিকার সম্পাদককে। তবে তার আগে এসবি-র ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। কোনো কারণে যদি সম্পাদক তার পদ ছেড়ে দেন বা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন, তাহলে তিনি একজন নতুন সম্পাদক, অথবা কোনো নতুন সম্পাদককে পাওয়া সম্ভব না হলে একজন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নিয়োগ করে পত্রিকার প্রকাশনা চলমান রাখতে পারেন মালিক। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক ও মুদ্রাকর নিয়োগ সম্ভব নয়।

আর এখানেই সরকার সমস্যায় ফেলতে চেয়েছে মাহমুদুর রহমানকে। সরকার অভিযোগ করেছে তিনি ডিক্লারেশন সম্পর্কিত আইন মেনে চলেননি এবং তাই আমার দেশ পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে।
আমার দেশ পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রূপে মাহমুদুর রহমানের নাম এবং প্রকাশক ও মুদ্রাকর রূপে আলহাজ্ব মোহাম্মদ হাসমত আলীর নাম ছিল।

মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার, জাপানে সিরামিকসে টেকনিকাল শিক্ষাপ্রাপ্ত মাহমুদুর রহমান মেথডিকাল ব্যক্তি ও সফল ব্যবসায়ী। তিনি সেদিন তার অফিসে আহূত প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে গত প্রায় এক বছরে এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তার চলমান যোগাযোগের কথা জানান এবং প্রমাণস্বরূপ তিনি বিভিন্ন ডকুমেন্টস দেখান। তার এসব ডকুমেন্টস এবং পরবর্তীতে বিবিসিতে প্রচারিত ডিসির ইন্টারভিউ থেকে নিচের টাইমলাইনটি জানা যায়।

ডিক্লারেশন সমস্যার টাইমলাইন
২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৪ঃ দৈনিক আমার দেশ প্রকাশিত।
আগস্ট ২০০৮ঃ মোসাদ্দেক আলী ফালু জেলে বন্দী এবং আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেড গভীর আর্থিক সংকটে নিপতিত। মাহমুদুর রহমান ও তার কিছু পার্টনার এই সংকট মোচন করে প্রকাশনা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেন।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮ঃ আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেড-এর শেয়ার মালিকানা হস্তান্তর সম্পর্কিত দলিল স্বাক্ষরিত হয়।
৬ অক্টোবর ২০০৮ঃ আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের নতুন চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান কার্যভার গ্রহণ করেন।
১৫ মে ২০০৯ঃ আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আতাউস সামাদ পদত্যাগ করেন।
২৬ এপ্রিল ২০০৯ঃ আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেড একটি চিঠি দিয়ে ঢাকার ডিসিকে জানিয়ে দেয় বোর্ড অফ ডিরেকটর্সের সিদ্ধান্ত মোকাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছেন।
১৬ জুন ২০০৯ঃ ডিসির পক্ষে ঢাকার বিশেষ পুলিশ সুপার আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডকে জানান যে, নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের বিষয়ে ডিসির আপত্তি নেই।
৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ঃ মুদ্রণালয়ের নিয়ন্ত্রক ও মুদ্রাকরের নাম বদলের জন্য আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেড আবেদন করে ডিসির কাছে এবং আইনের বিধান অনুযায়ী এই বদলের বিষয়ে আদালতে ঘোষণাপত্র দেয়। একই সঙ্গে পত্রিকার প্রকাশক বদল করে নতুন প্রকাশকরূপে মাহমুদুর রহমানের দায়িত্ব নেয়ার বিষয়টিও ডিসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
১১ অক্টোবর ২০০৯ঃ সাবেক প্রকাশক হাসমত আলী ডিসি অফিসে গিয়ে ফর্ম সি-তে সই করে ঘোষণা দেন যে, তিনি প্রকাশকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।

৪ নভেম্বর ২০০৯ঃ ডিপার্টমেন্ট অফ ফিল্মস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স (ডিএফপি বা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর) প্রকাশক বিষয়ে অনাপত্তিপত্র দেয়। ডিএফপির ডেপুটি ডিরেক্টর মাসুদা খাতুন স্বাক্ষরিত এই পত্রে বলা হয়, ‘আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশক আলহাজ্ব মোহাম্মদ হাসমত আলীর পরিবর্তে জনাব মাহমুদুর রহমানের নাম প্রতিস্থাপন করার অনুমোদন দেয়া যেতে পারে।’
১৫ মার্চ ২০১০ঃ ঢাকার ডিসি একটি চিঠিতে আমার দেশ পাবলিকেশন লিমিটেডের কাছে জানতে চান যে, কেন এখনো দৈনিক আমার দেশের প্রিন্টার্স লাইনে প্রকাশকরূপে হাসমত আলীর নাম ছাপা হচ্ছে? উত্তরে আমার দেশ তাদের চিঠিতে জানায় যে, ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯-এর চিঠিতে ডিসিকে মুদ্রণালয়ের নিয়ন্ত্রক-মুদ্রাকর ও প্রকাশক বদল বিষয়ে জানানো হলেও এখনো এ বিষয়ে আপত্তি বা অনাপত্তি জানানো হয়নি। সুতরাং প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অনুযায়ী বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে এখনো আগের প্রকাশকের নামই প্রিন্টার্স লাইনে ছাপা হচ্ছে। একই সঙ্গে ডিসিকে আমার দেশ পাবলিকেশন লিমিটেড অনুরোধ জানায় খুব দ্রুত তাদের আবেদন নিষ্পত্তি করতে।

১ জুন ২০১০ঃ সকাল নয়টায় জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) সদস্যরা হাসমত আলীর শাহজাহানপুরের বাসা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যান। বেলা দুইটার সময়ে হাসমত আলী দুটি কাগজে সই করার পর পাচ ঘণ্টার বন্দীদশা থেকে মুক্তি পান। হাসমত আলী জানান, এই একটি কাগজ ঢাকার ডিসিকে এবং অপর কাগজটি তেজগাও শিল্পাঞ্চল থানার ওসিকে লেখা। ওই দুটি কাগজে লেখা রয়েছে, ‘তিনি (হাসমত আলী) আমার দেশের প্রকাশক নন। তার নাম ছাপা হওয়ায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক।’
উল্লেখ্য, তেজগাও শিল্পাঞ্চলে আমার দেশ-এর ছাপাখানা অবস্থিত। কিন্তু সংবাদ সংস্থা বিডি নিউজ জানায় এনএসআইয়ের কর্মকর্তাদের কেউ হাসমত আলীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেননি।

এ খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে মাহমুদুর রহমান কাওরানবাজারে অবস্থিত আমার দেশ-এর কার্যালয়ে চলে আসেন এবং অচিরেই গ্রেফতার হতে পারেন আশঙ্কা করে বিকেল পাচটায় সেখানে প্রেস কনফারেন্স ডেকে সরকারি কার্যক্রমকে পৃএম্পট (হড়প-পশহয়) করেন। অর্থাৎ আগেই তিনি তার পক্ষের বক্তব্য প্রকাশ করে দেন। এই প্রেস কনফারেন্সে একটি প্রশ্নের উত্তরে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘সোমবার রাতে (৩১ মে) আমি শুনেছি দশ দিনের মধ্যে আমার দেশ বন্ধ করে আমাকে অ্যারেস্ট করা হবে। কিন্তু আমি একে গুজব বলে এড়িয়ে যাই। কিন্তু আজ দেখছি সেটা গুজব নয়। সে খবরই সত্য হতে যাচ্ছে।’
রাজধানীতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মাহমুদুর রহমানের আসন্ন গ্রেফতারের সংবাদ। আমার দেশ-এর কার্যালয়ে উপস্থিত হতে থাকেন উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মী, আইনজীবী, পেশাজীবী ও সমর্থকবৃন্দ।

রাত এগারোটায় প্রায় ৪০ জন পুলিশের একটি টিম ইস্পাত ভবনে আমার দেশ অফিসের সামনে অবস্থান নেয় এবং জোর করে অফিসে ঢোকার চেষ্টা করে। পুলিশের তেজগাও জোনের ডিসি সেইদিন সন্ধ্যার পর মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলার কপি হাতে নিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার কাছে কোনো গ্রেফতার ওয়ারেন্ট না থাকায় আমার দেশ-এ কর্মরত সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভেতরে ঢুকতে পুলিশকে বাধা দেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা জুড়ে চলে তীব্র বাকবিতণ্ডা এবং মাঝে মধ্যে ধাক্কাধাক্কি। এক পর্যায়ে পুলিশ ভেতরে খাবার ও পানির বোতল নিতে বাধা দেয়। কেটে দেয় অফিসের ডিশ লাইন।

ওদিকে ইস্পাত ভবনের সামনে কয়েক শ আমার দেশ সমর্থক সমবেত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও স্লোগান দিতে শুরু করেন। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়।
রাত সাড়ে তিনটায় তেজগাও জোনের ডিসির নেতৃত্বে দাঙ্গা পুলিশের একটি টিম জোর করে আমার দেশ কার্যালয়ে ঢোকে এবং সাংবাদিক ও কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। রাত চারটায় পুলিশ মাহমুদুর রহমানকে গোয়েন্দা পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়।

ওদিকে তেজগাও শিল্পাঞ্চলে আমার দেশ-এর প্রেসে পুলিশ হানা দেয়। সেই মুহূর্তে আমার দেশ-এর ২ জুন ২০১০ সংখ্যার কয়েক হাজার কপি ছাপা হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ সেসব কপি বাজেয়াফত করে এবং আমার দেশ প্রেস গালাসিল করে দেয়। উল্লেখ্য, এই একই প্রেসে বিএনপি সমর্থক দৈনিক দিনকালও ছাপা হতো। সরকার পক্ষ থেকে জানানো হয় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল হয়ে গিয়েছে।
২ জুন ২০১০ঃ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা অপ্রকাশিত।
মাহমুদুর রহমানকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেটা জানার জন্য তার পরিবার, সাংবাদিকবৃন্দ ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। গুজব ছড়িয়ে পড়ে তাকে ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে ডিজিএফআইয়ের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অসমর্থিত সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে তাকে ক্যান্টনমেন্ট থানার হাজতে রাখা হয়েছে।
এইদিন বিকেল পৌনে পাচটায় মাহমুদুর রহমানকে দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কড়া পাহারায় ঢাকার সিএমএম আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।

মাহমুদুর রহমানের পক্ষে আইনজীবীরা বলেন, মাহমুদুর রহমান একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তি। সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ও একজন তুখোড় সাংবাদিক। ১/১১-এর পর দুই নেত্রীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার প্রচেষ্টা তিনি তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে রুখে দেন। ফলে দেশে গণতন্ত্র রক্ষা পায়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করে সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। ফলে পাচ শতাধিক সাংবাদিক ও কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন। সরকারের বিরুদ্ধে পত্রিকায় লেখার কারণেই পত্রিকা বন্ধের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। পত্রিকার প্রকাশক পরিবর্তন বিষয়ে ২১/৮/১০ তারিখ থেকে বহুবার চেষ্টা করেও সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। হাসমত আলীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে তাকে দিয়ে বাধ্য করে এ মামলা করা হয়েছে। এ মামলার ধারা জামিনযোগ্য হওয়ায় সরকার ষড়যন্ত্র করে নাটক সাজিয়ে পরে পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধাদানের কথা উল্লেখ করে অন্য মামলায় পাচ দিনের রিমান্ড চায়। তাকে রিমান্ড বাতিল করে জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না।

জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, মাহমুদুর রহমান আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। পুলিশকে আটক করে মারধর করেছেন। তাকে জামিন না দিয়ে রিমান্ডে দেয়া হোক।
এর মধ্যে পুলিশকে ‘মারধর ও কর্তব্য কাজে বাধা দান’ সংক্রান্ত একটি মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড ও জামিন­ উভয় আবেদনই নামঞ্জুর করেন এবং মাহমুদুর রহমানকে তিন দিনের মধ্যে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলা তদন্তকারীদের নির্দেশ দেন। একই আদালত হাসমত আলীর দায়ের করা প্রকাশনা বিষয়ে প্রতারণার মামলায় বিশ হাজার টাকা মুচলেকায় একজন স্থানীয় আইনজীবীর জিম্মায় মাহমুদুর রহমানের জামিন মঞ্জুর করেন।
অর্থাৎ ২ জুন রাত মাহমুদুর রহমানকে জেলে কাটাতে হয়। একটি সূত্র জানিয়েছে তাকে কোনো ডিভিশন দেয়া হয়নি।
এই দিন দেশে ও বিদেশে মাহমুদুর রহমানের অ্যারেস্ট ও আমার দেশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। সংসদে বিএনপির এমপিরা ওয়াক আউট করেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ‘মানিক মিয়ার সাথে মোনায়েম খা-র সরকার যে আচরণ করেছিল, বর্তমান সরকার মাহমুদুর রহমানের সাথে একই আচরণ করেছে। ওয়ান-ইলেভেনের পর যে পরিবর্তন আশা করা হয়েছিল তা আসেনি।’

বিদেশে নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি দীর্ঘ রিপোর্টে এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করা হয়। আন্তর্জাতিক মনিটরিং সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (সংক্ষেপে এএইচআরসি) এবং কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সংক্ষেপে সিপিজে) এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে।
৩ জুন ২০১০ঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার কার্যালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি দেখা করেন।
মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও আমার দেশ-এর প্রকাশনা বন্ধ বিষয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পুলিশের আইজি নূর মোহাম্মদ এবং র্যাবের ডিজি হাসান মাহমুদ খন্দকার।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ শেখ হাসিনার সাথে আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎকার বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেয়ার সময়ে জানান, রাষ্ট্রদূতকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের সংবাদ মাধ্যম সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রুদ্ধদ্বার বৈঠক বিষয়ে কোনো সরকারি বিবৃতি আসেনি। অবশ্য সে আশাও করা হয়নি।
কিন্তু জানা যায়, মাহমুদুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারও পুলিশ পাচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে মাহমুদুর রহমানের উপস্থিতিতে ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ৭ জুন সোমবার শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করেন।

অন্যদিকে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তেজগাও থানার সাব ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম রেজা দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। কারা কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাহমুদুর রহমানকে ৭ নম্বর সেল থেকে বের করে কারা প্রশাসনের অফিসের উত্তর পাশের খোলা বারান্দায় নিয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদের সময় কারাগারে একজন ডেপুটি জেলার ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিট থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়ে চলে ১টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাকে মাহমুদুর রহমান পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আপনারা আমাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছেন।

কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, মাহমুদুর রহমানের কাছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম তেজগাও থানায় ২/৬/২০১০ তারিখে দায়ের হওয়া ২ নম্বর মামলার নথিপত্র দেখিয়ে জানতে চান, ‘আপনার উপস্থিতিতে এ মামলার এজাহারভুক্ত অন্যান্য সাংবাদিক ও অজ্ঞাত কিছু ব্যক্তি সরকারি কাজে বাধা প্রদান করেন।’ মামলায় যাদের নাম রয়েছে ওই সব সাংবাদিকের নাম, পদবি ও ঠিকানা ঠিক আছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়।

মাহমুদুর রহমান পুলিশ কর্মকর্তাকে জানান, মামলায় যাদের নাম উল্লেখ রয়েছে তারা সবাই তার পত্রিকার সাংবাদিক। এরপর তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে পুলিশ কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, ‘আপনারা (পুলিশ বাহিনী) অন্যায়ভাবে অফিসের একতলা থেকে ১৫ তলা পর্যন্ত পুলিশ দিয়ে চারদিক ঘিরে আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এক পর্যায়ে কোনো কারণ ছাড়াই সাংবাদিক ও কর্মচারীদের মারধর করেন। আবার আমাদের বিরুদ্ধেই আপনারা মামলা দিয়েছেন। মামলা তো আপনাদের বিরুদ্ধে হওয়া উচিত। আমরাই আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।’
তখন দারোগা চুপ হয়ে তার ডায়রিতে সংক্ষিপ্ত নোট লিখে কারাগার থেকে বেরিয়ে যান।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছাড়াও আমার দেশ-এর আরো তিনজন সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। এরা হচ্ছেন, সৈয়দ আবদাল আহমেদ (ডেপুটি সম্পাদক), জাহেদ চৌধুরী (সিটি সম্পাদক) ও সঞ্জীব চৌধুরী (সিনিয়র সহকারী সম্পাদক)।

শেখ হাসিনার লেভেলে
কেউ কেউ বলবেন মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ-এর এই তিন সাংবাদিক সৌভাগ্যবান বা লাকী ফোর! কারণ ১ জুন রাতে ওপরের নির্দেশে আমার দেশ পত্রিকা অফিস হামলাকারী পুলিশ যখন খুব চাপের মুখে ছিল তখন তারা যথেষ্ট সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য দেখিয়েছেন এবং তারা কোনো হত্যা অপরাধের মামলা এ চারজনের বিরুদ্ধে ঠুকে দেননি। ক্রসফায়ারে নিহত কোনো ব্যক্তির লাশকে পুলিশ ইউনিফর্ম পরিয়ে তারা অভিযোগ করতে পারতেন অফিসের ভেতর থেকে মাহমুদ গং গুলি করেছিলেন। যাই হোক, ‘হাসমত আলীর দায়ের করা’ প্রতারণা মামলায় জামিন মঞ্জুর হলেও পুলিশের দায়ের করা মামলায় মাহমুদুর রহমান এখনো জেলেই আছেন। সর্বশেষ সংবাদে জানা গেছে, মাহমুদুর রহমানকে জেলে ডিভিশন না দিয়ে নির্জন ঘরে স্থানান্তর করা হয়েছে বা সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয়েছে।

বলা যেতে পারে, রাজনৈতিক হয়রানি ও নির্যাতনের ক্ষেত্রে মাহমুদুর রহমান পৌছে গেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেভেলে। ১ জুনের প্রেস কনফারেন্সে মাহমুদুর রহমান বলেছিলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পরে দুটি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষরও আদায় করা অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে তখন শেখ হাসিনাকে যেমন গ্রেফতার করেছিল ঠিক তেমনটিই এখনো হতে চলেছে। তবে ওই সময়ে মাহমুদুর রহমান জানতেন না তাকেও শেখ হাসিনার মতোই নির্জন কারাবাসে রাখা হবে। তফাৎ এই যে, শেখ হাসিনা ছিলেন নির্জন সাবজেলে বা একটি নির্জন বাড়িতে। আর মাহমুদুর রহমান আছেন জেলের একটি নির্জন ঘরে।

আমেরিকান রাষ্ট্রদূত কি বলেছেন?
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব সংক্ষিপ্তভাবে জানিয়েছেন আমেরিকান রাষ্ট্রদূতকে কি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি বলেননি আমেরিকান রাষ্ট্রদূত কি বলেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। আমেরিকার শীর্ষ পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং অন্যান্য সাংবাদিক ও মানব অধিকার সংস্থাগুলোর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানা গেছে। তারা মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার ও আমার দেশ বন্ধের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছে। ধারণা করা যেতে পারে, আমেরিকান রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি একই ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রতিবিম্বিত করেছেন শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে। এক্ষেত্রে দুটি ফ্যাক্টর বিবেচনা করতে হয়েছে এবং হচ্ছে আমেরিকান রাষ্ট্রদূতকে।
এক. তার নিজের দেশে পত্রিকা এবং সাংবাদিক ও মানব অধিকার সংস্থাগুলো এ ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। দুই. মাহমুদুর রহমানের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল আমেরিকান সরকার অনুসৃত কয়েকটি নীতির বিরোধিতা। সুতরাং এখন মাহমুদুর রহমানের মুক্তির পক্ষে অবস্থান না নিলে এটা মনে হতে পারে যে, আমেরিকান সরকার প্রতিশোধপরায়ণ এবং তাই তারা আওয়ামী সরকারের আমার দেশ দমনপীড়ন নীতির প্রতি সমর্থন দিচ্ছে।

মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও আমার দেশ পুনঃপ্রকাশের পক্ষে যদি রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি অবস্থান নিয়ে থাকেন তাহলে তিনি অবশ্যই ধন্যবাদ পাবেন। তাকে মনে করিয়ে দেয়া যেতে পারে যে, বাংলাদেশে রিমান্ড এখন অমানবিক টর্চারের সমার্থক হয়ে দাড়িয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক খবরঃ
গতকাল বিডিআর জওয়ান মাহমুদুল হাসান ও আল মুরাদকে কারাগার থেকে হাজির করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আদালত মাহমুদুলকে সাত দিন ও মুরাদকে তিন দিন রিমান্ডে নেয়ার পরেই মাহমুদুল বুকে হাত দিয়ে কাঠগড়ায় পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান। আদালত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার নির্দেশ দেন।
মাহমুদুল হাসান এবং মাহমুদুর রহমানের মধ্যে তফাৎ আছে। অনেকেই বিশ্বাস করবেন, রিমান্ডে নেয়ার আদেশ হলেও মাহমুদুর রহমান জ্ঞান হারাবেন না।

বাস্তবতাভিত্তিক ধারণা বনাম আইন
কারণ ইতিমধ্যেই মাহমুদুর রহমান বহুবার সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিকবার বেসরকারি হামলা এবং সরকারি হামলা ও মামলা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি অকুতোভয়ে লড়েছেন।
বেসরকারি হামলা নাম্বার এক হয় বনানীতে নেভাল হেড কোয়ার্টার্সের সামনে। সেখানে দিনের বেলায় মোটর সাইকেলে দুই অজ্ঞাত হামলাকারী তার গাড়িতে ঢিল ছোড়ে। মাহমুদুর রহমান গাড়ি ঘুরিয়ে তাদের ফলো করেন। তারা পালিয়ে যায়। দুই. তেজগাওয়ে সাত রাস্তার মোড়ে সন্ধ্যাবেলায় তার চলমান গাড়ির ওপর ভারী হাতুড়ি ছোড়া হয়। অজ্ঞাত হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এরপর লন্ডনে একটি জনসমাবেশে জনৈক হামলাকারী ছুরি হাতে তাকে আক্রমণ করে এবং মাহমুদুর রহমানের সুøট ছিড়ে যায়।
সরকারি হামলা ও মামলার মধ্যে রয়েছে ঢাকা এয়াপোর্টে দুইবার মাহমুদুর রহমানকে বিদেশ যেতে বাধা দেয়া হয়। এরপর আদালতের নির্দেশ পেয়ে তিনি বিদেশে যেতে পারেন। কিন্তু বিদেশে তার ব্যবসায়িক এপয়েন্টমেন্টগুলো তিনি মিস করেন এবং এর ফলে তার ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়। সর্বোপরি, উল্লেখিত সর্বশেষ দুটি মামলাসহ মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকার মোট ৩১টি মামলা দায়ের করেছে।

সুতরাং এখন প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এবং আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যতই আইনের কথা বলুন না কেন, পাবলিক পারসেপশন (হপড়ধপহয়মসষ) হয়েছে মাহমুদুর রহমানকে ব্যক্তিগতভাবে দমনপীড়ন এবং আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করার লক্ষ্যে সরকার সর্বশেষ মামলা দুটি দায়ের করেছে বা করিয়েছে।
তাই যারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় এবং লেখকের অধিকারে বিশ্বাস করেন এবং যার মধ্যে নিশ্চয়ই আমেরিকান রাষ্ট্রদূতও আছেন, তাদের সবার আশু কর্তব্য হবে মাহমুদুর রহমানকে যেন রিমান্ডে না নেয়া হয় অন্তত সে বিষয়টি নিশ্চিত করা।

ফাস্ট না স্লো পয়জনিং?

গত বছরের মে মাসে লন্ডনে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি ক্রাচে ভর দিয়ে হাটতেন এবং ডান হাতের আঙ্গুলের এক্সারসাইজ করতেন। যদিও তিনি বলতে চাননি ওয়ান-ইলেভেনের পর আটক অবস্থায় তার ওপর কি টর্চার হয়েছিল তবুও আমি বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছিলাম ঘটনার কিছু অংশ। আমি শুধু বলতে চাই কোনো মানুষকেই, তা তিনি যে দল বা মতেরই হোন না কেন, আটক অবস্থায় তারেক রহমানের মতো নির্যাতনের শিকার যেন না হতে হয়। একইভাবে আমি বলতে চাই, কোনো মানুষকেই যেন শেখ হাসিনার মতো সাবজেলে আটক অবস্থায় স্লো পয়জনিংয়ের শিকার যেন না হতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন সাবজেলে আটক অবস্থায় তাকে স্লো পয়জনিংয়ের চেষ্টা করা হয়েছিল। তার এ কথার সমর্থন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ও আওয়ামী লীগ সমর্থক ডাক্তারও করেছেন। শেখ হাসিনা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্দী ছিলেন। তাই তাকে হয়তো ফাস্ট পয়জনিং নয়­ স্লো পয়জনিংয়ের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু মাহমুদুর রহমান, যার জীবননাশের চেষ্টা ইতিমধ্যে করা হয়েছে, তিনি যদি নির্দিষ্ট ও সীমিত সময়ের জন্য রিমান্ডে থাকেন তাহলে অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তারা স্লো নয়, ফাস্ট পয়জনিংয়ের দিকে আগ্রহী হতে পারেন। আমি আশা করবো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কড়া নজর রাখবেন এবং মাহমুদুর রহমানের শারীরিক নিরাপত্তা একশ শতাংশ নিশ্চিত করবেন।

সরকারের আক্রোশের কারণ
মাহমুদুর রহমান এবং আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে সরকারের আক্রোশের প্রধান পাচটি কারণ হলো­
এক. দৈনিক পত্রিকাটি তথ্যনির্ভর সমালোচনা করেছে এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির গভীর অবনতির বিষয়ে নিয়মিত রিপোর্ট ছেপেছে। দুই. দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে স্ট্যাটিসটিক্স নির্ভর রিপোর্ট ছেপেছে। তিন. শেখ হাসিনার আমেরিকা প্রবাসী ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে আমেরিকান তেল কম্পানি শেভরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং সেখানে বড় দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে রিপোর্ট ছেপেছে। চার. শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পৈতৃক পরিবারের সঙ্গে রাজাকারদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে রিপোর্ট এবং ফটো ছেপেছে। পাচ. আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের পৈত্রিক পরিবারের সঙ্গে হেকিমি তথা ইসলামী ব্যবসায়ের সম্পৃক্তার রিপোর্ট ছেপেছে। গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো এসব রিপোর্টের ওপরে ছিল মাহমুদুর রহমানের লেখা নিজস্ব রাজনৈতিক কলাম।

ফলপ্রসূ কলাম
মাহমুদুর রহমানের লেখা যে ফলপ্রসূ হতে পারে সেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোঝেন।
ওয়ান-ইলেভেনের পরে যে অতি অল্প কয়েকজন লেখক নিয়মিতভাবে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের পক্ষে এবং মাইনাস টু থিওরির বিরুদ্ধে অর্থাৎ শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুক্তির পক্ষে লিখেছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন মাহমুদুর রহমান। অকাট্য যুক্তি এবং কোরান শরিফের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি লিখেছিলেন সপ্তাহের পর সপ্তাহ। আজ যে শেখ হাসিনা একজন মুক্ত মানুষ তার পেছনে মাহমুদুর রহমানের অবদান আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই একজন অকৃতজ্ঞ ব্যক্তি রূপে প্রতিভাত হতে চাইবেন না। বরং তিনি তার ঋণ পরিশোধ করতে চাইলে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির ও আমার দেশ-এর পুনঃপ্রকাশের নির্দেশ দিতে পারেন।

ভিন্ন সময়
কিন্তু সেই রকম নির্দেশ যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে না আসে তাহলে কি হতে পারে? কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগ আবার ৭৪-৭৫-এর বাকশালি সময়ে ফিরে যেতে চাইছে। সুতরাং মাহমুদুর রহমান মুক্তি পাবেন না এবং আমার দেশ পুনঃপ্রকাশিত হবে না।
এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার যদি বিবেচনা করেন সময়টা বদলে গিয়েছে তাহলে সবারই মঙ্গল হবে।

১৯৭৪-৭৫-এ বাংলাদেশের মিডিয়ার বয়স ছিল খুবই কম। সেই সময়ে জনসাধারণ পাচটি দৈনিক পত্রিকা পড়তো­ ইত্তেফাক, সংবাদ, বাংলাদেশ অবজার্ভার, দৈনিক বাংলা ও বাংলাদেশ টাইমস। শেষোক্ত দুটি পত্রিকা ছিল সরকারি মালিকানাধীন। ১৬ জুন ১৯৭৫-এ ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ অবজার্ভারকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে এনে দৈনিক সংবাদসহ দেশের বাদবাকি সব সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু তখন দৈনিক পত্রিকার সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল কম। এখন টেলিকমিউনিকেশন্সে মালটি-ন্যাশনাল কম্পানি থেকে শুরু করে দেশীয় খাদ্য ও পানীয় এবং প্লাস্টিক সামগ্রী প্রস্তুতকারকরা তাদের পণ্য প্রসারের এবং ল্যান্ড ডেভেলপাররা ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য নির্ভর করেন দৈনিক পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ওপর। দ্বিতীয়ত, তখন মিডিয়াতে কর্মী সংখ্যা ছিল কম। এখন অনেক বেশি। আমার দেশ পত্রিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আতাউস সামাদ ইতিমধ্যে এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বলেছেন, পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করার ফলে তিন শতাধিক কর্মচারী বেকার হয়ে যাবে। তৃতীয়ত, তখন পত্রিকার স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ব নজরদারি প্রায় ছিল না বললেই চলে। এখন স্যাটেলাইট সংযোগের ফলে এবং বিশ্ব জুড়ে সিপিজে, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স, এএইচআরসি জাতীয় বিভিন্ন সংস্থার সদা তৎপরতার ফলে সম্পাদক নির্যাতন ও পত্রিকার স্বাধীনতা হরণ তাৎক্ষণিকভাবে জানাজানি হয়ে যায়। বিশ্ব জনমত সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়। সেটাই হয়েছে গত কয়েক দিনে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা এবার দ্রুত নষ্ট হয়েছে এই কারণে যে, ক্ষমতাসীন হবার পর চ্যানেল ওয়ান টিভি এবং ফেইসবুক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

কিছু আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে থাকেন যে, গত জোট সরকারের আমলে অন্যায়ভাবে ইটিভিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এ কথা সম্পূর্ণ সত্য নয়। ইটিভির বিরুদ্ধে জোট সরকার কোনো মামলা করেনি। আওয়ামী লীগ সরকারেরই আমলে মামলাটি করেছিলেন পাবলিক ইন্টারেস্টে বা জনস্বার্থে কিছু ব্যক্তি। তাদের যুক্তি ছিল আওয়ামী লীগ সরকার ইটিভিকে টেরেস্টৃয়াল সম্প্রচারের সুবিধা দিয়েছে অবৈধভাবে। আদালতের রায় এই যুক্তি মেনে নিয়েছিল। ইটিভি যদি টেরেস্টৃয়াল সম্প্রচারের একক সুবিধা ভোগ করতো তাহলে শুধু বিটিভি-ই নয়, এখনকার সব স্যাটেলাইট নির্ভর প্রাইভেট চ্যানেল খুবই অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতো। সুতরাং ইটিভি নিষিদ্ধকরণ প্রসঙ্গটি অবান্তর। ইটিভি এখন অন্য সব প্রাইভেট চ্যানেলের মতোই শুধু স্যাটেলাইটে সম্প্রচার করছে এবং বিটিভি তার দ্বিতীয় টেরেস্টৃয়াল চ্যানেলে বিটিভি ওয়ার্ল্ড নামে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ দূরীভূত হয়েছিল জোট সরকারের আমলে আদালত ঘোষিত রায়ে।

লেখা বনাম লেখা
সাপ্তাহিক যায়যায়দিন যখন ১৯৮৫ ও ১৯৮৬-তে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল এবং আমাকে প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত থাকতে হয়েছিল তখন আমি একটি বিষয় বুঝতে পারতাম না। তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, যিনি নিজেকে একজন কবি ও লেখক রূপে দাবি করতেন, কেন তিনি আমার লেখার উত্তর তার লেখাতে দিচ্ছেন না। তার শাসন আমলে অন্ততপক্ষে বারো জন সম্পাদক তার কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছিলেন। তাদের কেউ মন্ত্রী অথবা রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন। অন্ততপক্ষে সেইসব অনুগত সম্পাদকদের কেউ অথবা অনুগৃহীত লেখক ও সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ, আমার লেখার উত্তর লেখায় দিতে পারতেন। সেটা না করে আমার পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে কেন নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল সেই প্রশ্নের উত্তর আমি পাইনি।
আজ প্রায় পচিশ বছর পরে সেই একই পথে আওয়ামী লীগ সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ, পচিশ বছর আগের তুলনায় এখন সরকার অনুগৃহীত ও উপকৃত সম্পাদক, লেখক, দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার সংখ্যা অনেক অনেক বেশি এবং তার ওপরে চলছে সরকার সমর্থক বিভিন্ন টিভি চ্যানেল।

এদের মধ্যে কেউই পারলেন না বা পারছেন না মাহমুদুর রহমানের লেখার উত্তর লেখায় দিতে? তার কথার উত্তর কথায় দিতে?
আশ্চর্য!
খরচের খাতায় ও টার্নিং পয়েন্ট
আমেরিকার বাকপটু টিভি একজিকিউটিভ রিচার্ড বি সালান্ট এস্কোয়ার ম্যাগাজিনে দেয়া ইন্টারভিউতে বলেছিলেন,
Government plans and programmes, even government leaders are expendable. A free press and the truth can never be.
অর্থাৎ, সরকারি প্ল্যান ও কর্মসূচিগুলোকে, এমনকি সরকারের নেতাদের, খরচের খাতায় রাখা যেতে পারে। কিন্তু একটি স্বাধীন সংবাদ মিডিয়া এবং সত্যকে কখনোই খরচের খাতায় রাখা সম্ভব নয়।
রিচার্ড সালান্টের এই উক্তি বারবার সত্য প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশে। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এ বাকশাল সরকারের পতনের পর দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, বাংলাদেশ অবজার্ভার প্রভৃতি তাদের স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছিল। ১৯৯০-এ এরশাদ সরকারের পতনের পর যায়যায়দিন পুনঃপ্রকাশিত হতে পেরেছিল।

বলা বাহুল্য, দৈনিক আমার দেশও পুনঃপ্রকাশিত হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের আগে না পরে? ভবিষ্যতেই এর উত্তর পাওয়া যাবে।
তবে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে, ১ জুন ২০১০-এ আমার দেশ-এর ডিক্লারেশন বাতিল হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি পত্রিকার জীবনে একটি টার্নিং পয়েন্টরূপে কাজ করবে। পুনঃপ্রকাশের পরে পত্রিকাটির সাকুêলেশন অনেক বেড়ে যাবে। বিশেষত তখন যদি মাহমুদুর রহমানের ছবি এবং আত্মপ্রচার কম থাকে বা একেবারেই না থাকে।
আর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জীবনেও টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে তার বন্দিত্ব। বিএনপি নেতাদের অনুরোধে না হলেও, বিএনপি কর্মীদের দাবিতে মাহমুদুর রহমানকে সরাসরি বিএনপি রাজনীতিতে সম্মুখ সারিতে যোগ দিতে হতে পারে।
আওয়ামী লীগের জন্য সেটা হবে চরম দুঃসংবাদ। কারণ সুশিক্ষিত ও সুবক্তা, যুক্তি এবং ভক্তি উভয়বাদী, সৎ ও কর্মঠ, সাহসী ও সত্যবাদী মাহমুদুর রহমান তখন আংশিকভাবে হলেও দূর করবেন বিএনপি নেতৃত্বের দুর্বলতা।
(সুত্র, নয়া দিগন্ত, ০৬/০৬/২০১০)