সেতু চাইনা, চাই শরীর হতে ক্যান্সার দূরীকরণ

ওয়াচডগ ॥ এক সময়ে পদ্মা সেতুর বাস ছিল কল্পরাজ্যে। কল্পরাজ্য এমন এক রাজ্য যার দেশ নেই, সীমানা নেই, রাজা নেই, বাদশাহ নেই। এ রাজ্যে সেতু গড়তে অর্থ লাগে না, বিশ্বব্যাংকের মত শক্তিধর ব্যাংকের দরকার হয়না, প্রয়োজন পরেনা আবুল মশিউরদের আশাহত করার কোন উপলক্ষ। চাইলে এ রাজ্যে আজীবন সুখের নদীতে সাতার কাটা যায়। পাকিস্তানি সামরিক স্বৈরশাসক আর তাদের সেবাদাস ২২ পরিবারের দলন মথন হতে মুক্তি পাওয়ার Corruption and Padma Bridge in Bangladeshজন্যে এ দেশের মানুষ এক সময় স্বপ্ন দেখতো। সময়ের প্রবাহে সে স্বপ্ন বাস্তবের মুখ দেখেছে। তার জন্যে প্রয়োজন হয়েছে মানুষের অদম্য ইচ্ছা আর রক্ত। দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের সবাই পদ্মাসেতু নিয়ে গত ৪১ বছর স্বপ্ন দেখায় ব্যস্ত ছিল এমনটা নয়। অর্থনীতি নিয়ে যারা অলীক স্বপ্ন দেখতে অভ্যস্ত তাদের মগজে স্বপ্নের পাশাপাশি সেতুর বাস্তবতা হয়ত আনাগোনা করে থাকবে। স্বপ্ন ও বাস্তবতা জীবনেরেই অংশ। এই দুই সত্ত্বার চিরন্তন লড়াইয়ের অপর নামই বোধহয় পরিপূর্ণ জীবন।
{loadposition bodybottom1}পদ্মা অথবা যমুনা নদীতে সেতু হতেই হবে এবং তা আমাদের জীবদ্দশায় দেখে যেতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নিয়ে আমরা জন্মে নেইনি। এমন কোন শর্ত দিয়ে রাজনীতিবিদদেরও ভোটের মাঠে পাঠাইনি। ৪১ বছর পার করে দিয়েছি পদ্মাসেতু ছাড়া। আরও ৮২ বছর পার করতেও আসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সভ্যতার চাকায় যতদিন গতি থাকবে মানুষ চলতে থাকবে, আপন প্রয়োজনেই সে স্বপ্নকে বাস্তবে নামিয়ে আনার চেষ্টা করে যাবে। পদ্মাসেতু তেমনি এক প্রকল্প। এ সেতুর প্রয়োজন আছে, কিন্তু প্রয়োজনটা বাচা মরার মত জরুরি নয়। ক্যান্সার রোগীকে যদি জীবনরক্ষাকারী সার্জারি ও জীবনের শেষ ছুটি কাটানোর জন্যে ভূমধ্যসাগরের কোন দ্বীপে যাওয়ার ভেতর পছন্দ করতে বলা হয় নিশ্চয় সে পছন্দ করবে সার্জারি। বেচে থাকলে সে আরও ছুটি কাটাতে পারবে, হোক তা বিলাসী অথবা সাদামাটা। পদ্মা সেতুর বেলায়ও ব্যাপারটা এরকম, পছন্দ।

পদ্মাসেতু নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে অন্তত একটা উপকার হয়েছে আমাদের, প্রয়োজনীয় সময় আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছি জাতি হিসাবে আমরা অসুস্থ। আমাদের শরীরে ক্যান্সার। টার্মিনাল ষ্টেইজে ক্যান্সার ধরা পরলে তা হতে ফেরার উপায় থাকেনা। পদ্মা সেতুর ক্যান্সার কোন পর্যায়ে ধরা পরেছে তা নির্ণয় করতে আমাদের কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে দেশ নামের রাগীর সুহৃদ্‌ হিসাবে আমরা বাইরে হতে যা দেখছি তা ভয়াবহ। রাজনীতির চরিত্রহীনতা নিয়ে অতীতে অনেক কথা বলেছি। খালেদা জিয়ার দুই পুত্র ও তাদের সহযোগীদের আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ধিক্কার দিয়েছি। এ ধিক্কার ছিল রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের মাধ্যমে দুর্নীতিতে হ্যাট্রিক শিরোপা লাভের ধিক্কার। আমাদের বলা হয়েছিল জিয়া পরিবার দেশ হতে কোটি কোটি টাকা পাচার করছে, জন্ম দিয়েছে খাম্বা মামুনের মত নব্য ধনীদের বিস্ময়কর উত্থানের কাহিনী। কিন্তু নীরবে, নিভৃতে এই কোটি কোটি কখন শত কোটি ও হাজার কোটিতে রূপান্তরিত হয়েছে তা বুঝতে পারিনি। কোটি টাকা এখন সামান্য টাকা, শত কোটিও তেমন কোন টাকা নয়। খোদ অর্থমন্ত্রীর কাছে হাজার কোটি এখন যত্সামান্য। জিয়া পরিবারের কোটি টাকার উপাখ্যান এ তুলনায় বিড়ালের মিয়াও শব্দের চাইতেও শব্দহীন।

আমাদের বোধহয় পছন্দ করার সময় এসেছে, পদ্মাসেতু, না শরীর হতে ক্যান্সার দূরীকরণ? সমসাময়িক বিশ্বে দুটা যে একসাথে চলতে পারেনা পদ্মাসেতু নিয়ে আর্ন্তজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কঠোরতা তার নমুনা মাত্র। উদ্দেশ্যটা আস্তে আস্তে খোলাসা হচ্ছে আমাদের সামনে, বিলিয়ন ডলারের পদ্মাসেতু, পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্ট অথবা দশ হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার নীলনকশা মাত্র। যে দল যত সূক্ষ্মভাবে এ নক্সা বাস্তবায়ন করবে সে দল ততবেশি সফলতার দাবি তুলবে। শেখ ও জিয়া পরিবার নামের এই ক্যান্সার যতদিন আমাদের শরীর হতে দূর করা না যাচ্ছে ততদিন পদ্মাসেতুর মত প্রকল্প গুলো স্থগিত রাখার দাবি জানানোর সময় এসেছে।

AmiBangladeshi.org