দু’নেত্রীর উদ্দেশে নির্মল সেন : দেশকে বাঁচান

বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট, বাম রাজনীতির পুরোধা, মুক্তিযোদ্ধা নির্মল সেন দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের দু’নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন-আপনারা সংলাপের মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশকে বাঁচান। এ দেশের জনগনকে বাঁচান। এ দেশের গনতন্ত্রকে রক্ষা করুন। এ দেশের জনগন পুনরায় ১/১১ মতো ঘটনা দেখতে চায় না। গত ৩ আগস্ট গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দীঘিরপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে ৮২তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তা কেবল দু’নেত্রীর আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে দু’নেত্রীরই সমঝোতার মনোভাব থাকতে হবে। কেক কাটার মাধ্যমে নির্মল সেনের জন্মদিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মিজানুর রহমান, প্রকৌশলী আবুল কালাম, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হুদা, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও পিনজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার জন্মদিন উপলক্ষে নির্মল সেনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা, গনমাধ্যম কর্মীরা নির্মল সেনকে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জন্মদিন অনুষ্ঠানে আগত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রবীন এই সাংবাদিক  তার জীবনের শেষ ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন-আমার জীবনের শেষ ইচ্ছা নিজ বাড়িতে একটি মহিলা কলেজ স্থাপন করা। তিনি কলেজ স্থাপনের জন্য সরকারসহ দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহবান করেন। সাংবাদিক নেতাদের উদেশ্য নির্মল সেন বলেন-আপনারা দলবাজী বন্ধ করুন। ঐক্যবদ্ধ হোন। এ দেশের সাধারন জনগন আপনাদের ঐক্য দেখতে চায়। আমি গ্রামের বাড়ি থাকলেও প্রতিদিন আপনাদের খবর নেই। সাগর-রুনি হত্যাকে কেন্দ্র করে আপনারা ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করছেন শুনে খুশি হয়েছি। আমি চাই আপনাদের এই ঐক্য অটুট থাকুক। সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবী করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক এই সভাপতি বলেন-স্বাধীনতার পরে এ দেশের যত সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে তার কোনটারই বিচার হয়নি। সাগর-রুনিসহ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যতো সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে তার প্রতিটি হত্যার বিচার চাই। বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট, বাম রাজনীতির পুরোধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্মল সেন ১৯৩০ সনের ৩ আগষ্ট গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত ও মাতার নাম লাবন্য প্রভা সেন গুপ্ত। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নির্মল সেন পঞ্চম। নির্মল সেনের পিতা  সুরেন্দ্র নাথ সেন গুপ্ত কোটালীপাড়ার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনষ্টিটিউশনের গনিত শিক্ষক ছিলেন। এর আগে সুরেন্দ্র নাথ সেন গুপ্ত ঢাকার ইষ্ট বেঙ্গল ইনষ্টিটিউটে শিক্ষকতা করতেন। দেশ বিভক্তির পরে নির্মল সেনের পিতা মাতা অন্য ভাই বোনদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতা চলে যান। জন্মভূমির প্রতি অকুন্ঠ ভালবাসার কারনে তিনি (নির্মল সেন) দেশেই থেকে যান। নির্মল সেন বড় হয়েছেন ঝালকাঠী জেলায় তার পিসির বাড়িতে। তিনি ঝালকাঠি জেলার কলসকাঠী বিএম একাডেমী থেকে ১৯৪৪ সনে ১৪ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করেন। পিসির বাড়িতে যাওয়ার আগে নির্মল সেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জিটি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণীতে এক বছর লেখা পড়া করেছেন। এছাড়া তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও মাষ্টার্স পাস করেন। নির্মল সেনের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় “ভারত ছাড়ো” আন্দোলনের মাধ্যমে স্কুল জীবন থেকে। কলেজ জীবনে তিনি অনুশিলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আরএসপিতে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন তিনি শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি গণতান্ত্রীক বিপ¬বী পার্টির সভাপতি। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্মল সেনকে জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটাতে হয়েছে। ১৯৬৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মধ্যে দিয়ে নির্মল সেন তার সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। তার পর দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিষয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। লেখক হিসেবেও নির্মল সেনের যথেষ্ট সুনাম রযেছে। তার লেখা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ, মানুষ সমাজ রাষ্ট্র, বার্লিন থেকে মষ্কো, মা জন্মভূমি, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই, আমার জবানবন্ধী হচ্ছে উল্লেখযোগ্য। নির্মল সেন ২০০৩ সনে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এরপর দেশে বিদেশের অনেক চিকিৎসার পরে বর্তমানে তিনি গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। বর্তমানে তার সময় কাটে রেডিও শুনে। চোখে কম দেখার কারনে তাকে পত্রিকা পড়ে শুনাতে হয়। নির্মল সেনের জীবনের শেষ ইচ্ছে তার বাড়িতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা। নির্মল সেনের ভাতিজা কংকন সেন বলেন, এ বছর আমরা পারিবারিক ভাবেই জেঠুর (নির্মল সেনের) জন্মদিন পালন করা হয়েছে।