ক্যান্সার আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধার আক্ষেপ – মৃত্যুর আগে পুত্রকে চাকুরিতে বহাল দেখতে চাই – প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

গৌরনদী ডটকম ॥ জীবনের শেষ মিনতি মৃত্যুর আগে চাকুরী হারা পুত্রকে পূনরায় চাকুরীতে বহাল দেখতে চান রণাঙ্গন কাঁপানো বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সাহেবেরচর গ্রামের ক্যান্সার আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়নাল হক (৬৫)। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ক্যান্সার আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধার আক্ষেপ - মৃত্যুর আগে পুত্রকে চাকুরিতে বহাল দেখতে চাই - প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনাসূত্রমতে, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের উদাসিনতা, গাফলতি ও ভুলের কারনে জালিয়াতি মামলার আসামি হয়ে আদালতসহ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মৃত্যুর পথযাত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়নাল হক চৌধুরী। পুলিশের চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তার অভাবী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম পুত্র সোহেল রানাকে (কং/৬১৮)। ফলে মহাবিপাকে পড়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের সদস্যরা। রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আজ তাদের দুবির্ষহ জীবন কাটছে। অর্থের অভাবে মুক্তিযোদ্ধা আয়নাল হকের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে।

মুক্তিযোদ্ধা আয়নাল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৯৭১ সনে দেশ মাতৃকার টানে জীবন বাঁজি রেখে শত্রুর মোকাবেলা করে ছিনিয়ে এনেছি স্বাধীনতার বিজয় পতাকা। তার বিনিময়ে কি পেলাম? কি অপরাধ আমার! মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ভুলের খেসারাত আজ আমাকে ও আমার পরিবারকে দিতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জীবনের মায়া ত্যাগ করে ১৯৭১ সনে ৯ নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিবহিনীতে যোগ দিয়ে প্রশিক্ষন নিতে ভারতে গমন করি। প্রথমে ভারতের টকিপুর থুবা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষন শেষে ফিফা উয়ুথ ক্যাম্পে হায়ার প্রশিক্ষন নিয়ে তিন মাস পর দেশে ফিরে নিজাম বাহিনীতে (৯ নং সেক্টরের গ্রুপ কমান্ডার) যোগদান করি। এরপর ওই বাহিনীর গ্রুপ কমান্ডার মোঃ কুতুব উদ্দিনের নেতৃত্বে পাক সেনাদের সাথে বিভিন্নস্থানে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করি।

মুক্তিযোদ্ধা আয়নাল হক জানান, ২০০৪ সনে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে একটি সাময়িক সনদপত্র প্রদান করা হয় (যার নং স-৫৫৬১৩)। সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বাংলাদেশ গেজেট বইতে তার ক্রমিক নং-৩৪৯০ (গৌরনদী উপজেলা) ও মুক্তিবার্তা নং-০৬০১১০০২৬৭। তিনি নিয়মিত ভাবে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতাও যথারীতি পেয়ে আসছেন (তার সম্মানী ভাতা বই নং-৫৪৯)। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে তার পুত্র সোহেল রানা ২০১০ সনের ৩০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধার কোঠায় পুলিশ কনষ্টবল পদে নিয়োগ লাভ করে। ওইসময় তার অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত সাময়িক সনদপত্র প্রদান করা হয়। চাকুরিতে নিয়োগ লাভের পর পুলিশ কর্র্তৃপক্ষ মুক্তিযোদ্ধা সনদটি যাচাই বাছাইয়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠালে তারা একই মন্ত্রণালয়ের প্রদানকৃত সনদটি জাল (ভূয়া) বলে উল্লেখ করে। বিষয়টি জানার পর আয়নাল হক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের দারস্থ হলে তারা তাকে পূনরায় একটি সাময়িক সনদপত্র প্রদান করে (যার নং স-১৭০৬৯৪)।

অপরদিকে গত ১২ জানুয়ারি (বরিশাল  পুলিশ লাইনে পুলিশ কর্মরত) সোহেল রানা ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আয়নাল হককে আসামি করে বরিশাল মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন জেলা পুলিশের আরও ওয়ান জাহাঙ্গীর হোসেন। যার প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধার পুত্র সোহেল রানাকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরিশাল মডেল থানার এস.আই আনিসুর রহমান সোহেল রানাকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করলেও তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা আয়নাল হকের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। যে কারনে মরনব্যাধি ক্যান্সারের রোগী হয়েও আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা আয়নালকে।

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার মোঃ কুতুব উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি অমানবিক। মুক্তিযোদ্ধা আয়নাল হক একজন প্রকৃত যোদ্ধা, সে আমার অধীনে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তিনি আরো বলেন, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রলণালয় ছিলো এক শ্রেনীর দালালদের দখলে। ওই সময় প্রতারনার মাধ্যমে আয়নালকে জাল সনদ প্রদান করা হলেও বিষয়টি তিনি বুঝতে পারেননি।

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আয়নাল হক আজ বড়ই হতাশ। অসহায় মুক্তিযোদ্ধা আয়নাল হকের শেষ মিনতি “মরার আগে আমার পুত্রের চাকুরির পূর্ণবহাল দেখে যেতে চাই, নইলে আমি মরেও শান্তি পাবোনা” এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।