আগৈলঝাড়ায় রেনু পোনার চাষ করে ৫’শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ডিম থেকে পোনা মাছ উৎপাদন ও বিক্রি করে প্রায় ৫’শতাধিক পরিবার আজ স্বাবলম্বী হয়েছে। এসব পোনা মাছ বিক্রির জন্য প্রতিনিয়ত হাট বসে উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের গুপ্তের হাট বাজারে। প্রতিদিন মাছের পোনা ক্রয় করতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা আসেন এ হাটে। প্রতিদিন কাঁক ডাকা ভোরে জমে উঠে এ পোনা মাছের বাজার।

যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে উন্নতজাতের মাছের ডিম সংগ্রহ করে উপজেলার মৎস্য ব্যবসায়ীরা পুকুরে চাষাবাদ করে ডিম থেকে রেনু ফোটায়। এসব রেনু ২ থেকে ৫ ইঞ্চি লম্বা হলেই ব্যবসায়ীরা বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। এখানকার রেনু পোনা মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, মনোসেক্স তেলাপিয়া, নাইলোনটিকা, কারফু, পাঙ্গাস, চায়নাপুঠি, টাটকিনাসহ প্রায় ৫০ প্রজাতের বিভিন্নজাতের পোনা মাছ। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বেড়ে যায় পোনা মাছের চাহিদা।

উপজেলার বিভিন্ন ফার্মের মালিক ও ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গুপ্তের হাট বাজারে প্রায় ৩৫ বছর থেকে মাছ বিক্রি হয়ে আসছে। দিন দিন এ বাজারের পোনা মাছ বিক্রির সুনাম দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ছড়িয়ে পরায় প্রতিনিয়ত এখানে বেড়ে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। মৎস্য ফার্ম মালিক আব্দুস সোবাহান খান জানান, এ উপজেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক মৎস্য চাষীরা বিভিন্ন নালা, ডোবা ও পুকুরে পোনা মাছের চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। গুপ্তের হাট থেকে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পাইকাররা ট্রাক, মিনিট্রাক, নসিমন, ভ্যানযোগে মাছের পোনা ক্রয় করে বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজার ও গ্রামাঞ্চলে বিক্রি করে জিবীকা নির্বাহ করে আসছেন। গুপ্তের হাট বাজার থেকে স্বল্পমূল্যে পোনা মাছ ক্রয় করে অন্য বাজারে নিয়ে তা অধিক মূল্যে বিক্রি করে খুচরা ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন লাভবান। স্বল্প পুজিতে অধিক লাভবান হওয়ায় নিন্ম আয়ের পুরুষেরা ক্রমেই অন্য পেশা ছেড়ে এ পেশার দিকে ঝুঁকে পরছেন।

বাজার কমিটির সদস্য জালাল উদ্দিন ঘরামী বলেন, ২৬ বছর যাবৎ তিনি এ বাজারে মাছের পোনা বিক্রি করে আসছেন। এ বছর মাছের খাবারের মুল্যে বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর মাছের পোনার দাম কিছুটা বেড়েছে। মাছের খাবারের মূল্য কমে গেলে দামও কমে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পোনা মাছ বিক্রেতা মহিউদ্দিন খলিফা জানান, এ অঞ্চলের মাছের পোনার চাহিদা মেটানোর পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি এসব মাছের পোনা সরবরাহ করে আসছেন। আরেক বিক্রেতা মনির সরদার জানান, এ বাজারে পোনা মাছ বিক্রির জন্য প্রতিনিয়ত শতাধিক ফার্ম মালিকেরা তাদের উৎপাদিত মাছের পোনা নিয়ে আসেন। ফার্ম মালিকেরা জানান, এ বাজারটি এখন পোনা মাছ বিক্রির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে দেশে পরিচিতি লাভ করেছে। এ বাজারে প্রতিনিয়ত ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক, মিনিট্রাক, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে পাইকাররা পোনা মাছ ক্রয়ের জন্য আসেন। এ বাজারে প্রতিদিন সকালে গড়ে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার পোনা মাছ বিক্রি হয়।

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম জানান, গুপ্তের হাটের পোনা মাছ বিক্রির বাজারটি আগৈলঝাড়ার মডেল। ওই বাজারে পোনা মাছ বিক্রি করে আগৈলঝাড়া উপজেলার ৫’শতাধিক পরিবার আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আগৈলঝাড়ায় রেনু পোনার চাষ করে ৫’শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী