বরিশালের ২০টি হাউজিং কোম্পানীকে লাল তালিকাভূক্ত করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর – মামলার প্রস্তুতি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বরিশাল অঞ্চলের ২০টি হাউজিং কোম্পানীকে লাল তালিকাভূক্ত করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তালিকাভুক্ত কোম্পানীর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে অধিদপ্তর। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এ সকল হাউজিং কোম্পানীকে পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে নোটিশ প্রদানের পর তারা গত ৫ মাসেও ছাড়পত্র গ্রহন না করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এদিকে এসব হাউজিং কোম্পানী পরিবেশ অধিদপ্তরকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অবৈধভাবে জমির প্লট কেনা বেচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পত্রিকায় ও টিভিতে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্লট বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে লাল তালিকাভুক্ত ওইসব কোম্পানী। আর এদের চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে প্লট ক্রয় করে গ্রাহকরা প্রতারিত হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের বরিশাল সদর ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এলাকায় ঢাকার নামিদামী হাউজিং কোম্পানী ফসলি জমির বায়না করে দখল নিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্লটবিক্রি করে আসছে। এসব জমির মধ্যে সরকারি খাসজমিও রয়েছে। নামে বেনামে ভূমি অফিস থেকে লিচ বা ভূয়া ডিগ্রী দেখিয়ে এক শ্রেনীর ভূমিদস্যূরা ওই জমি হাউজিং কোম্পানীর কাছে বিক্রি করেছে। হাউজিং কোম্পানীগুলো জমির দখল নিয়েই সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে টিভি বা পত্রিকায় চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে তা বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী হাউজিং ব্যবসার ক্ষেত্রে জমি ক্রয়ের পর পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে জমি বিক্রি ও ভবন নির্মান করতে পারবে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল অবৈধ আবাসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে তদন্তে নামেন। ওই দলের তদন্তে এসব বিষয় বেরিয়ে আসার পরই ওই সকল কোম্পানীকে নোটিশ প্রদান করা হয়। গত ৫ মাসেও কোম্পানীগুলো ছাড়পত্র পেতে আবেদন করেনি। ওই সকল কোম্পানীর অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধের জন্যও তাদের নোটিশ প্রদান করা হয়। কোম্পানীগুলো হচ্ছে গ্রীন ডেল্টা হাউজিং কোম্পানী লিমিটেড, গ্রীন ডেল্টা টুরিজম লিমিটেড, ওসান গ্র“প লিমিটেড, হোম টাউন প্রপার্টিজ লিমিটেড, প্রবাসী বাংলা ডেভলপমেন্ট লিমিটেড, কুয়াকাটা ডিজিটাল টাউন, কোয়ালিটি রিয়েল এস্টেট, সিকদার রিয়েল এস্টেট লিমিটেড এবং বরিশাল সদরের ৭টি প্রতিষ্ঠানকে একই কারনে গত ২৮ আগষ্ট নোটিশ প্রদান করা হয়। ৭টি হাউজিং কোম্পানীগুলো হচ্ছে রূপাতলী এলাকার যুননুরাইন রিয়েল স্টেট, কাশিপুরের কাজী হাউজিং প্রকল্প, আলেকান্দার অগ্রণী হাইজিং প্রকল্প, সিএন্ডবি রোডের বোরাক হাউজিং এন্ড ডেভেলপিং, দেশ প্রপার্টিজ, সাউথ গ্রিণ হোল্ডিং লিমিটেড, স্পার্ক ল্যান্ড এন্ড আবাসন প্রকল্প।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস জানান, তদন্তে দেখা গেছে, হাউজিং কোম্পানীগুলো ফসলী জমি দখল করে আবাসন প্রকল্পের সাইনবোর্ড ঝুঁলিয়েছে। এরা কোথাও জলাশয় আবার কোথাও পুকুর-ডোবা ভরে প্লট বিক্রি ও বহুতল ভবন নির্মাণের পায়তারা করছে। পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকায় এ অঞ্চলের ২০টি আবাসন প্রকল্পকে চিহ্নিত করে কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়ার পর তারা তা গ্রাহ্য না করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, এসব আবাসন প্রকল্প চালু করার আগে অবস্থানগত ছাড়পত্র না নেয়ায় পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ১২ ধারা ভঙ্গ করায় প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে ৫ বছর কারাদন্ড অথবা ১ লাখ টাকা অর্থ দন্ডের বিধান রয়েছে। নোটিশে আরো উল্লে¬খ করা হয়েছে, যথা সময়ে নির্দেশনা পালন না করলে ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।