বরিশাল-ভোলা রুটে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ – কীর্তনখোলা নদীর গ্রাসে ফেরীঘাটসহ ৩০টি দোকান বিলীন

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বরিশালে কীর্তনখোলা নদীরগ্রাসে সদর উপজেলা চরকাউয়া ফেরীঘাটের ৩০টি দোকানসহ ফেরীঘাট ও চরকাউয়া আহমেদিয়া দাখিল মাদ্রাসার স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে কমপক্ষে অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে চরকাউয়া জামে মসজিদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও বাস মালিক সমিতির ভবন। ফেরীঘাট নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় বরিশাল-ভোলা-লক্ষীপুর রুটের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পরেছে। আকস্মিক ভাবে নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয় শনিবার রাতে এবং গতকাল বরিবার ভোরে। আকস্মিক ভাবে নদী ভাঙ্গনের ফলে নদীর তীরবর্তী মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পরেছে। অনেকেই বসত ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সন থেকে কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়। তবে ১৯৮৪ সন থেকে এ ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গনের ফলে চরকাউয়া, চরবদনা এলাকার প্রায় দেড় হাজার পরিবার ইতোমধ্যে নিঃস্ব হয়ে পরেছেন। রাক্ষুসি নদী গিলে নিয়েছে ওই এলাকার কয়েক হাজার একর আবাদি জমি। স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ লাল মিয়া ও চরকাউয়া আহমেদিয়া দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সম্পাদক কেরামত আলী জানান, ইতিপূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে নদীর তীরবর্তী চরকাউয়া এলাকার জিরো পয়েন্ট থেকে আপ এবং ডাউনে দুই’শ মিটার এলাকায় ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এরমধ্যে মাদ্রাসা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কিছু ব্লক ফালানোর ব্যবস্থা করা হলেও ডাউনে (যেখানে বর্তমানে ভাঙ্গছে) ওই এলাকায় কোন কাজ করা হয়নি। সর্বশেষ বরাদ্দের ৭০ লক্ষ টাকার মধ্যে মাত্র ২০ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে। বাকি টাকা সংশ্লিষ্টরা আত্মসাত করেছে বলেও এলাকাবাসী  অভিযোগ করেন। যার ফলে চরকাউয়া ফেরিঘাট এলাকায় শনিবার রাত থেকে পূর্ণরায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। অব্যাহত এ ভাঙ্গনে সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী সোহেল আহম্মেদ, নিরব হোসেন, খলিলুর রহমানসহ অনেকেই জানান, শনিবার গভীর রাতে আকস্মিক ভাবে নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়। ওইদিন রাতের মধ্যেই রাক্ষুসি নদী ৩০টি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানসহ ফেরীঘাট ও চরকাউয়া আহমেদিয়া দাখিল মাদ্রাসার স্থাপনা গিলে নেয়। কীর্তনখোলা নদীর চরকাউয়া ফেরীর খালাসী মোঃ ইউনুচ আলী জানান, ভাঙ্গন শুরু হওয়ার পর শনিবার মধ্যরাতে কীর্তনখোলা নদীর ফেরি অন্যত্র সড়িয়ে নেয়া হয়েছে। ফলে বরিশাল-ভোলা-লক্ষীপুর সড়কে বর্তমানে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ট্রাক ড্রাইভার মোঃ হারুন-অর রশিদ জানান, ভাঙ্গন শুরু হওয়ার পর নদীর ফেরী অন্যত্র সরিয়ে নেয়ায় শনিবার ভোর রাত থেকে তারা পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছেন। এতে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। খবর পেয়ে গতকাল রবিবার সকালে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হারুন-অর রশিদ ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও স্থানীয়দের আশ্বস্ত করেন।

সূত্রমতে, বিগত পাঁচ দশক ধরে কীর্তন খোলা নদীর ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলেও আজোবধি ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী কোন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়নি। স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নদী ভাঙ্গুলী পরিবারসহ স্থানীয়রা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।