বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের রোগীদের ঔষধ ক্রয় করতে হয় বাহির থেকে

উম্মে রুম্মান, বরিশাল ॥ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ থাকলেও রোগীদের বাইরে থেকে ক্রয় করতে বাধ্য করছে চিকিৎসকরা। ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের কাছ থেকে নানান উপঢৌকন গ্রহন করে চিকিৎসকরা সরকারী ঔষধ না লিখে বাইরে থেকে ক্রয়ের স্লিপ ধরিয়ে দিচ্ছে রোগীদের।

গতকাল হাসপাতালের সার্জারী ওয়ার্ডে প্রবেশ করা মাত্রই গৌরনদীর মাসুম বিল্লাহ আক্ষেপকরে বলেন,আপনারা ডাক্তারদের এই সেচ্ছা চারিতার খবর লেখেন। সরকার হাসপাতারে গরিব রোগীদের জন্য বিনা মূল্যে ঔষধ সরবরাহের কথাবলে আসলেও এখানে তা উপেক্ষিত। এখানকার চিকিৎসকরা রোগী ভর্তিহওয়া মাত্র বাইরে থেকে ঔষধ ক্রয়ের স্লিপ ধরিয়ে দিচ্ছে। আর প্রতি বছর এ হাসপাতালে পর্যাপ্ত ঔষধ মেয়াদ উত্তির্ন হয় এবং তা নষ্ট করে ফেলছে। তার পরও অসহায় রোগীরা পাচ্ছেনা সরকারী ঔষধ। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবী যে কোন ধরনের অপারেশন থেকে শুরু করে রোগ নিরাময়ের ঔষধ রয়েছে যথেস্ট পরিমানে। কিন্তু কার্তিপয় চিকিৎসক কোম্পানীর কাছ থেকে উপটোকেন নিয়ে হাসপাতালের ঔষধের মান ভাল নয় দাবী করে রোগী গরীব কিংবা ধনি হউক না কেন বাহির থেকে ঔষধ কিনে আনাচ্ছেন অহরাহর।

সূত্র মতে, গত অর্থ বছরের চেয়ে চলতি অর্থ বছরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় দের গুন টাকার ঔষধসহ সাজিক্যাল মালামাল ক্রয় করেছে। হাসপাতালের এক পরিসংখ্যানে দেখে গেছে, চলতি অর্থ বছরে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি ২৫ হাজার টাকায় আড়ই শতাধীক ধরেনের ঔষধ ও আরো এক কোটি টাকার সাজিক্যাল ( গজ, ব্যান্ডেস, ক্যাটগ্যাট, ইউরিন ব্যাগসহ ৫০ ধরনের ) মালামাল ক্রয় করেছে। তাই এ হাসপাতালে রোগীর যে কোন ধরনের অপারেশনসহ রোগ নিরাময়ের ঔষধ সরকারী ভাবেই সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে কোন ঔষধের জন্য বাহিরের দোকানে ক্রয় করার প্রয়োজন নেই বলে দাবী করলেন সহকারী পরিচালক ডাঃ অনিল চন্দ্র। তিনি বলেন, একটি ঔষধও বাহিরের দোকান থেকে ক্রয় করার প্রশ্নই উঠে না।

শেবাচিমের কাডিওলোজী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বলেন, বর্তমানে শেবাচিম হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগের রোগীদের জন্য সবচেয়ে দাবী ঔষধ স্টেপটোকইনেজ ( দাম ৪ হাজার টাকা), নাবিকাস ইনজেকশন সহ একাধিক ঔষধ সরকারী ভাবে সরবরহ করা হয়। এ বিভাগের রোগীদের বাহিরের ঔষধ ক্রয়ের প্রয়োজন নেই। একই ভাবে গাইনী বিভাগের ডাঃ হাওয়া আক্তার জাহান জানান, গাইনী বিভাগের রোগীদের সিজারসহ অন্যান্য অপারেশনে বাহির থেকে কোন ঔষধ ক্রয়ের প্রয়োজন নেই। কেননা সম্প্রতি সময়ে এ হাসপাতাল থেকে ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া সার্জারী, মেডিসিন, শিশু বিভাগসহ সকল বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা একই মন্তব্য করেন। তবুও রোগীদের কিনতে হচ্ছে বাহিরের দোকান থেকে ঔষধ! এর কারন খুজে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা নানান ধরেনর উপটোকেন নিয়ে এক শ্রেনীর চিকিৎসকদের ম্যানেজ করে ফেলে। হাসপাতালে ঔষধ সরবরাহ থাকলেও ওই ঔষধের মান ভাল নয় দাবী করে ওই সমস্ত চিকিৎসকরা রোগীদের হাজার হাজার টাকার ঔষধ বাহিরের দোকান থেকে কিনে আনার পরামশ দিচ্ছে। এতে করে বিপাকে পরছে দক্ষিণাঞ্চলের অসহায় ও গরীব রোগীরা। তাই রোগীর স্বজনরা এভাবেই ঔষধ ক্রয়ের অর্থের জন্য আর্তনাদ করেই যাবে যা দেখার কাউকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা এ হাসপাতালে।