বদলে গেছে মাহিলাড়া ইউনিয়নবাসীর জীবনচিত্র – “তথ্য সেবা হেইডা আবার কি আগে বুঝিনায় এ্যাহন দেহি এহ্যানে সব আছে”

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ “তথ্য সেবা হেইডা আবার কি, আগে বুঝিনায়। তয় এ্যাহন দেহি এহ্যানে সব আছে। মোর পোলায় বিদাশে থায়ে। এই কেন্দ্রে আইসা অর ছবি দেহি আর মোরা অর লগে কথা কই। মোর পোলায়ও নাকি মোগো ছবি দেখতে পায়। এত সুযোগ-সুবিধা আগে কোতায় আছেলে”। কথাগুলো বলছিলেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রের সেবা পাওয়া জঙ্গলপট্টি গ্রামের আবুল কালাম। এ কথাশুধু তার একারই নয় একইভাবে জানালেন, ওই কেন্দ্রে তথ্য সেবা পাওয়া জঙ্গলপট্টি গ্রামের আবুল কালাম শিকদার, দাদন আলী শিকদার, মাহিলাড়া গ্রামের রবিন দাস, বেজহার গ্রামের আনোয়ার হোসেন, মিন্টু শিকদার, মনির হোসেন, সোহেল হাওলাদার, মজিবুর রহমান হাওলাদারসহ অনেকেই।

সময়ের ব্যবধানে রাতারাতি বদলে গেছে গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নবাসীর জীবন চিত্র। তারা এখন প্রতিদিন ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে নিচ্ছেন তথ্য প্রযুক্তির সেবা। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে ২০১০ সনের ১১ নবেম্বর দেশের ৪ হাজার ৫’শ ১টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয় ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশাল জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে এ সেবাকেন্দ্রের সুযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও কোন ইউনিয়নই এখন পর্যন্ত তেমন কোন সারাযোগাতে পারেনি। এরইমধ্যে মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তরুন চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর প্রচেষ্ঠায় খুব স্বল্প সময়ে তথ্য সেবা কেন্দ্রের সেবা দানের মাধ্যমে মাহিলাড়া ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্রটি পুরো জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ফলশ্র“তিতে জেলার ডিজিটাল মেলায় অংশগ্রহন করে চেয়ারম্যান পিকলু ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পদকও পেয়েছেন।

মাহিলাড়া গ্রামের আমিন মোল্লা জানান, এ তথ্য কেন্দ্রে মানুষের সবচেয়ে বেশি চাহিদা স্বাস্থ্য, কৃষি পরামর্শ, জমির পর্চা-খতিয়ান সংক্রান্ত তথ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরমসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি আবেদন ফরম নিতে আসেন অনেকেই। এছাড়া ই-মেইলে যোগাযোগ, ইন্টারনেটে কথা বলার পাশাপাশি প্রিয়জনের ছবি দেখতে পারছেন প্রবাসীদের স্বজনেরা। কম্পিউটার কম্পোজ, প্রিন্ট প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ফটোকপি, পরীক্ষার ফলাফল জানা নাগরিক সনদ, জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন এবং মোবাইল ব্যাংকিং, স্ক্যানার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের সুবিধা পাচ্ছেন এ তথ্য সেবা কেন্দ্রে।

তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, এখানে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন সেবা নিয়ে থাকেন। সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ইউনিয়নের মানুষকে সেবা দেয়া হয়। তাছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী ল্যাপটপ নিয়ে পরিষদের বাহিরে গিয়েও মানুষের সেবা দেয়া হয়। মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহবায়ক সৈকত গুহ পিকলু জানান, বাণিজ্যিকভাবে যে সেবা স্থানীয়রা পায় তার চেয়ে ৫০ ভাগ কম খরচে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে দেয়া হয়।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে অধিকাংশ ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছুটা ক্রটি বিচ্যুতি থাকলেও কেবলমাত্র মাহিলাড়া ইউনিয়নেই তথ্য সেবাকেন্দ্রের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। এর কারন হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, প্রথমে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার ফলেই ইউনিয়নবাসী এ সেবা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।