পদ্মা সেতু : দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রত্যাশা

মুহাম্মাদ রিয়াজ উদ্দিন, গৌরনদী ॥ বর্তমান মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম একটি অঙ্গিকার ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণ। সরকার গঠন করার পর পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের জন্য নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। জমি অধিগ্রহণসহ মূল সেতু নির্মাণে চলছে নানা আয়োজন। যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবুল হোসেন দায়িত্ব পাওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের মানুষের প্রত্যাশাও বহুগুণে বেড়ে যায়। পদ্মা সেতুর নির্মাণে অধিকাংশ অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক থাকায় ব্যাংকটির ওপর নির্ভরতাও ছিল বেশি। কিন্তু নানা কল্পনা জল্পনার পর বিশ্ববাংক যখন তাদের ঋণচুক্তি বাতিলের পদ্মা সেতু : দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রত্যাশাসিদ্ধান্ত নিল তখন দক্ষিণাঞ্চলবাসীর হতাশা হওয়া ছাড়া কিইবা ছিল। কিন্তু না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ওয়াদা পূরণে এখনো অঙ্গীকারাবদ্ধ। তিনি যেকোন ভাবেই হোক এই সেতু নির্মাণের পুন: উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এ অঞ্চলের মানুষ নতুন ভাবে স্বপ্ন দেখছে তাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে। বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিলের পর এখন নতুন করে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে তার দ্রুত অবসান চায় পুরো দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ। তারা যে কোনভাবেই এই সেতু নির্মাণ দেখতে চায়। বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিলের পর সরকার বিরোধীদল পরস্পর দুর্নীতিগ্রস্থ বলে যে আখ্যায়িত করে যাচ্ছে তাতে পদ্মা সেতু বাস্তবায়িতর হওয়ার বদলে ঝুলে থাকবে বলেই জনগণের শঙ্কা। বিশ্বব্যাংক কোনভাবেই দুর্নীতির প্রমাণ দেখাতে পারেনি। তাই অভিযোগ প্রমাণিত না হলে কোনভাবেই দুর্নীতি হয়েছে বলার কোন সুযোগ নেই। দেশের বিরোধীদলও যেন এমন সময়ের অপেক্ষায় ছিল যা তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের এহেন সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই কোন দলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি তাহলে কেন এই রাজনৈতিক বক্তব্য। দেশের মানুষ যেখানে সুষ্ঠু সমাধান চায় যেখানে সরকারি দলের নেতারও আজ বিরোধী পক্ষের সমালোচকদের উত্তর দেয়ার জন্য সভা সিম্পোজিয়ামের মঞ্চকে বক্তৃতার মাধ্যমে উত্তপ্ত করে রাখছে। জনগণকে সব সময়ই অহেতুক, অকল্যাণজনক বক্তব্য শুনে শুনে অভ্যস্থ হতে হয়। এসব বক্তব্য সময়ক্ষেপণ ছাড়া আর কিছুই নয় এটা সবারই ভালোভাবে জানা। জনগণ জানে না আর কত বক্তব্য দিয়েই চলবে দেশের এমন রাজনীতি। পদ্মা সেতু নিয়ে আর কোন রাজনীতিই দক্ষিণাঞ্চলবাসী তথা দেশের মানুষ দেখতে চায় না। সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি বিরোধীদলের সহযোগিতায় এ সেতুর পূর্ণ বাস্তবায়নের অপেক্ষার প্রহর গুনছে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ।

সরকারের কী করণীয় তা সরকারই ঠিক করবে কিন্তু জনগণ তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন চায়। তাদের গণদাবি পূরণ দেখতে চায়। অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চল একটি সেতুর জন্যই আজ ঢাকার সাথে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। যেখানে চার ঘণ্টায় ঢাকা আসা যেত সেখানে এখন আট থেকে কখনো কখনো দশ ঘণ্টাও পেরিয়ে যায়। সময় অপচয়ের পাশাপাশি মানুষ আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানী ঢাকার সাথে পুরো দক্ষিণ বঙ্গের এক নতুন অধ্যায় সূচিত হবে। পরিবর্তন আসবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা ক্ষেত্রে। ঢাকার সাথে দ্রুত যোগাযোগ এখন যুগের দাবি হিসেবে দেখছে এ অঞ্চলের মানুষ। আধুনিক সব সুবিধা পাওয়ার জন্য এ সেতু নির্মাণের কোন বিকল্প নেই-এমনটি মনে করছে অত্র অঞ্চলের সবাই। চুক্তি বাতিলের পর যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জনগণের জন্য ‘সারপ্রাইজ’ এর কথা বললেও দুদিন পর তিনি ভুল করে ওই শব্দটি ব্যবহার করেছেন বলে গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন। যোগাযোগ মন্ত্রীর এ ভুল শোধরানো নিশ্চয়ই দেশের রাজনীতিতে এক নতুন সংস্কৃতিতে সংযোজিত হলো। এর পূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পরপরই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের কথা বলেছিলেন কিন্তু ঘণ্টার পরিবর্তে কয়েকমাস পেরিয়ে গেলেও তার কথা বাস্তবায়িত হয়নি। অবশ্য পরে তিনি ৪৮ ঘণ্টা বলতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।

যোগাযোগমন্ত্রীও এরকম কিছু একটা বলতে পারতেন। এমনটি স্পষ্টভাষী এ মন্ত্রীর পছন্দনীয় নয়। এ জন্য নিশ্চয়ই তিনি ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। সবকিছুর পরও যোগাযোগমন্ত্রীর প্রত্যাশা আগামী ফেব্র“য়ারি মাসের মধ্যে সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিশ্বব্যাংককে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রীও দৃঢ় কণ্ঠ সব অভিযোগ প্রত্যখ্যাান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে কমিশন খাওয়ার অভিযোগ নাকচ করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তাঁর পরিবারের কেউ কোনোভাবেই দুর্নীতি ও কমিশন খাওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বলেও জানান। তাঁর নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ কোনো রকম সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে ই-মেইল ও মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করেছে। আরও যারা আছে তারাও বন্ধ করতে পারে। পদ্মা ব্রিজ করার জন্য এদেশের ১৬ কোটি মানুষ আছে। বিশ্ব মন্দা সত্ত্বেও আমরা অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে পারলে পদ্মা সেতুও আমরা করতে পারবে। সংসদের ভেতর প্রধানমন্ত্রীর এমন দৃঢ় বক্তব্য শুনে পুরো জাতি আজ আশান্বিত পদ্মা সেতু নির্মিত হবেই।
সংসদের বাইরেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিটি বক্তব্যে বলেছেন পদ্মা সেতু নির্মিত হবেÑআমরা সবাই প্রধানমন্ত্রী এ বক্তব্যে আশ্বস্ত থাকতে চাই। দক্ষিণবঙ্গের লাখ লাখ মানুষের স্বপ্নকে প্রধানমন্ত্রী কোনভাবেই অবমূল্যায়িত করবেন না এ বিশ্বাস সবারই রয়েছে।