যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে নির্যাতন করায় – স্বামীর পরিবারকে একঘরে

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ প্রেম করে বিয়ে করার খেসারত গুনতে হচ্ছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার দক্ষিণ গৈলার বরইতলা গ্রামের আইউব আলী সরদারের কন্যা মেনেছা বেগমকে। এককালের প্রলোভন দেখানো প্রেমিক পরবর্তীতে পাষন্ড স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের দাবিকৃত এক লক্ষ টাকা যৌতুক দিতে না পারায় মেনেছার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। একপর্যায়ে শিশু কন্যাসহ মেনেছাকে তাড়িয়ে দেয়া হয় তার বাবার বাড়িতে। এ ঘটনায় স্থানীয় সালিশ বৈঠকে মেনেছার যৌতুকলোভী স্বামী ও তার পরিবারকে গত একবছর ধরে সমাজের লোকজনে একঘোরে করে রেখেছে। তাতেও টনগ নড়েনি একঘোরে হয়ে থাকা পরিবারটির।

অসহায় মেনেছা বেগম অভিযোগ করেন, পাশ্ববর্তী বাড়ির রব সরদারের পুত্র শামীম সরদারের সাথে প্রেমের সম্পর্কের একপর্যায়ে ২০০৮ সনের ১ জানুয়ারি ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করে। এরইমধ্যে তার স্বামী শামীম ও তার পরিবারের লোকজনে মেনেছার বাবার কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা যৌতুক আনার জন্য তার ওপর চাপ প্রয়োগ করে। এতে সে অপরাগতা প্রকাশ করায় প্রায়ই তাকে শারিরিক নির্যাতন করা হতো। সর্বশেষ ২০১১ সনের ১ এপ্রিল শামিম ও তার পরিবারের লোকজনে অমানুষিক নির্যাতনের একপর্যায়ে মেনেছা ও তার শিশু কন্যা শামীমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় ভাবে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে মেনেছার ও তার শিশু কন্যাকে ঘরে তুলে নেয়ার জন্য শামিমকে চাপপ্রয়োগ করা হয়। সালিশদের এ রায় অমান্য করায় ২০১১ সনের ৬ অক্টোবর শামীম ও তার পরিবারকে সমাজের লোকজনে একঘোরে করার ঘোষনা করেন। তার পরেও দীর্ঘদিন গৃহবধূ মেনেছা তার স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে বিভিন্নস্থানে ধর্ণা দিয়েও কোন সুফল পাননি। অবশেষে উপায়অন্তুর না পেয়ে ওই বছরের ২১ নবেম্বর মেনেছা বেগম বাদি হয়ে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে যৌতুকলোভী শামিম সরদার, তার পিতা রব সরদার, মা খাদিজা বেগম, ভাই ছিদ্দিক সরদারকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য আগৈলঝাড়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করেন।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা খানম যৌতুকের দাবিতে মেনেছা বেগমের ওপর তার স্বামী শামিম সরদার ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের সত্যতা স্বীকার করে জানান, আদালতের নির্দেশ পেয়ে গত ১৭ জানুয়ারি বাদি, স্বাক্ষী ও বিবাদীদের স্বাক্ষ্য গ্রহন করে গত ১৬ এপ্রিল আদালতে লিখিত ভাবে রির্পোট পেশ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, স্বাক্ষ্য প্রমাদের ভিত্তিতে মেনেছার দায়ের করা মামলার সত্যতা রয়েছে। গৃহবধূ মেনেছা বেগম আরো অভিযোগ করেন, বর্তমানে মামলা উত্তোলনের জন্য আসামি ও তাদের ভাড়াটিয়া লোকজনে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি অব্যাহত রেখেছে। অসহায় গৃহবধূ মেনেছা তার তিন বছরের শিশু কন্যা শামীমার পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে বর্তমানে বরিশালের আদালতপাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মেনেছা তার স্বামীর অধিকার ও শিশু কন্যা শামীমার পিতৃ পরিচয়ের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।