গৌরনদী পৌর মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষন – টরকী বন্দর সংলগ্ন সুন্দরী মহল্লার দেড়’শ পরিবার পানি বন্দি

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই প্রথম শ্রেনীর বরিশালের গৌরনদী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে পৌরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে পানি বন্ধী হয়ে পরেছেন পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র টরকী বন্দর সংলগ্ন সুন্দরী মহল্লার দেড় শতাধিক পরিবার। ওইসব পরিবারের একটু বৃষ্টিতেই গত সাতদিন ধরে পৌর এলাকার সুন্দরী মহল্লায় হাঁটু সমান পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এভাবেই পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে পূজা অর্চনা করছে দু’পূজারীদুর্ভোগের যেন শেষ নেই। জরুরি ভিত্তিতে জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষা পেতে পৌরবাসী গৌরনদী পৌরসভার মেয়রের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, সুন্দরী মহল্লার পানি বন্ধীদের দুর্ভোগ। পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের ওই এলাকায়। ওই মহল্লার ঐতিহ্যবাহী রাধা গোবিন্দ লোকনাথ মন্দির, কালী মন্দিরের ভক্তরা হাটু সমান পানি পেরিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে পূজা অর্চনা করে আসছে। এছাড়া পানি বন্ধী পরিবারের শিশু-কিশোরদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে হাটু সমান পানি পেরিয়ে জলাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অধিকাংশ শিশুদের পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টিতেই ওই এলাকায় হাঁটু সমান পানি জমে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। ভুক্তভোগীরা জরুরি ভিত্তিতে জলাবদ্ধতার কবল থেকে রেহাই পেতে পৌর মেয়রের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এছাড়াও পৌরসভার প্রেসক্লাবের সম্মুখে, গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে, গৌরনদী বন্দর সড়কের সিসিডিবি’র সম্মুখের সড়ক, গৌরনদী ও টরকী বন্দরে প্রবেশের প্রধান সড়ক, টরকী বন্দর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে আধা বর্গকিলোমিটার এলাকা, দর্ক্ষিণ বিজয়পুর সাংবাদিক সুশীল জয়ধরের বাড়ির চারপাশে আধা বর্গকিলোমিটার এলাকা, টরকী বন্দর ছাগল হাট, টরকী বন্দর হাঁস-মুরগীর হাট, টরকী বন্দর পোস্ট অফিসের সম্মুখের সড়ক, উত্তর বিজয়পুর গ্রামের সাংবাদিক মরহুম আব্দুর রাজ্জাক ফকিরের বাড়ির চারপাশে আধা বর্গকিলোমিটার এলাকাসহ উত্তর বিজয়পুর গ্রামের খান ভবনের চারিপার্শ্বে একটু বৃষ্টিতেই পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। এছাড়াও পৌর মেয়রের নিজ ওয়ার্ড (৮নং ওয়ার্ডের) গেরাকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পুরো বর্ষা মৌসুমে পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। টরকী বালিকা বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব শাহজাহান শরীফের বাসাসহ দেড় শতাধিক বাসার আঙ্গিনায় বর্ষায় হাঁটু পানি জমে যায়। এখানে কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায়  বর্ষার পানি সরতে পারে না। ওই এলাকার চারপাশে পাকা সড়ক রয়েছে। এ সড়কের নিচ দিয়ে কালভার্ট ও ড্রেন না থাকায় পানি সরতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর দুলাল হোসেনের কাছে ওই এলাকার বাসিন্দারা অসংখ্যবার ধর্না দিয়েও কোন সুফল পায়নি। উওর বিজয়পুর গ্রামের মরহুম আবদুর রাজ্জাক ফকিরের বাড়ির চারপাশে আধাবর্গ কিলোমিটার এলাকা বর্ষার পানিতে ডুবে থাকে। খাল ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভার দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে আশ্বাস ছাড়া সমস্যা সমাধানের কোন ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি। টরকী বন্দর গুড়পট্টি সড়ক থেকে সাবেক পৌর কাউন্সিলর এইচ.এম জয়নাল আবেদীনের বাসা পর্যন্ত সড়ক বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকে। একটু বৃষ্টিতেই ওই সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংরক্ষনের অভাবে পানি নিস্কাশন হতে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘন্টা সময় লাগে। ড্রেনগুলো থাকে ময়লা আবর্জনায় ভর্তি। টরকী বন্দর-সাউদের খালটি পালরদী নদীর সংযোগস্থল ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে প্রভাবশালীরা, সংরক্ষনের অভাবে ড্রেনের পানি সরে যেতে ২ থেকে ৩ ঘন্টা  সময় লাগে। এ খালটি ভরাট হওয়ার কারনে পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় পৌরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জানা গেছে, টরকী বন্দর, বেকিনগর ও গৌরনদী বন্দরসহ পৌর এলাকায়  ১ হাজার ৫শ’ ফুট ড্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। সুন্দরদী, লাখেরাজ কসবা, দক্ষিন পালরদী, চর গাধাতলী, উত্তর বিজয়পুর, দক্ষিন বিজয়পুর, টিকাসার, গেরাকুল এলাকার প্রধান সমস্যাই হচ্ছে জলাবদ্ধতা। সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই পৌর সদরের গৌরনদী গার্লস হাই স্কুল এন্ড কলেজ মাঠ, নীলখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ, আল-হেলাল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও আল-হেলাল রেজিষ্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ, গেরাকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠসহ গোটা স্কুল চত্বর পানিতে ডুবে গিয়ে  হাঁটু সমান পানি জমে যায়। ফলে শিক্ষার্থীদের হাঁটু সমান পানির মধ্যদিয়েই স্কুলে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। ফলে স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনেক সময় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

জলাবদ্ধতায় পৌরবাসীর দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে গৌরনদী পৌরসভার মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান হারিছ জানান, বিগত আমলে অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেন, ঘরবাড়ি নির্মাণের কারনে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে পৌরবাসীর ভোগান্তি লাঘবে প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণ ও স্কুলের মাঠ ভরাটের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।