সিয়াম সাধনার মাস – পবিত্র মাহে রমযান

মুত্তাকী হওয়ার প্রশিক্ষণ দিতে ঘুরে ফিরে প্রতি বছরই সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমযান আসে আমাদের দুয়ারে। সিয়ামের শাব্দিক অর্থ বিরত থাকা। ফার্সী ভাষায় এটাকে রোজা বলা হয়। রোজা একটি ফরজ ইবাদাত। দ্বিতীয় হিজরীতে রোজা ফরজ করা হয়েছে। রোজা ফরজ হওয়ার ঘোষণা দিয়ে আল্ল¬াহতায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার (আল-বাকারাহ : ১৮৩) এ রমযান মাসের পরিচয়ে আল্লাহ বলেন, রমযান হলো সেই মাস যে মাসে মানবজাতির জন্য হেদায়েত ও সুস্পষ্ট পথ নির্দেশক এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য নির্ণয়কারী কুরআন নাযিল করা হয়েছিল। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারাই এ মাস পাবে তারা যেন অবশ্যই সিয়াম পালন করে। (আল-বাকারাহ : ১৮৫)। রাসুলুল্ল¬াহ সাল্ল¬ালহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি ঃ (১) এ মর্মে সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্ল¬াহ ছাড়া আর সত্যিকার কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম আল্ল¬াহর তায়ালার রাসুল, (২) সালাত কায়েম করা, (৩) যাকাত দেয়া, (৪) রমজান মাসের সিয়াম পালন করা এবং (৫) সক্ষম ব্যক্তির হজ্ব আদায় করা। (বুখারী ও মুসলিম) রমজান চান্দ্রবর্ষের একটি অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসের ফজিলত অপরিসীম। রমজান হল কুরআন নাযিলের মাস। আল্ল¬াহ তায়ালা বলেন, ‘‘রমযান মাস-যারমধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকেদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’’ (আল-বাকারা : ১৮৫) সিয়াম যেমন এ মাসে, কুরআনও নাযিল হয়েছে এ মাসেই। ইতিপূর্বেকার তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিলসহ যাবতীয় আসমানী কিতাবও এ মাহে রমজানেই নাযিল হয়েছিল। এ মাসেই জিবরীল আলাইহিস সালাম নাবী সাল্লাল্ল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল¬ামকে কুরআন শোনাতেন এবং তার কাছ থেকে তেলাওয়াত শুনতেন। আর রাসূলুল¬াহ সাল্ল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম জীবনের শেষ রমযানে পূর্ণ কুরআন দু’বার খতম করেছেন (মুসলিম)। এ মাসের সিয়াম পালন জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম। নাবী সাল্লাল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ঈমান আনলো, সালাত কায়েম করলো, যাকাত আদায় করলো, রমজান মাসে সিয়াম পালন করলো তার জন্য আল্ল¬াহর ওপর সে বান্দার অধিকার হলো তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেয়া (বুখারী)। ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হল সিয়াম। আর এ সিয়াম পালন করা হয় এ মাসেই। আল্লাহতায়ালা বলেন : হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার (আল-বাকারাহ : ১৮৩)। রমযান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। হাদীসে এসেছে ‘‘যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়  (মুসলিম)। আর এজন্যই এ মাসে মানুষ ধর্ম-কর্ম ও নেক আমলের দিকে অধিক তৎপর হয় এবং মসজিদে মুসল্ল¬ীদের ভিড় অধিকতর হয়। এ রমযান মাসের লাইলাতুল কদরের এক রাতের ইবাদত অপরাপর এক হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। অর্থাৎ ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি সাওয়াব হয় এ মাসের ওই এক রজনীর ইবাদতে। আল্ল¬াহ তায়ালা বলেন, ‘‘কদরের একরাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাতে ফেরেশতা আর রূহ (জিরীল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে দুনিয়ায় অবতীর্ণ হয়। (এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর শান্তি-তা ফযর উদয় হওয়া পর্যন্ত থাকে।’’ (সূরা ক্বদর : ৪-৫)। নাবী সাল্ল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম বলেছেন, ‘‘এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল সে মূলতঃ সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো।’’  পুরো রমজান মাস জুড়ে দোয়া কবুল হয়।  রাসুলুল্ল¬াহ সাল্ল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল¬াম বলেছেন, ‘‘এ রমযান মাসে প্রত্যেক মুসলমান আল্ল¬াহর সমীপে যে দোয়াই করে থাকে-তা মঞ্জুর হয়ে যায়। এ মাসে মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্ল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম বলেছেন, মাহে রমযানের প্রতিরাত ও দিনের বেলায় বহু মানুষকে আল্লাহতায়ালা জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দিয়ে থাকেন এবং প্রতিটি রাত ও দিনের বেলায় প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া-মুনাজাত কবুল করা হয়ে থাকে। এ মাস জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস। রাসুলুল্ল¬াহ সাল্ল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম বলেছেন, এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহবান করতে থাকে যে, হে কল্যানের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথ চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জানো ?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্ল¬াহতায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন (তিরমিযী)। এ মাস ক্ষমা লাভের মাস। এ মাস পাওয়ার পরও যারা তাদের আমলনামাকে পাপ-পঙ্কিলতা মুক্ত করতে পারলো না রাসুল সাল্ল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম তাদেরকে ধিক্কার দিয়ে বলেছেন, ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় ধুসরিত হোক যার কাছে রমযান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না-তিরমিযী। (বি: দ্র: লেখার বাকি অংশ পাবেন আগামি সংখ্যায়) চলবে…