তারে আমি চোখে দেখিনি

খোকন আহম্মেদ হীরা, গৌরনদী (বরিশাল) থেকেঃ ১২ জুন রাত আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে আমার সেলফোনটি বেঁজে উঠল। তখন আমি আমাদের বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে’র সম্মুখে (আশোকাঠী বাসষ্ঠ্যান্ডে বসে) কয়েকজন বন্ধু মিলে জমিয়ে আড্ডা করছিলাম। ফোনটি উঠিয়েই দেখি আমার শ্রদ্ধেয় বড়ভাই বাংলাদেশ গ্রামীণ সাংবাদিক সংগঠনের বরিশাল বিভাগীয় কমিটির সভাপতি মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিয়ার সেল ফোনের নাম্বার। ফোনটি রিসিফ করার সাথে সাথেই গিয়াস ভাই বলে উঠলেন- হীরা তুমি কি জান, তোমাদের জনকন্ঠের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শম্পা আপা তার স্বামীসহ সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। আমি হতবাক ! বললাম-আপনি কোথায় এবং কিভাবে খবর পেলেন। সে বললো আমি বাসায় চ্যানেল আইর সংবাদে কিছুক্ষন হলো দেখলাম। তার সাথে কথা বলার মাঝেই আমার দু’চোখ দিয়ে অশ্র“ ঝরে পরছিলো। দ্রুত ফোনের লাইনটি বিছিন্ন করে ফোন দিলাম জনকন্ঠের ষ্টাফ রির্পোটার আমার শ্রদ্ধের দাদা বিভাষ বাড়ৈকে। দাদা আবেগআপ্লুত কন্ঠে ফোনটি রিসিভ করে বললো হীরা তাহলে তুমিও খবর পেয়েছো। আর বুঝতে বাকি থাকলো না। দাদার কাছ থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে ঘটনার বিবরন শুনলাম। দাদা (বিভাষ বাড়ৈ) ভাড়ি কন্ঠে কথা বলছিলেন। মনে হচ্ছিলো দাদার দু’চোখ দিয়েও যেন অশ্র“ ঝড়ছে। আমি দ্বিতীয় ফোনটি করলাম আমাদের জনকন্ঠের দাউদকান্দির নিজস্ব সংবাদদাতার শামীম রায়হানের কাছে। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে বললাম খবর শুনেছেন। আমাদের শম্পা আপা আর নেই। ঘাতক বাস তার ও তার স্বামীর জীবন কেড়ে নিয়েছে। তিনিও আবেগআপ্লুত হয়ে পরলেন। বললেন হীরা ভাই আপনি কি বলতেছেন। আর কথা বলতে পারলান না ফোনটি কেটে দিলাম।
মনে হলো ওইদিন (শনিবার) দুপুরে এটিএন নিউজে সড়ক দূর্ঘটনার খবরটি দেখেছিলাম। খবরে বলা হয়েছিলো দম্পত্তি নিহত। ফলে শম্পা আপার খবরটি পাইনি। প্রসঙ্গত মাত্র গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে শম্পা আপা অফিসের টেলিফোন নাম্বার দিয়ে প্রথমে আমাকে ও কিছুক্ষন পর দাউদকান্দির শামীম রায়হানের কাছে ফোন দিয়ে একটি আশার বানি শুনিয়েছিলেন। পরবর্তীতে দাউদকান্দির শামীম রায়হান ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিলেন হীরা ভাই প্রশাসনিক কর্মকর্তা শম্পা আপা আমাকে ফোন দিয়েছে আপনাকেও কি ফোন দিয়েছিলো। সে থেকেই দাউদকান্দির শামীম রায়হানের সাথে শম্পা আপাকে নিয়ে আমার বেশ আলাপ হতো। শম্পা আপাকে আমি কখনো চোখে দেখিনি-তবে দু’বার তার সাথে আমার ফোন আলাপ হয়েছিলো। এ দু’বারেই আপু আমাকে তার ছোট ভাইয়ের চেয়ে বেশি আপন করে নিয়েছিলো। আপা খুব মিষ্টি কন্ঠে বলেছিলেন, হীরা আপনার কাগজপত্র পাঠিয়ে দিন। আপনার নিয়োগপত্র পাঠিয়ে দেয়া হবে। দীর্ঘ ৬ বছর জনকন্ঠে কাজ করার পর এটাই ছিলো আমার সর্বপ্রথম সু-সংবাদ। আর এ সু-সংবাদটি আমাকে দিয়েছিলেন শম্পা আপা। কয়েকদিন পরেই কুরিয়াযোগে আমার নিয়োগপত্রটি পাঠিয়ে দেয়া হলো। সাথে ছিলো আপার হাতের লেখা নিয়োগ সংক্রান্ত একটি চিঠি। নিয়োগপত্র ও চিঠি হাতে পাওয়ার পর আপাকে ফোন করে জানালাম। আপা বলেছিলো-হীরা ঢাকা আসলে দেখা করবেন। এরপর আমার ঢাকাও যাওয়া হয়নি আর আপার স্নেহও আর পাওয়া হয়নি। আরতো কোনদিন দেখাও হবে না আপার সাথে। ঘাতক বাস তাকেসহ তার স্বামী ও তার গর্ভের সন্তানকে কেড়ে নিয়েছে চিরতরে। আপার হাতের লেখা চিঠিটাই এখন আমার কাছে কেবলই স্মৃতি হয়ে রয়েছে। আমি তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। একই সাথে ঘাতক বাস চালক ও হেলপারকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। অদক্ষ বাস চালকদের কারনে শম্পা আপার মতো আর যেন অকালে কেহ প্রান না হারায় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের কাছে জোড় দাবি করছি।