৪ পুলিশসহ ২৫ জন আহত – পুলিশের এসআইসহ ৬ জন গ্রেফতার – বরিশালে দু’স্কুল ছাত্রীকে উত্যক্তের ঘটনায় রনক্ষেত্র – হাসপাতালে হামলা চালিয়ে বখাটেদের ভাংচুর

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালের গৌরনদী পৌরসভার মেয়রের নিজ এলাকা দিয়াশুর মহল্লার দু’স্কুল ছাত্রীকে উত্যক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে। হামলায় গুরুতর আহত স্কুল ছাত্রীদের পরিবার ও নিকট আত্মীয়-স্বজনরা গৌরনদী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে তাদের চিকিৎসায় বাঁধা দেয়া হয়। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন পুলিশের উপস্থিতিতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ ৫টি কক্ষে ব্যাপক ভাংচুর করে। হামলা-পাল্টা হামলায় দু’পুলিশ অফিসার ও চার পুলিশ সদস্যসহ উভয়পক্ষের ২৫ জন আহত হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের চাপের মুখে থানা পুলিশ প্রতিপক্ষের পুলিশ অফিসার, পুলিশ সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য, বিএনপি নেতাসহ একই পরিবারের ছয়জনকে চিকিৎসা না দিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় গ্রেফতার করে তড়িঘরি করে শুক্রবার সকালে বরিশাল আদালতে প্রেরন করেছে। এ নিয়ে এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

এলাকাবাসী, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, দিয়াশুর মহল্লার তোতা আকনের কন্যা পিঙ্গলাকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী তামান্না আক্তার (১৩) ও তার ভাগ্নি মনি আক্তার (১৪) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের একটি দোকানে জুস কিনতে যায়। এ সময় পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সস্পাদক টুকু মল্লিকের পুত্র আরিফ মল্লিক ও তার সহযোগী জুয়েল মল্লিক স্কুল ছাত্রীদের উত্যক্ত করে। তামান্নার চাচাতো ভাই তুষার এর প্রতিবাদ করে। এ নিয়ে উভয়েরমধ্যে বাকবিতান্ডা হয়। এরজের ধরে রাত ১০টার দিকে তামান্নার পিতা তোতা আকনকে টুকু মল্লিক ও তার সহযোগীরা কুপিয়ে জখম করে। এনিয়ে উভয়গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে টুকু মল্লিকের শশুর জহুর আলী খান, শাশুড়ি আফরোজা বেগম, শ্যালক কবির খান, আবেদ মল্লিক ও প্রতিপক্ষ তোতা আকনের চাচা পুলিশের কনস্টবল রশিদ আকন, রহিম আকন, ভাই টিপু আকন, জুয়েল আকন আহত হয়। এসময় টুকু মল্লিকের শশুড় জহুর আলী খানের বসত ঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

আহত পুলিশ কনস্টবল রশিদ আকনের কন্যা নিপু বেগম জানান, আহতদের নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়ার সময় গৌরনদী থানার সম্মুখে পৌঁছলে যুবলীগ নেতা টুকু মল্লিক ও তার সহযোগীরা তাদের বাঁধা দেয়। পুলিশের সহয়তায় তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে পৌঁছার পর পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের সবাইকে পূর্ণরায় মারধর করে রক্তাক্ত জখম করা হয়। তারা তার চাচা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আঃ রব আকনের বাম হাত ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।

গৌরনদী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মরত চিকিৎসক নিখিল চন্দ্র সরকার জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে বারোটার দিকে আহতদের চিকিৎসা দেয়ার সময় টুকু মল্লিকের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা আহত রোগী ও তাদের আতœীয় পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস.আই) খলিলুর রহমান আকনের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করে। অবস্থা বেগতি দেখে হাসপাতালের প্রধান ফটক দুটির কলাবসিবল গেট তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে টুকু মল্লিকের লোকজন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালিয়ে গেটের তালা ভেঙ্গে হাসপাতালের মধ্যে প্রবেশ করে জরুরি বিভাগসহ চিকিৎসকদের ৫টি কক্ষের দরজা জানালা ব্যাপক ভাংচুর করে। গৌরনদী থানা পুলিশ হামলাকারীদের বাঁধা দিলে তাদের ওপরও হামলা চলে। ওই হামলায় গৌরনদী থানার এসআই সরোয়ার, কনষ্টবল আলতাফ হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা জিয়াসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। হাসপাতালের ভর্তি রোগী মোঃ মহসিন ও আফছার উদ্দিন জানান, এ সময় গোটা হাসপাতাল এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রোগীরা ভয়ে দিগ¦বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা ভয়ে আত্মগোপন করেন।

খলিলুর রহমান আকন থানা হাজতে বসে অভিযোগ করেন, পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করলেও ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপে আহত অবস্থায় তাকে (খুলনা কোতোয়ালী থানার এস.আই মোঃ খলিলুর রহমান আকন), তার বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আঃ রব আকন, তার সহদর পুলিশ কনষ্টবল আঃ রশিদ আকন, রহিম আকন, প্ত্রু তোতা আকন, টিপু আকনকে গ্রেফতার করেছে।

গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে তাদের গ্রেফতার করে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছে।