সালিশের নামে ফতোয়া – বরিশালে গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন ফতোয়াবাজ সাবেক কাউন্সিলর গ্রেফতার

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ স্বামীকে তালাক দেয়ার পর পুনরায় বিয়ে করে বসবাস করায় এক গৃহবধুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার অভিযোগে ফতোয়াবাজ সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ আউয়াল মোল্লাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার গভীর রাতে বরিশাল নগরীর ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা আউয়াল মোল্লাকে (৫০) গ্রেফতার করে কাউনিয়া থানা পুলিশ। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ রহিমা বিবি (৪০) মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ধূপখোলারচর গ্রামের মৃত ওহাব আলী হাওলাদারের কন্যা। নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া মোহাম্মদীয়া মসজিদ সংলগ্ন হারুন মিয়ার ভাড়াটিয়া বাসায় তালাক দেয়ার পর পূনরায় বিয়ে করা কাশিপুর গনপাড়া এলাকার মৃত রোকনউদ্দিন বালীর পুত্র নুরুল ইসলাম বালীর সাথে রহিমা বসবাস করে আসছিলো।

নুরুল ইসলাম বালী জানান, নগরীর কাশিপুর গনপাড়া এলাকার রহিম মাঝির সাথে রহিমা বিবির প্রথম বিয়ে হয়েছিলো। রহিমা তার প্রথম স্বামী রহিমকে তালাক দেয়ার পর তাকে (নুরুলকে) দ্বিতীয় বিয়ে করেন। অতিসম্প্রতি তাদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রহিমা তাকে (নুরুলকে) তালাক দেয়। কয়েকদিন পর রহিমা তার ভুল বুঝতে পেরে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে পূনরায় তাকে (নুরুলকে) বিয়ে করেন। রহিমার প্রথম স্বামী রহিম মাঝি বিষয়টি সাবেক কাউন্সিলর আউয়াল মোল্লাকে জানায়। গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে এ নিয়ে কাউনিয়া সাধুর বটতলা এলাকার সৈয়দ মজিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানকার প্রধান সালিশ ছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর আউয়াল মোল্লা। এছাড়াও সেখানে আরো ৮/৯ জন সালিশ উপস্থিত ছিলেন। সালিশের রায়ে রহিমা বিবিকে তার প্রথম স্বামীর সাথে হিল্লে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষনা করা হয়। এতে রাজি না হওয়ায় সালিশরা রহিমা ও নুরুলকে মারধর করেন। একপর্যায়ে সালিশের স্থান থেকে নুরুলকে বের করে দেয়া হয়।

রহিমা বিবি অভিযোগ করেন, সালিশকারীরা তার গোপনাঙ্গে কচু দেয়ার জন্য নিয়ে আসে। বাঁধা দেয়ার চেষ্ঠা করলে তাকে মারধর করতে করতে উলঙ্গ করা হয়। একপর্যায়ে কচু দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সাবেক কাউন্সিলর আউয়াল মোল্লা তার তলপেটে সজোরে লাথি মারেন। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরন শুরু হয়। তখন একটি সাদা কাগজে জোরপূর্বক রহিমার স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে ওই রাতেই প্রথম স্বামী রহিম মাঝির ভাই মন্নান মাঝির নগরীর কাশিপুর স্কুল এন্ড কলেজের পাশের বাড়িতে আটক করে রাখা হয়। সেখান থেকে কৌশলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অসুস্থ্য অবস্থায় রহিমা পালিয়ে আসেন।

মহানগরীর কাউনিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হেমায়েল কবির জানান, মঙ্গলবার রাত বারোটার দিকে নুরুল ইসলাম বালী ও তার অসুস্থ্য স্ত্রী রহিমা বিবি থানায় হাজির হয়ে উল্লেখিত ঘটনায় ৫ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওইদিন গভীর রাতেই অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি সাবেক কাউন্সিলর আউয়াল মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের স্বার্থে অন্যসব আসামিদের নাম প্রকাশ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এসআই হেমায়েল কবির। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন, আটক করে মারপিট ও জোড়পূর্বক অলিখিত সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, মামলার অপর আসামিদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্ঠা চলছে। গ্রেফতারকৃত সাবেক কাউন্সিলর ও আ’লীগ নেতা আউয়াল মোল্লা ঘটনাটি পত্রিকায় না লেখার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।