দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-রুটে ঈদের দশদিন থাকছেনা রোটেশন প্রথা ॥ অগ্রীম টিকেট বিক্রি শুরু আজ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে ঈদের দশদিন থাকছেনা কোন রোটেশন প্রথা। আগামী ১৪ আগস্ট ঢাকা সদরঘাট থেকে ঈদের পরেরদিন পর্যন্ত নিয়মিত সার্ভিসের পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌ-রুটে বিশেষ সার্ভিস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লঞ্চ মালিক সমিতি। সে অনুযায়ী চারটি নিয়মিত লঞ্চের পাশাপাশি বিশেষ সার্ভিসে আরো চারটি লঞ্চ চলাচল করবে। যাত্রীদের চাপ বুঝে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকা থেকে এবং ঈদের একদিন পর বরিশাল থেকে সর্বোচ্চ ১১টি লঞ্চ চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অজুহাত দেখিয়ে বিশেষ সার্ভিস চলাকালে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হবে। এদিকে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআইডব্লিউটিসি ১৪ আগস্ট থেকে বিশেষ সার্ভিস শুরুর সিদ্ধান্ত নিলেও স্টিমার সংকটের কারনে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ সংস্থার ৬টি স্টিমারের মধ্যে চারটিই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ঈদে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিনগুন অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ এ স্টিমারগুলো সামলাতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অপরদিকে নারীর টানে বাড়ি ফেরা দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-রুটের যাত্রীদের সুবিধার্থে আজ বুধবার থেকে অগ্রীম টিকেট বিক্রি শুরু হবে।

লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও সুন্দরবন লঞ্চের মালিক সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, অতিসম্প্রতি লঞ্চ মালিক সমিতির সভায় আগামি ১৪ আগষ্ট ঢাকা থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-পথে ঈদের বিশেষ সার্ভিস চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঈদের আগেরদিন পর্যন্ত সদরঘাট থেকে নিয়মিত চারটি লঞ্চের সাথে বিশেষ চারটিসহ মোট আটটি লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। যাত্রীদের চাপ অনুযায়ী লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আর এজন্য দুই থেকে তিনটি লঞ্চ পন্টুনে প্রস্তুত রাখা হবে। একইভাবে ঈদের পরবর্তী সাতদিন বরিশাল আধুনিক নৌ-বন্দর থেকে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো জানান, যাত্রীদের সুবিধার্থে আজ বুধবার থেকে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-রুটের অগ্রীম টিকেট বিক্রি শুরু করা হবে।
সূত্রমতে, সারাবছর সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করলেও বিশেষ সার্ভিস চলাকালে পুরো ভাড়া আদায় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে মালিক সমিতির সভায়। বরিশাল-ঢাকা নৌপথে সরকার নির্ধারিত দুই শয্যার কক্ষ ভাড়া ১ হাজার ৯৬০ টাকা, এক শয্যার কক্ষ ৯৫০ টাকা এবং ডেক যাত্রী ভাড়া ২৪০ টাকা। বছরের দুটি ঈদ পর্ব উপলক্ষে বিশেষ সার্ভিস ছাড়া অন্যদিনগুলোতে যাত্রীদের কাছ নেয়া হয় দুই শয্যার কক্ষ ১ হাজার ৬০০ টাকা, এক শয্যার কক্ষ ৮’শ টাকা এবং ডেক ভাড়া ২’শ টাকা। সুরভী লঞ্চ কোম্পানীর পরিচালক রিয়াজ-উল-কবির জানান, বিশেষ সার্ভিস চলাকালে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে খালি লঞ্চ ঢাকায় নিয়ে যাওয়ায় জ্বালানী ব্যয় দ্বিগুন হয়। এছাড়াও অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিবছরই বিশেষ সার্ভিস চলাচালীন তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করেন। এদিকে বিআইডব্লিউটিসি আগামী ১৪ আগস্ট থেকে ঈদের পরবর্তী সাতদিন ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠী-হুলারহাট-মোড়লগঞ্জ পর্যন্ত বিশেষ সার্ভিস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্টিমার সংকটের কারনে তাদের এ উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। সূত্রমতে, স্টিমার বহরের ছয়টি জাহাজের মধ্যে সোনারগাঁও ও শেলা গত এক বছর ধরে ডর্কইয়াডে রয়েছে। অপর চারটি জাহাজের মধ্যে পিএস লেপচা ও টার্ন গত জুলাই মাসে দুই বার করে যাত্রী নিয়ে মাঝ নদীতে বিকল হয়ে যায়। ঈদের অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ এ জাহাজ দুটি সামলাতে পারবে কিনা তা নিয়ে শংকা রয়েছে। পিএস মাহসুদ ও অষ্ট্রিচ-ই এখন বিআইডব্লিউটিসি’র ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের শেষ ভরসা। বিআইডব্লিটিসি’র উপ-মহাব্যবস্থাপক (যাত্রী) এমএ মতিন জানান, জরুরী মেরামত শেষে পিএস মাহসুদ গত ৫ আগস্ট ডর্কইয়ার্ড থেকে বুঝে নেয়া হয়েছে। শেলা যাত্রী পরিবহন উপযোগী কিনা তা নিশ্চিতের জন্য ২/১ দিনের মধ্যে ওই জাহাজটি পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে। সোনারগাঁও নিয়ে কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।