আইনী সহায়তার দায়িত্ব নিলো লিগ্যাল এইড – অন্ধকার গলি থেকে দু’মাস পর পালিয়ে রক্ষা পেল বরিশালের এক কিশোরী

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ চাকুরির প্রলোভনে অভাবী পরিবারের এক কিশোরী কন্যাকে ফুঁসলিয়ে ঢাকায় নিয়ে আটক করে দেহ ব্যবসা করাতে বাধ্য করে একটি প্রতারক চক্র। অবশেষে দু’মাস বন্ধী দশায় থাকার পর কৌশলে অন্ধকার গলি থেকে অতিসম্প্রতি পালিয়ে আসে ওই কিশোরী। ঘটনাটি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা  ইউনিয়নের প্রত্যন্ত নাথারকান্দি গ্রামের।

এ ঘটনায় পাচার হওয়া কিশোরী ঝুমুর বাদি হয়ে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে প্রতারক পুতুলসহ ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ওই প্রতারক চক্র ও তাদের ভাড়াটিয়া লোকজনে মামলা উত্তোলনের জন্য কিশোরী ঝুমুর ও তার অসহায় পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাননাশের হুমকি দিয়ে আসছে। এদিকে আদালতের নির্দেশে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসিকে নির্দেশ দিলেও মামলার তদন্তকারী অফিসার এস.আই শহিদুল ইসলাম মামলাটি নিয়ে নানাতালবাহা শুরু করেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মামলাটির আইনী সহায়তা দেয়ার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠন লিগ্যাল এইড্রে জেলা শাখার নেতৃবৃন্দরা।  

উজিরপুর উপজেলার নাথারকান্দি গ্রামের দিনমজুর কার্তিক বিশ্বাসের সু-শ্রী কিশোরী কন্যা ঝুমুর বিশ্বাস (১৬) জানায়, তাদের অভাবী সংসারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে ঢাকায় ভালো চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখায় একই গ্রামের ধীরেন হালদারের কন্যা পুতুল হালদার। একপর্যায়ে তার (ঝুমুরের) বাবা-মাকে ফুঁসলিয়ে রাজি করে পুতুল। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ এপ্রিল ঝুমুরকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঝুমুর আরো জানায়, ঢাকার গাজীপুর এলাকার একটি বাসায় নিয়ে পুতুল তাকে আটক করে রাখে। সেখানে দু’সপ্তাহ আটক করে রাখার পর রাতে অজ্ঞাতনামা এক নারী ও এক পুরুষ এসে জোরপূর্বক তাকে (ঝুমুরকে) মাইক্রোবাসে তুলে চোখ ও মুখ বেঁধে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঝুমুর তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানায়, পুতুল এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাদের কাছে ঝুমুরকে বিক্রি করে দিয়েছে। এরপর ঝুমুরকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর জন্য শারিরিক নির্যাতন শুরু করা হয়। অনেক অনুনয় বিনয় করেও ওই গ্র“পটির কাছ থেকে রেহাই মেলেনি কিশোরী ঝুমুরের। একপর্যায়ে দুইমাস বন্ধী দশায় থাকার পর এক খদ্দেরের সহযোগীতায় কৌশলে অন্ধকার গলি থেকে সে পালিয়ে আসে। এ ঘটনায় ঝুমুর বাদি হয়ে গত ২৮ জুন বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে প্রতারক পুতুল হালদারসহ ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ২১৫/১২ ইং)। আদালত উজিরপুর থানা অফিসার ইনচার্জকে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়।

মামলার বাদি ঝুমুরের পিতা দিনমজুর কার্তিক বিশ্বাস অভিযোগ করেন, মামলা দায়ের পর থেকে আসামিরা মামলা উত্তোলনের জন্য তাকে ও তার কিশোরী কন্যাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে। বিষয়টি মামলার তদন্তকারী অফিসার এস.আই শহিদুল ইসলামকে জানানো সত্বেও তিনি রহস্যজনক কারনে আসামিরা প্রকাশ্যে ঘোরা ফেরা করলেও তাদের গ্রেফতার করছেন না। কার্তিক বিশ্বাসের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন হারতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুনীল চন্দ্র বিশ্বাস, সাবেক ইউপি সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, ইউপি সদস্য ফারুক তালুকদার, হারতা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অমল মল্লিকসহ অনেকেই। মানবাধিকার সংগঠন লিগ্যাল এইড্রে বরিশাল জেলা শাখার সম্পাদিকা প্রতিমা সরকার বলেন, কিশোরী কন্যা ও তার পরিবারের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কিশোরী ঝুমুরের দায়ের করা মামলায় আইনী সহায়তা দেয়ার জন্য তারা সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছেন।