ভালবাসা এবং আবেগের গল্প – সকাল আসেনা

তানভির ইসলাম ॥ অবসাদে আর ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে যাচ্ছে। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে আমার। কিন্তু আমি ঘুমাতে পারছি না। রাত খুব একটা বেশী হয়নি
এখনো। মাত্র ১টা বাজে। আধখোলা জানালা দিয়ে হীম হীম বাতাস আসছে। ইউকে তে এখন পুরো সামার। কিন্তু প্রকৃতি মনে হয় ভুলে গেছে সেই কথা। রোদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। সামার নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। সামারে খুব ভালো থাকে আবহাওয়া। বিচে মানুষ জন গিজগিজ করে। বার বি কিউ পার্টি হয়। আরো কত কি। কিন্তু এসবের কিছুই দেখছি না আমি। আজ সারাদিন আকাশ মেঘলা ছিল। ঠিক যেন আমার মনের মত। সকালে ঘুম থেকে উঠেই জবে চলে গেলাম। আজ কষ্ট হয়েছে বেশ। বাসায় এসে রান্না করে তারপর খাওয়া। এরপর আবার প্রোজেক্ট এর কাজ। সবশেষ করে যখন প্রচন্ড ক্লান্ত আমি তখনি প্রতিদিনের মত ফেসবুকে যাবার ইচ্ছাটা প্রবল ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। সারাদিন তোমার কোন খবর পাইনি যে। না ফেসবুকে তুমি নেই। তোমার কোন খবর নেই। কোথাও তুমি নেই। মানের মাঝে খুঁজে দেখলাম। এখন এই একটা জায়গাতেই তুমি আছো। কিন্তু আর কোথাও নেই। আমার ধরা ছোয়ার বাইরে। আমার সাথে যোগাযোগের বাইরে। শুধু মাত্র আমার কল্পনায় আছো তুমি। জানি অনেক ব্যস্ত আছো। হয়তো নতুন কোন লেখা নিয়ে।

এই লেখালেখির মাধ্যমেই তোমার সাথে পরিচয়। বেশীদিন আগের কথা তো নয়। খুব অল্প কিছু দিন। এইতো সেদিন তোমার একটা লেখা পড়লাম। ভালো লেগেছিলো। লেখাটা ভালো লেগেছিলো কারণ মনে হয়েছিলো এটা তোমার নিজের জীবনের ঘটনা। লেখাটা পড়েই বুঝেছিলাম মনের মাঝে ধারন করে আছো এক বিশাল কষ্টের সমুদ্র। সেদিন থেকেই আমি দাড়াতে চেয়েছিলাম সেই সমুদ্রের তীরে। দুহাতে একটু ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা ছিল সেই কষ্টের জল। মিলিয়ে দেখার আগ্রহ ছিল নিজের সাথে। সমুদ্র যে আমার খুবই প্রিয়। আচ্ছা সব কষ্টের জলের রঙ কি গাঢ় নীল হয়?? আমার খুব জানার ইচ্ছা ছিল।

আমি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম। সাধারনত আমি কাউকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই না। কিন্তু কেন যেন আমাকে পাঠাতেই হলো। তুমি প্রথমে একসেপ্ট করনি। ভেবেছিলাম অন্য সবার মতই ভেবেছো। ভাবাটাই স্বাভাবিক ছিলো। এমন কোন বৈশিষ্ঠ্য আমার নেই যেটাতে মানুষ আমাকে একটু আলাদা ভাবতে পারে। এজন্য আমিও আর কিছু বলার সাহস পাইনি। পাছে আমার সমুদ্র ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। তোমার আপডেট দেখে দেখেই দিন গুলো কাটতে লাগলো। মাঝে মাঝে একটা দুইটা কমেন্টস করতাম শুধু তোমার পাবলিক পোস্ট গুলোতে। তুমি রেসপন্স করতে। খুব সাধারণ কিছু রেসপন্স। আমি তাতেই খুশি। হঠাৎ বিধাতা মুখ তুলে চাইলেন। তুমি সাবস্ক্রাইবার থেকে ফ্রেন্ড এর পর্যায়ে আমাকে প্রমোশন দিলে। চাকরীতে প্রমোশন পেলেও এত খুশি হতাম কিনা জানি না সেদিন যতটা ভালো লেগেছিলো। আধুনিক ছেলে মেয়েদের ভাষায় বলতে গেলে, “সেইরাম ফিলিংস” হয়েছিলো সেদিন। আমি যেন দূর থেকে সমুদ্রের ঢেউ এর শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমার কাঙ্ক্ষিত সমুদ্র। এভাবেই শুরু হলো শেষ না হওয়া একটি গল্পের।

সম্পর্কের অনেক মাত্রা থাকে। অনেক নাম থাকে। তোমার সাথে আমার সম্পর্কের সহজ সরল নাম হলো বন্ধুত্ব। আমি এর বেশী কিছু ভাবিনি কখনো। হয়তো এখনো ভাবিনা। কিন্তু তারপরও কি যেন একটা, কেমন যেন একটা অনুভূতি কাজ করে মনে। ঠিক বুঝানো যাবেনা। আমি নিজেও যে বুঝিনা।

দিন চলে যায়, রাত আসে। আমি ইংল্যান্ডের পথে পথে হাটি। রাস্তার পাশের নাম না জানা গাছে আমাদের দেশের কদম ফুলের মত ফুল ফোটে। আমি ওটার দিকে তাকিয়ে ওটার সাথে তোমার প্রোফাইল পিকচারের মিল খুঁজি। হ্যাটফিল্ড টাউন সেন্টার থেকে একটু দূরে বিশাল একটা গাছ আছে। অনেকটা বট গাছের মত। আমি গাছ খুবই কম চিনি। মাঝে মাঝে ঐ গাছের গোড়ায় বসি। ঠিক যেভাবে বসে তুমি একটা ছবি তুলেছো। আমি হাসি। মনে মনে হাসি। অর্থহীন কাজেও আনন্দ খুঁজে পাই। আবার দিন যায় রাত আসে। আমি অপেক্ষা করি। তুমি ফেসবুকে আসো। উৎসুক হয়ে থাকি তোমার কোন স্ট্যাটাসের, কোন থ্রেডে কোন কমেন্টসের। এটাই যে তোমার সাথে আমার যোগাযোগের একমাত্র উপায়। মাঝে মাঝে অবশ্য মনে হতো একটা মেসেজ দেই। কিন্তু সাহসে কুলায় না। নিজেকে বলি, “এত ভীতু হলে কি চলে”।
তারপরও আমি সাহস করতে পারিনা। আমি তোমার ছবি খুঁজি। দুইটা ছবি ছাড়া আর কোন ছবি দেখতে পাইনা। তুমি সবাইকে তোমার ছবি দেখতে দাওনা। আমার চোখ পড়ে থাকে তোমার ছোট্ট সেই প্রোফাইল পিকচারটার কাছে। আমার অপেক্ষা ফুরায় না।

এরপরে একদিন কার্ড খেলতে খেলতে কি ভাবে যেন সাহসটা করেই ফেললাম। সেদিন রাতে কেন যেন কার্ড ভালো পাচ্ছিলাম, যেটা সাধারণত আমি পাইনা। আমার সাথে যেই পার্টনার হয় তারও কেন যেন কার্ড ভালো আসেনা। এজন্য আনোয়ার ভাইতো ঘোষনা দিয়েই দিয়েছেন যে উনি আর আমার পার্টনার হবেন না। যাই হোক। তখন কিভাবে যে সাহসটা করেছিলাম আমি নিজেই জানি না। না, তোমাকে আমি অনলাইনে পাইনি। কারণ তুমি সবসময় অফলাইনে থাকো। আমি শুধু কেমন আছো জানার জন্য একটা মেসেজ দিয়েছিলাম। মানুষের সাহসের ইতিহাসে এই কাহিনী কোনদিন লেখা থাকবেনা। কিন্তু আমি জানি এই সামান্য “কেমন আছেন?” কথাটি লিখতে সেদিন আমার ইতিহাসের অনেক বীরের সাহস ধার করতে হয়েছিল।

অবাক করা ব্যাপার তখন ঘটলো যখন দেখালাম তুমি উত্তর দিলে একটু পরেই। সাহস বেড়ে গেল। চ্যাট করা শুরু করলাম। টাইপের স্পিড আর কথার পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে আমার কার্ড খেলায় ভুলের পরিমাণ বাড়তে লাগলো। নিশ্চিত গেমের কার্ড নিয়েও ২০০ ডাউন খেলাম। খেলায় যতই ডাউন খাইনা কেন আমার মনের অবস্থা তখন বেশ আপ। সৌরভ ভাই আমার সেদিনের পার্টনার। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে উঁকি দিয়ে আমার কর্মকান্ড দেখে ল্যাপটপ কেড়ে নেবার হুমকি দেয়। ফয়সাল ভাই মুচকি হাসে। আমি মুখটা দেখার মত করুণ করে তাকিয়ে থাকি। এরপর সবাইকে তাদের নিজেদের গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে করিয়ে দেই। ওষুধে কাজ হয়। সবাই তখনকার মত চুপ করে যায়। কিন্তু একটু পরেই বুঝতে পারি কতবড় ভুল করেছি আমি। হটাৎ সৌরভ ভাই তোমার ছবি দেখতে চাই। তখন বুঝি আমি তাদের গার্লফ্রেন্ডদের কথা বলায় তারা এখন তোমাকেও আমার সেইরকম কেউ ধরে নিয়েছে। কিন্তু তুমি তো আমার সেই রকম কেউ দূরের কথা সাধারণ বন্ধুর মতও নও। বিপদে পড়ে যাই। কোন ভাবে কিছু একটা বলে পার পেয়ে যাই সে রাতের মত। জেতা খেলায় ভুলের কারণে হারতে থাকি। কিন্তু স্ক্রিন থেকে চোখ আর সরেনা। তুমি মেসেজ লিখে যাচ্ছো। আমার উৎসাহ আকাশ ছুঁতে থাকে। এরপর রাত গভীর হয়। খুব সাধারণ কিছু কথার পর তুমি বিদায় নিয়ে চলে যাও। সুখ ছোঁয়া রূপসী রাতে আমি মনের মাঝে শান্তি আর চোখের কোণে ভালোবাসার জল নিয়ে ঘুমাতে আসি দোতালায় আমার ছোট্ট রুমে। পিসিতে বাজে আমার খুব প্রিয় একটা গান।

“আমি খোলা জানালা
তুমি ঐ দখিনা বাতাস
আমি নিঝুম রাত
তুমি কোজাগরী আকাশ”।।

আমি জানালা দিয়ে একচিলতে আকাশ দেখি। নিঃসঙ্গতার মেঘে ঢাকা আকাশে একটুকরো চাঁদ কি উঁকি দিলো ঐ?

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে। দেশে থাকতে যে অত্যাচার সহ্য করিনি এই মহা উন্নত জীবন যাত্রার দেশে এসে আমাকে সেই অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। ব্যাপার তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। খুবই সামান্য। ঘটনা হলো প্রায় আণুবীক্ষণিক একশ্রেণীর পোকার যন্ত্রণায় জীবন আমার অতিষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমার ঘুম ভাঙে ছারপোকার ব্যাপক আক্রমণে। অসহ্য বিরক্তি নিয়ে বিছানায় উঠে বসি। আঁতিপাঁতি করে খুঁজি কিন্তু ছারপোকা আর পাইনা। আমার ঘুমের চৌদ্দটা বাজিয়ে তারা মহা আনন্দে নিজেরা ঘুমাতে চলে যান। আজও একই ঘটনা ঘটলো। কিন্তু অন্য দিনের চেয়ে আজকে অনেক বেশী খারাপ লাগছে। কাল রাতে ঘুম হয়নি যে। গত ২ দিন তুমি ফেসবুকে আসছো না। আমি বুঝতে পারছি না কি হলো তোমার। মেসেজ দিয়ে রাখছি কিন্তু কোন উত্তর পাচ্ছিনা। এক ফেসবুক ছাড়া আর কোন ভাবে তো যোগাযোগ করা সম্ভব না তোমার সাথে। এ কদিনে বেশ কথা হচ্ছিলো তোমার সাথে। তোমাকে যতটা ভয় পেয়েছিলাম তার অনেকটুকুই আমি অতিক্রম করতে পেরেছি এই সময়টাতে।

ভয়টা অতিক্রম করতে পারলেও তোমার সেই সমুদ্রটার কাছে যেতে পারছিলাম না কিছুতেই। আমার জানার আগ্রহ দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে। তুমি প্রতিবার খুব সাবধানে আমার প্রশ্ন গুলোকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছো। জানি না এত দ্বিধা কিসের তোমার। আমি জানতে চেয়েছিলাম তোমার কাছে আমাকে ভালো বন্ধু হিসাবে মনে করো কিনা। তুমি কোন উত্তর না দিয়ে শুধু হেসেছো। আসলে হেসেছো বলুলে ভুল হবে হাসির একটা ইমো দিয়েছো। এই কদিনে আমি একটা জিনিস খেয়াল করলাম। সেটা হলো তুমি বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বা না দিয়ে দাও। আর মাঝে মাঝে কয়েক ধরনের ইমো।

সেদিন আমার এখানে রাত ১১টা। তোমার ওখানে ৫টা। প্রায় ভোর। আমি ফেসবুকে আসলাম। এরি মধ্যে আমি জেনে গেছি তোমার ভয়াবহ ইনসমনিয়ার কথা। অফ লাইনে থাকো বলে জানি তোমাকে দেখবো না। আমি অপেক্ষা করি তোমার সাড়া পাবার জন্য। কিছুক্ষন পর পেলাম। একটু পরে নিজে থেকেই নক করলাম। যেটা আমি সচারচর করিনা। বুঝতে পারছি আমার সবকিছুই এখন কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। যাই হোক। আমাদের কথা বলা শুরু হলো।

আমিঃ হাই, কেমন আছেন?

তুমিঃ এইতো

আমিঃ মন ভালো আছে?

তুমিঃ আছে খারাপ না। রাত জেগে বসে আছি ভোর হয়না কেন তা দেখার জন্য।

আমিঃ কোন প্রশ্নের উত্তর যদি কেউ না বোধক ভাবে হ্যাঁ বলে তবে ধরে নিতে হবে তার আসল উত্তর নাই-ই ছিলো।

তুমিঃ একটা ইমো দিলে।

আমিঃ এই ইমোটার অর্থ কি? ভুল করে জিভে কামড় দেয়া নাকি কাউকে দুষ্টামি করে মুখ ভেংচি দেওয়া?

তুমিঃ দুটোই

আমিঃ যাই হোক। আরো কিছুক্ষন কথা বলতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু এখন রান্না করতে যেতে হবে। আবার আসবো। আপনি থাকলে তখন কথা হবে। শুভ রাত্রি।

আমি পেটের দায় মেটানোর জন্য মনের দাবিটাকে অগ্রাহ্য করে রান্না করতে চলে গেলাম। বিশ্বাস করো একটুও যেতে ইচ্ছা করছিলো না। কিন্তু কিছুই করার ছিলো না আমার। সেদিন রাতে আমার রান্না করার কথা ছিলো যে। রান্না করতে গেলেও মনোযোগ দিতে পারছিলাম না কিছুতেই। মুরগির মাংসে লবন হঠাৎ একটু বেশিই পড়ে গেলো। পানি পরিমাণ মত না দেবার কারনে নিচে পুড়ে গেল। সে এক ভয়াবহ রান্না। একটু মুখে দিয়েই বুঝলাম আজ সবার খেতে খবর আছে। কিন্তু তখন আমার এসব দেখার সময় কোথায়? আমি ছটফট করছি মনে মনে আবার কখন পিসিতে এসে বসব বলে। আবার তোমার সাথে কথা বলার জন্য। ভালো লাগছে না কিছুই। কোন রকমে রান্না শেষে বের হতে যাবো তখন মাকনুন আর সৌরভ ভাই আমার সেদিনের রান্নার প্রশংসা হিসাবে আমাকে বিশেষ একটা উপাধি দিলো। লবনের পরিমাণ দেখে তারা আমার নাম দিয়ে দিলো “লবন বাবা”।
অন্য সময় হলে প্রতিবাদের ঝড় তুলতাম। কিন্তু তখন আমি মনের ঝড় সামাল দিতে ব্যস্ত। মুচকি হেসে লবন বাবা উপাধি মাথায় নিয়ে আমি পিসিতে এসে বসলাম।

ততক্ষনে তুমি চলে গেছো। মন খারাপ করা অনুভূতি নিয়ে তোমাকে একটা মেসেজ দিলাম। আসলে মেসেজ ছিলো না সেটা। একটা কবিতা লিখেছিলাম তোমাকে।

রাতের সাথে নিয়ে আড়ি
ঘুমের দেশে কি গেলে তুমি??
রাত এখন একলা জেগে
গভীর কোন অনুরাগে
তোমায় দিয়ে নতুন দিন
শুধিতে চায় তোমার ঋণ
প্রবল কোন ভালোবাসায়
তোমার ফেরার অপেক্ষায়
কাল কি আবার আসবে ফিরে?
নতুন কথায় চেনা সুরে।।

কবিতার শেষে লিখলাম, “ভালো থাকবেন। মন ভালো রাখবেন। নেতিবাচক ভাবে ইতিবাচক উত্তর আর দেখতে চাইনা। হারিয়ে যাওয়া সময়ের ভেসে আসা সুরটাকে যত্ন করে তুলে রাখেন মনের কোন গভীর কোনে। তার ছায়াটা যেন আপনার উজ্জ্বলতা ম্লান করতে না পারে”।

কেন লিখলাম আমি জানি না। এসব কি হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। কেন এমন করছি আমি?? এত অল্প দিনের পরিচয়, আপনি-আপনি সম্বোধনে রাজ্যের দূরত্ব, তারপরও এত কিছু কেন করছি? নিজের উপর সেদিন খুব রাগ হয়েছিলো। ভয় পাচ্ছিলাম। নিজেকে নিয়ে ভয় হচ্ছিলো। ভুল পথে হাটার কষ্ট কতটা নিদারুন হতে পারে, জীবনের অমূল্য সময়ের বিনিময়ে নিজেকে ফিরে পাবার প্রচেষ্টা কতটা যন্ত্রনার হতে পারে এসব কিছুই আমার জানা। তারপরও আবার কি হতে যাচ্ছে তেমন কোন ভুল?? আমি উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না। দিশেহারা এই আমি নিজেকে চিনতে পারছি না। শক্ত দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখা মনের সেই মায়াবী অথচ আমার কাছে ভয়ংকর অনুভূতিটা বের হয়ে আসতে চাচ্ছে কি?? যে অনুভূতিকে অসম্ভব ভয় পাই এখন। আমি সিদ্ধান্ত নেই আর কথা বলবো না তোমার সাথে। মনের সাথে যুদ্ধ করে ক্লান্ত আমি ঘুমিয়ে যাই নিজের অজান্তেই।

পরের দিন ‘যাহা লাউ তাহাই কদু’ টাইপ অবস্থা আমার। রাতের বেলা আসলেই আমি ভুলে গেলাম সব কিছু। কি এক প্রবল আকর্ষনে আমি ফেসবুকে বসি। লগ ইন করতেই তোমার মেসেজ পাই। তুমি লিখেছো “কেমন আছেন?” ছোট্ট দুটি শব্দ। খুবই সাধারণ ভদ্রতা মূলক জিজ্ঞাসা। অথচ আমার কাছে এটাই অনেক কিছু। যাক নিজে থেকে একটা কিছু তো লিখলে আমাকে। আমি রিপ্লাই দেই। তুমি সাড়া দাও। কথার পিঠে কথা চলতে থাকে। হঠাৎ তুমি জানতে চাইলে,

তুমিঃ আপনি আমার থেকে কত বড়?

আমিঃ আমার হাইট ৫ ফিট ৭.৫ ইঞ্চি। এবার আপনি মেপে দেখেন আমি আপনার থেকে কত বড়।

তুমিঃ সেজন্য বলিনি। আপনি তো বয়সে আমার থেকে বড়। আমাকে তুমি করে বলেন।

আমিঃ আমি ছেলে হোক বা মেয়ে সবাইকে আপনি করে বলি যতক্ষন না তারা তুমি করে বলতে বলে।

তুমিঃ আমি খুব ভালো ফ্রেন্ড সবাইকে তুমি করে বলি।

আমিঃ তাহলে তো আমি সেই গ্রুপে পড়িনা।

তুমিঃ এখনো বলতে পারছি না। মাঝামাঝি।

আমিঃ তারমানে আমি কি ভাববাচ্যে অবস্থান করছি নাকি? ভালো

তুমিঃ হুম। তবে আমাকে তুমি করে বললে ভালো হয়।

আমিঃ আচ্ছা। এখন তুমি দিয়ে প্রথম কথাটা হচ্ছে একটা প্রশ্ন। তোমার লেখায় এত কষ্ট থাকে কেন? এত মন খারাপ করা লেখা হয় কেন?

তুমিঃ হুম। কেন যেন হয়ে যায়। আমি জানি না।

আমিঃ মন সবসময় খারাপ থাকলে মন খারাপের লেখা ছাড়া আর কি হবে? মন খারাপ করে লিখো কেন?

তুমিঃ আচ্ছা আমি যাই।

আমিঃ আবার মন খারাপ হলো?

তুমিঃ তুমি আমাকে বুঝতে পারো কিভাবে?

আমিঃ মন খারাপ কেন জিজ্ঞেস করলেই পালিয়ে যাও। কেন? এভাবে নিজেকে আড়াল করার মানে কি? কেন?? কার জন্য??

এতগুলো প্রশ্ন করে আমি তখন উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি। প্রবল আগ্রহ নিয়েই অপেক্ষা করছি। তখনি তুমি “আচ্ছা আমি যাই” বলে তোমার উত্তর শেষ করলে।

তুমি চলে গেলে কিনা বুঝা গেলো না। শুধু এরপর আমার আর কোন মেসেজের কোন রিপ্লাই আসলো না। খুব রাগ হলো। এভাবে চলে যাবার কি খুব দরকার ছিলো? মনে হচ্ছিলো তোমার কানটা ধরে আবার নিয়ে আসি। ফেসবুক থেকে লগ আউট হয়েই আমি কাগজ-কলম নিয়ে বসলাম। লিখলাম ‘অভিমানী নির্বাসিতা।’ উৎসর্গ করলাম তোমাকে। শুধুমাত্র এটা বুঝানোর জন্য যে কেউ একজন আছে যে চায় তুমি ভালো থাকো। তুমি ফিরে আসো। কেউ বলতে চায় জীবনে কষ্টের মাত্রা যতই থাকুক না কেন ভবিষ্যতের স্বপ্নের ক্যানভাসে সুখের তুলির আঁচড় পড়বেই আজ অথবা কাল।

লেখা শেষে শূন্য চোখে তাকিয়ে আছি মনিটরের দিকে। মনে হচ্ছে আমার সেই গাঢ় নীল বিষাদের সমুদ্রের খুব কাছ থেকে আমি ফিরে এলাম নোনা বাতাস গায়ে মেখে। অল্পের জন্য আমার সমুদ্র ছোঁয়া হলো না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে হতাশার আবির মাখা নিকষ কালো আঁধার দেখলাম। কষ্টের রাত গুলো কি তবে আবার ফিরে আসছে??

এখন আমার দিন কাটেনা। আমি অপেক্ষা করি রাতের। রাতের সাথে আমার এই মধুর অপেক্ষা অপেক্ষা খেলার শুরু তোমার সাথে পরিচয়রে পর থেকে। এদিকে আমার সুপারভাইজার যে আমার থিসিসের জন্য অপেক্ষা করে আছে সে আমার মনেই থাকে না। প্রতিদিন রাতে ঠিক করি সকাল থেকে উঠেই থিসিস লেখা শেষ করবো। কিন্তু সে সকাল আর আসে না। জমে যাচ্ছে কাজ, কমে যাচ্ছে চোখের ঘুম, বেড়ে যাচ্ছে কেবল আমার রাত জাগা, বড় হচ্ছে অপেক্ষার প্রহর গুলো। সমুদ্র স্নানের অপেক্ষা।

রাতের দৈর্ঘ্য গুলো এখন অনেক ছোট মনে হয়। প্রতিরাতে তোমার সাথে একটু কথা বলা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। ২ দিন পরে যেদিন তোমায় আবার ফেসবুকে পেলাম অনেক অভিমানে কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো না। এত বড় হয়ে গেছি, জীবনের উপর দিয়ে এত ঝড় বয়ে গেছে তাও আমার ছেলেমানুষী আর গেলো না। কিন্তু কি করবো আমি? আমি যে কেবল আমার মনের ডাকটাই শুনতে পাই। আজ যেমন কনকনে ঠান্ডার মাঝেও বৃষ্টিতে ভিজলাম। কিন্তু আমার তো বৃষ্টিতে চলবে না। আমার চাই সেই সমুদ্র। যে সমুদ্র তুমি ধারণ করে আছো তোমার হৃদয়ে।

আমি পারলাম না জিদটা ধরে রাখতে। আমাকে হার মানতেই হয়েছিলো সেদিন। আমি তোমাকে নক করলাম। সাধারণ কিছু আলাপ চারিতার পর তুমি হঠাৎ আমাকে একটা গল্প শুনাবে বলে ঠিক করলে। কিছুটা অবাক হলাম। ভাবলাম এটা তোমার নতুন কোন লেখা। অনেক আগ্রহ নিয়ে আমি গল্প শোনার জন্য বসে আছি। তুমি গল্প শুরু করলে।

ধরো অসুস্থ একটা মানুষ। কাউকে বলে না যে সে খুব অসুস্থ। করুণা চায় না তাই। খুব ভালোবাসে। ভালোবাসতে পারে। যখন কাউকে খুব ভালোবাসে তখন সেই ভালবাসার মানুষটাকে জানালো যে, আমি খুব অসুস্থ বেশিদিন বাঁচবো না। আমার খুব ইচ্ছা তুমি আমি মারা যাবার আগে আমাকে বিয়ে করো। সেই ভালোবাসার মানুষটা এটা শুনে মেয়েটাকে বললো তুমি আমার সাথে এতোদিন মিথ্যা কেন বলেছো? তুমি কিভাবে ভাবলে আমি তোমাকে নিয়ে পুরো জীবন ভাববো?? কিন্তু ছেলেটা মেয়েটার এখন বেস্ট ফ্রেন্ড। মেয়েটাই ছেলেটার জন্য নতুন মেয়ে দেখে তাদের নিয়ে গল্প করে। সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষটার জন্য অন্য কাউকে ঠিক করে দেয়। তাদের প্রত্যেকদিনের আলোচনার বিষয় মেয়েটা মরে যাবার পর কি হবে।

এটুকু বলে তুমি থামলে। আমি বলেছিলাম, “গল্পের প্লটটা অনেক সুন্দর। কবে পাচ্ছি লেখাটা?” তুমি আবার তোমার প্রিয় কাজটাতে ফিরে গেলে। মানে ইমো দেয়া আরকি। তুমি মুখ ভেংচি কাটা সেই ইমোটা দিলে। এরপর তোমার সাথে আমার যে কথা গুলো হলো তা আমার সবসময় মনে থাকে।

আমিঃ প্লটটা সুন্দর। কিন্তু ভালোবাসার রিলেশন কখনো ফ্রেন্ডশিপে চেঞ্জ হয়না।

তুমিঃ হাস্যকর না?

তোমার এই কথাটার মাঝে কি ছিলো আমি জানি না। হঠাৎ আমার কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো। জানি না কেন মনে হলো এটা তোমার নিজের কথা। আমি কিছুক্ষন চুপ করে ছিলাম। মনে হচ্ছিলো আমি কি আমার সেই সমুদ্রটার সন্ধান পেতে চলেছি? কিন্তু আমি তো এমন চাইনি। এখন যখন মনে হচ্ছে আমি আমার লক্ষ্যের খুব কাছে তখন আমি আর এগোতে চাচ্ছি না। বারবার মন বলছে এটা ভুল। এমন হতে পারে না। আমি ভুল ভাবছি। আমি চাইনা কোন সমুদ্র স্নান। আমার কিছুই শোনার দরকার নাই। কিন্তু মন মানছে না। আমি খুব ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

আমিঃ এটা কি তোমার নিজের কোন কথা?

তুমিঃ আবার হাসির ইমো।

এবার আমি সরাসরি জানতে চাইলাম

আমিঃ তোমার সমস্যাটা কি?

তুমিঃ আমার কোন সমস্যা নাই

আমিঃ মানে শারীরিক সমস্যাটা কি?

তুমিঃ বললাম আর কি। নাহ তেমন কিছু না।

আমিঃ মিথ্যা বলো কেন?

তুমিঃ আরে ধূর

আমিঃ ডাক্তারদের কাছে কখনো মিথ্যা বলতে হয়না

তুমিঃ বাদ দাও

আমিঃ বলতে না চাইলে এককথায় বলে দাও আমি তোমাকে জানাতে চাচ্ছি না

তুমিঃ আমি তো মিথ্যা বলছি না। আমি সত্যি চেপে যাচ্ছি। বকা দাও কেন?

আমিঃ আমি আর একটা প্রশ্ন করবো না। একবার সাহস করে আমাকে বলে ফেলো যে তানভীর আমি তোমাকে জানাতে চাচ্ছি না।

এই কথাটা বলার পর আমার মনে হলো এটা কেন বললাম। এর মধ্যে কেমন অধিকার অধিকার গন্ধ খুঁজে পাচ্ছি। তুমি আমাকে জানাতে নাই পারো। আমি তোমাকে জোর করতে পারিনা। তুমি কিন্তু জানিয়েছিলে।

তুমিঃ আমার থেলাসেমিয়া জন্মের থেকে।

কথাটা শুনে আমি কিছু বলিনি। আমাদের দেশে অনেকের থ্যালাসিমিয়া আছে। মাইনর হলে তেমন একটা সমস্যা হয়না। তাই আমি শুধু জানার জন্যই বলেছিলাম, “তোমার থ্যালাসেমিয়ার টাইপ কি?”

তুমিঃ আমার আলফা থ্যালাসেমিয়া মেজর। এখন মাসে অন্তত ৩ বার ব্লাড নিতে হয়। আয়রন জমে লিভারের অবস্থা খারাপ। এই যে দুদিন নেটে আসিনি হাসপাতালে ছিলাম বলে। আগে থ্যালাসেমিয়া ইন্সটিটিউটে যেতাম ইদানিং ল্যাব এইডে যাই। এবার ব্লাড দিয়ে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। ডাক্তার তো বলে আমি এতদিন বেঁচে আছি কিভাবে।

আমি শুধু শুনে গেলাম। আমার কোন কিছু লেখার ছিলো না। তোমাকে কিছু বলারও ছিলো না। আমি ভাবছিলাম। ভাবছিলাম যে আমি পৌছে গেছি সেই সমুদ্রতীরে। আমার সামনে কষ্টের এক বিশাল সমুদ্র। এখন শুধু আমার জলে নামাটাই বাকি। গাঢ় নীল জলে পা ডুবিয়ে আমি বসে আছি। অসম্ভব ঠান্ডা হীমে আমি জমে যাচ্ছি। কিন্তু আমি উঠে আসতে পারছি না। হয়তো উঠতে চাচ্ছিনা। আমি ডাক্তার। আমি জানি এ রোগ সম্পর্কে। তবুও আমি ইন্টারনেট খোঁজা শুরু করলাম। কেন জানি না। আমি কি খুঁজছি আমি নিজেই জানি না। শুধু মনে হচ্ছে কোথাও কি বলা আছে এ রোগের লাইফ এক্সপেক্টেন্সি সর্বোচ্চ কত হতে পারে। কোন নতুন কিছু কি এসেছে যেটা আমি জানি না। আমি তোমাকে সাহায্য করার এক প্রবল ইচ্ছা অনুভব করছি। কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। মনে হচ্ছে তুমি ডুবে যাচ্ছো কষ্টের অতল জলে। হাত বাড়িয়ে আছো আমার দিকে কিন্তু আমি ধরতে পারছি না। কিছু না পেরে শেষে আমি তোমাকে লিখলাম, “তোমার নাম্বারটা দিবা?” তুমি নাম্বার দিলে। আমি তোমার সাথে সে রাতে প্রথম কথা বললাম। আমি শুনলাম তোমার কষ্টের কথা।

ভালোবাসা এমন কেন? তুমি জানতে তোমার শারীরিক অবস্থা। কিন্তু তবুও ভার্সিটি লাইফের প্রথম বছরে আসা সেই ভালোবাসার ডাক তুমি উপেক্ষা করতে পারোনি। বেঁচে থাকার প্রবল আকাঙ্ক্ষা, ভালোবাসা পাবার অদম্য ইচ্ছা তোমাকে নিয়ে গেছে তোমার সেই মানুষটার কাছে। তুমি নিজেকে অপরাধী ভাবো। হয়তো নিজেকে ঘৃণাও করো। কিন্তু আসলেই কি তোমার কোন দোষ ছিলো?? হয়তো সবাই বলবে তুমি কেন সত্যি লুকালে? যেমনটা এখন সে বলছে। কিন্তু আমি বিষয়টাকে এভাবে দেখিনা। অন্যসবার মত ভালোবাসার অধিকার, ভালোবাসা পাবার অধিকার তোমারও ছিলো। এখনো আছে। আমি শুধু সেই মানুষটাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। সেটা হলো, আচ্ছা যদি তোমার এমন কোন সমস্যা ভালোবাসার পরে হতো? তখন কি সে তোমাকে ছেড়ে চলে যেত?? আমি কি শুধু আমার ভালোবাসার মানুষটার ভালো সময়েই তার সাথে থাকবো? আর যখন তার কষ্টের সময় তখন কি তাকে ছেড়ে চলে যাবো? ভালোবাসা কি শুধু সুখের সময় উপভোগ করা?? তার কষ্টের সময় যখন তুমি তাকে নিজের সাধ্যমত সাহায্য করেছিলে তখন কি তুমি তাকে ছেড়ে যাবার কথা ভেবেছো?? তাকে নিজের বাড়িতে এনে নিজ হাতে রেধে খাইয়েছো। তোমার কাছ থেকেই শুনলাম সে এখন অনেক ভালো আছে। সে অন্যমেয়েকে ভালোবেসে নিজের জীবন সাজাতে ব্যস্ত। আর তুমি??? প্রতিদিন তার খবর নিচ্ছো, তার সাথে কথা বলছো। তুমি এখনো তাকে অবলম্বন করে বেঁচে আছো। তোমার লেখায় সে, তোমার ভাবনায় তার আনাগোনা, তোমার চিন্তা, স্বপ্নে, কল্পনায় সবখানে সেই মানুষ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু তার সব উপস্থিতিই তোমার জন্য অসম্ভব কষ্টের। এজন্য তোমার লেখাগুলো কষ্টের, তোমার মন খারাপের দিন গুলো সংখ্যায় অনেক বেশি।

তুমি এখন অপেক্ষা করে আছো সেই ভয়ংকর দিনটার জন্য। তোমার প্রতিটি মুহূর্ত তিলে তিলে নিঃশেষিত হবার কাব্য। তবুও তুমি হাসো। তুমি লিখে যাও তোমার মত করে। পৃথিবীর প্রতিটা সময় এখন তোমার জন্য অনেক অনেক বেশী মূল্যবান। কিন্তু এই বেঁচে থাকার মাঝেও যে তুমি মৃত গোলাপের মত। আমি পারিনি তাতে জীবনী শক্তি দিতে। সে যে আমার আয়ত্বের বাইরে। আমার ধরা ছোঁয়ার সীমানা অনেক ছোট।

আমি তোমার একটা নতুন নাম ঠিক করেছি। নামটা হলো তুলি। এখন থেকে তোমাকে তুলি বলে ডাকা হবে। তুমি চাইলেও ডাকা হবে, না চাইলেও হবে। নামটার ব্যাপক তাৎপর্য আছে। অন্তত আমার কাছে। তাই এখন থেকে তুমি আমার কাছে তুলি।কখনো সুখের আবার কখনো কষ্টের তুলি। জীবনের ক্যানভাসে আমি শেষ ছবিটা আকবো এই তুলি দিয়ে। নীল আর কালো সাথে থাকবে একটু আশার আলো। তৈরী হবে ধূপছায়া কোন এক গোধূলী বেলার কাব্য।

একটু সময় চাই। আর একটু সময়। মহাকালের কাছে ১ টি বছর কি খুব বেশী কিছু? তোমার শোনানো গানটা এখন প্রতিদিন শুনি। এটা যে আমার থিম সং হয়ে গেছে।

সকাল আসেনা, আয়না হাসেনা
জানলা খোলা মেঘ, সে ভালবাসেনা
না কিছু ভাবিনা, রোদ এল কিনা
স্নানের জলে গান, আমি না তুমি না
দিনের পাখিরা, ছুঁয়েছে ডানা
রাতের পরী আয়, ভুল ঠিকানা।।

……………………………আমি মনে মনে বলি, “একটু সময় দাও, একটু আশা দাও, একটু হাতটা ধরে বলো তুমি আছো অপেক্ষায়। আমি আনবো সে ভোর, আমি খুলবো সে দোর, আমি দেখাবো তোমায়, সে স্বপ্ন্বের সীমানা। একটি দিনের জন্যে হলেও তুমি হাসবে, একটি মুহূর্তের আবেগে তুমি ভালোবাসবে। আজ আমার এটাই প্রার্থনা, একটু সময়ের কামনা, চোখের একটু জলের দামে, আর কত বিরহ কেনা?”

আর আমি?? আমি যা খুজেছিলাম আমি তা পেয়েছি। কষ্টের সমুদ্রে আমি স্নান করেছি। এখন সেই কষ্টের সাথে আমার নিত্য ভাব বিনিময় হয়। প্রতিদিন আমি একবার করে ঘুরে আসি সেই সমুদ্রের তীর থেকে। কখনো বসে থাকি একা একা। কখনো তোমাকে নিয়ে। আমরা দুজনেই কষ্টের জলে ভিজি। আমাদের কষ্টের উৎস এক কিন্তু মোহনা ভিন্ন। তবুও আমরা অপেক্ষা করি রাত পোহাবার। ভোরের আলো দেখার অনেক ইচ্ছা আমাদের। কিন্তু আমাদের সে সকাল আর আসেনা।

প্রতিটি মুহুর্তে সময় পালিয়ে যাচ্ছে নিয়তির হাত ধরে। একটু একটু করে কাছে আসছে অনাকাঙ্ক্ষিত সত্য। সময়ের হাতে বন্দী আমার
ইচ্ছা ঘুড়ি। আমি মেলতে পারছি না স্বপ্নের ডানা। আমার সেই সকাল আর আসবে কিনা আমি জানিনা।

লেখক : তানভির ইসলাম