বরিশালে সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ ॥ দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ বরিশালের নদী, খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে যত্রতত্র ভাবে সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দেয়ায় পানি পচে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ নির্মূল হচ্ছে। নদী তীরবর্তী হাজার-হাজার মানুষ পচা দুর্গন্ধময় পানি ব্যবহার করে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কৃষকদের অসচেতনতার কারনে এমনটি ঘটলেও পাট পচানোর রিবন রেটিং পদ্ধতি ব্যবহারের ব্যাপারে জেলা কৃষি বিভাগের তেমন প্রচারনা নেই। বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে তেমন ভূমিকা নিতেও দেখা যাচ্ছে না। ফলে শত বছরের সেই সনাতন পদ্ধতিতেই পাট জাগ দিয়ে আসছেন কৃষকেরা। আর প্রতি পাট মৌসুমে পরিবেশ পড়ছে মারাত্মক বিপর্যয়ে।

বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, মুলাদী উপজেলার আড়িয়াল খাঁ, সন্ধ্যা নদীতে যত্রতত্রভাবে পাট জাগ দেয়া হয়েছে। অথচ কৃষি বিভাগ থেকে পাটের আঁশ ছড়াতে কৃষকদের মধ্যে রিবনার (রিবন রেটিং মেশিন) বিতরন করার কথা থাকলেও এখানকার কৃষকেরা এ পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এ পদ্ধতিটা হলো- পাট কাটার পর তা সরাসরি পানিতে জাগ না দিয়ে এ মেশিনের মাধ্যমে আঁশ ছড়িয়ে নিতে হবে। তারপর গাঁট বেঁধে মাটিতে গর্ত করে সেগুলো রেখে কিছু পানি ও ইউরিয়া প্রয়োগ করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় কিছুদিন পর পাটের আঁশ পচে গেলে তা ধুয়ে শুকাতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি বিভাগের নিয়োগকৃত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা রিবন রেটিং পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের কিছুই জানায়নি।
 
গৌরনদী উপজেলার গেরাকুল গ্রামের পাট চাষী ইব্রাহিম সরদার জানান, তারা রিবন রেটিং পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। পাট পচানোর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা জানা না থাকায় তারা আগের মতোই খাল-বিল কিংবা ডোবা-নালায় পাট জাগ দিচ্ছেন। আগৈলঝাড়ার মোল্লাপাড়া গ্রামের প্রবীর বিশ্বাস ননী জানান, নদী-খালে পাট জাগ দেয়ায় মাছের ক্ষতি হচ্ছে এবং এ পানি ব্যবহারের ফলে লোকজনের খোস-পাঁচড়া ও চুলকানি রোগ দেখা দিয়েছে। একই গ্রামের মৎস্যজীবী রবীন্দ্রনাথ হালদার বলেন, নদী ও খালে পাটজাগ দেয়ার ফলে পানি পচে রুই, কাতলা, পুঁটি, শিং, কৈ, মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে পানিতে ভেসে উঠছে। দীর্ঘদিন ধরে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত আড়িয়াল খাঁ, সন্ধ্যা, সুগন্ধা, কীর্তনখোলা ও পয়সারহাট নদীতে পাট জাগ দেয়ায় নদীগুলো প্রায় মৎস্যশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে হাজার-হাজার মৎস্যজীবী এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ব্যাপারে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ কফিল উদ্দিন বলেন, নদী ও খাল বিলে পাট জাগ দেয়া কৃষকদের পুরনো একটি অভ্যাস। কিন্তু এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হওয়ায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের রিবন রেটিং পদ্ধতির ব্যাপারে সচেতন এবং রিবনার বিতরন করা হচ্ছে। তবে কৃষকদের নতুন পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বরিশালে সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ ॥ দূষিত হচ্ছে পরিবেশ