Menu Close

গড়ে পৌরসভা ভাঙ্গে সড়ক বিভাগ – গৌরনদীতে যাত্রী ছাউনী না থাকায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ

নিজস্ব সংবাদাতা ॥ বরিশালের গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড ও টরকী বাসষ্ট্যান্ডে যাত্রী ছাউনী না থাকায় রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়ে প্রতিদিন হাজার-হাজার বাস যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীদের সমস্যা লাঘবের উদ্যোগ নিচ্ছেনা কেউ।

জানা গেছে, দীর্ঘ ১৬ বছর পূর্বে গৌরনদী পৌরসভার উদ্যোগে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডসহ বিভিন্নস্থানে তিনটি যাত্রী ছাউনি নির্মান করা হয়েছিল। কিন্তু একযুগ যেতে না যেতেই বিনা কারনে তা গুড়িয়ে দিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এ যেন ভাঙ্গা গড়ার খেলা। বর্তমানে গৌরনদীতে কোন যাত্রী ছাউনী না থাকার কারনে  দুরপাল্লা ও লোকাল বাসের অপেক্ষায় যাত্রীদের ঘন্টার পর ঘন্টা  রোদ ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাসষ্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। মহাবিপাকে পড়েন নাইট কোচের যাত্রীরা। সূত্রমতে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ পিএমপি প্রকল্পের আওতায় গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড ও টরকী বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় দুরপাল্লা ও লোকাল বাসষ্ট্যান্ডে বিপুল অর্থ ব্যয়ে চারটি ছোট টিনসেডের যাত্রী ছাউনী নির্মাণ করা হয়েছিলো।

২০০৭ সনের ১৫ নবেম্বর সিডরের আঘাতে ওই চারটি যাত্রী ছাউনীর টিন উড়ে যায়। পরবর্তীতে যাত্রী ছাউনীগুলো পূর্নরায় মেরামত বা সংস্কার করা হয়নি। ওই যাত্রী ছাউনিগুলো এখন চালাশুন্য অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

১৯৯৬ সনে ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গৌরনদী পৌরসভার উদ্যোগে গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে যাত্রী ছাউনী “কিছুক্ষণ” নির্মাণ করেছিলো।

১৯৯৮ সনে গৌরনদী পৌরসভার অর্থায়নে আশোকাঠী বাসষ্ট্যান্ড ও টরকী বাসষ্ট্যান্ডে আরো দুটি পাকা যাত্রী ছাউনী নির্মাণ করা হয়েছিলো।

২০০৮ সনে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের দু’পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ওই সময় বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ বুলডোজার দিয়ে গৌরনদী ও টরকী বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনী গুড়িয়ে দেয়। এলাকাবাসীর দাবি উপেক্ষা করে ওই সময় সড়ক বিভাগ গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনী ”কিছুক্ষণ” গুড়িয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে গৌরনদী ও টরকী বাসষ্ট্যান্ডে কোন যাত্রী ছাউনী না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাস যাত্রীদের। বরিশাল নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে আসা দুরপাল্লার ও লোকাল বাস গুলো গৌরনদীর ওপর দিয়ে ১২টি রুটে যাতায়াত করে আসছে।

বরিশালসহ দক্ষিনাঞ্চল থেকে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, যশোর, কুষ্টিয়া, বেনাপোল, মেহেরপুর, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনাসহ বিভিন্ন জেলায় ছয় শতাধিক দুরপাল্লার বাস যাতায়াত করে আসছে। এছাড়া গৌরনদীর ওপর দিয়ে ভূরঘাটা, পয়সারহাট ও মাদারীপুরে গড়ে প্রতিদিন ৭০টি লোকাল বাস যাতায়াত করে। এ সব বাসে যাতায়াতের জন্য হাজার-হাজার বাস যাত্রীকে গৌরনদী ও টরকী বাসষ্ট্যান্ডে এসে প্রতিদিন রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বর্ষা মৌসুমে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃষ্টি ও ঝড় শুরু হলে অপেক্ষমান বাস যাত্রীদের আশ্রয়ের কোন স্থান থাকেনা। যাত্রী ছাউনীর অভাবে গৌরনদী ও টরকী বাসষ্ট্যান্ডে প্রতিদিন হাজার হাজার বাস যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

অপরদিকে গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে বাস কাউন্টারগুলো মহাসড়কের ফুটপাট দখল করে নির্মিত হওয়ায় জীবনের ঝুকি নিয়ে মহাসড়কের ওপর দিয়ে লোকজনকে চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। এ সমস্যা দীর্ঘদিনের হলে ও লাঘব হচ্ছেনা। এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ শাহআলম খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাসষ্ট্যান্ডগুলো পৌর সদরে অবস্থিত তাই বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষের। পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান হারিছের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের তিনটি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে যাত্রী ছাউনী নির্মাণ অপরিহার্য।

ইতিপূর্বে সড়ক বিভাগের জমিতে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সবগুলো গুড়িয়ে দেয়ায় একদিকে যেমন সরকারি অর্থ অপচয় হয়েছে, অন্যদিকে জনগনের ভোগান্তি বেড়েছে। তাই যাত্রী ছাউনি নির্মানের ব্যাপারে তিনি সকলের সাথে আলাপ আলোচনা করেই পূর্নরায় সিদ্ধান্ত নিবেন বলেও উল্লেখ করেন।