কামরুল ইসলাম সজল – বরিশাল-১ আসনে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মেরুকরন শুরু হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে পাল্টে যেতে পারে এ আসনের পুরাতন প্রার্থীদের সব হিসেব নিকেশ। নতুন নেতৃত্বে আসার পুরো সম্ভাবনা ভর করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা কামরুল ইসলাম সজল - বরিশাল-১ আসনে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণএ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল এর ওপর। ইতোমধ্যে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গৌরনদী-আগৈলঝাড়াবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সজলের টাঙ্গানো পোস্টার ও ফেস্টুন বিএনপির পুরাতন নেতাদের মাঝে আতংক লাগিয়ে দিয়েছে।

নব্বই দশকে গাজী কামরুল ইসলাম সজল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে ভূমিকা রেখে সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেন। ওই সময় তিনি মহসিন হলের জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাত্রনেতা পরবর্তীতে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। ২০০১ সনের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পাটি ভেঙ্গে দু’টি হলে তিনি নাজিউর রহমান মঞ্জুর গ্রুপে যোগদান করেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোটের শরীক দল হওয়ায় সজল বিএনপির উর্ধতন নেতৃবৃন্দের সাথে পরিচিত হন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে দলে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ফলশ্রুতিতে তিনি সুপ্রীমকোর্ট জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে তিনি বিএনপির বরিশাল জেলা উত্তর কমিটিতে সহ-সভাপতির পদ লাভ করেন।

বরিশাল-১ আসনে সজল ব্যাপক চেনামুখ না হলেও অল্পদিনে তিনি দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে নামে পরিচিতি পেয়েছেন। গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের কাছে ক্রমেই সজল গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছেন। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে এ দু’উপজেলার সাংবাদিকদের সম্মানে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। দলের চেয়ারপার্সন তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন জিয়াউর রহমানের আস্থাভাজন ব্যক্তি ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ওরফে ছরু কাজী। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছরু কাজীকে নেতৃত্ব দিলেও তিনি কখনও এমপি হতে পারেননি।

বিএনপি থেকে এ আসনে সত্তর দশকে প্রথম এমপি হন প্রয়াত সুনীল কুমার গুপ্ত। পরে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগদান করায় আশি ও নব্বই দশকে কাজী গোলাম মাহবুব পুর্নরায় দলের নেতৃত্ব পান। ১৯৯৬ সনে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মরহুম ইউনুস খানের হাত ধরে বামপন্থী দল থেকে বিএনপিতে আসা তরুণ ছাত্রনেতা জহির উদ্দিন স্বপন নেতৃত্ব নিয়ে এ আসন থেকে ২০০১ সনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর দলের নেতৃত্বে আসেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান। তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন। এরপর থেকে এ আসনে বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান। নেতৃত্বের কোন্দলে দু’উপজেলায় দল ত্রিধা বিভক্ত হয়ে পরে। এর একটি গ্রুপের নেতৃত্ব রয়েছেন-বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। তিনিও এ আসন থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়াও ইতালীর রোম বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এম.এ আজাদ মোল্লা আগামি সংসদ নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। এরপরেও গৌরনদী ও আগৈলঝাড়াবাসী সজলকে ঘিরে হিসেব-নিকেশ করতে শুরু করায় বিএনপির পুরাতন নেতাদের মাঝে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।