পাকিস্তান তৈরি ও ভাঙ্গা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান এবং আতাউর রহমান খানের বক্তব্য

সব ঘটনার একটি পটভূমি থাকে। প্রেক্ষাপট মূল ঘটনার গতিপ্রবাহের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ফলে মূল ঘটনা বোঝার জন্য ঘটনাবলি জানা দরকার। যে কোন ঐতিহাসিক ঘটনার ক্ষেত্রে যতোদূর সম্ভব ঘটনার জাল জানা দরকার। নতুবা  মূল ঘটনাটি সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ তৈরি হয়। মানুষের চিন্তাকে ভুল পথে চালিত করে। সামগ্রিকভাবে নিজের ও সমাজের ক্ষতি হয়। ভারতবর্ষ ভেঙ্গে পাকিস্তান তৈরি হওয়া এবং পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ হওয়ার পেছনেও পটভূমি আছে। বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমান একসময় পাকিস্তান চেয়েছিলেন। তারপর তিনি বাংলাদেশ চাইলেন কেন? সেই ইতিহাস না জেনে শুধুমাত্র ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে স্বাধীনতার  ইতিহাস জানলে হবে না। স্বাধীনতা যুদ্ধ হঠাৎ করে ২৫ মার্চ শুরু হয়নি। যেকারণে আমাদেরকে আরো জানতে হবে। জানার জন্য পড়তে হবে। কি পড়ব? আমরা সবাই ব্যস্ত। সবার সময় কম। আমি শুধু সেই জায়গাটায় সাহায্য করছি মাত্র।{loadposition bodytop1}

আরো পড়ার আগে অন্তত আমরা যেনো সবাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা অসমাপ্তি আত্মজীবনী এবং পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ও শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতাউর রহমান খানের লেখা অবরুদ্ধ নয়মাস বইটি পড়ি।

লেখার শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  এবং আতাউর রহমান খানের জীবনী জানার জন্য দু’টি লিঙ্ক দেওয়া হলো।

মোহাম্মদ গোলাম নবী :

‘একদিনের একটা ঘটনা আমার মনে দাগ কেটে দিয়েছিল, আজও সেটা ভুলি নাই। আমার এক বন্ধু ছিল ননীকুমার দাস। একসাথে পড়তাম, কাছাকাছি বাসা ছিল, দিনভরই আমাদের বাসায় কাটাত এবং গোপনে আমার সাথে খেত। ও ওর কাকার বাড়িতে থাকত। একদিন ওদের বাড়িতে যাই। ও আমাকে ওদের থাকার ঘরে নিয়ে বসায়। ওর কাকীমাও আমাকে খুব ভালোবাসত। আমি চলে আসার কিছু সময় পরে ননী কাঁদো কাঁদো অবস্থায় আমার বাসায় এসে হাজির। আমি বললাম “ননী কি হয়েছে?” ননী আমাকে বলল, “তুই আর আমাদের বাসায় যাস না। কারণ, তুই চলে আসার পরে কাকীমা আমাকে খুব বকেছে তোকে ঘরে আনার জন্য এবং সমস্ত ঘর আবার পরিষ্কার করেছে পানি দিয়ে ও আমাকেও ঘর ধুতে বাধ্য করেছে।” বললাম, “যাব না, তুই আসিস।” (পৃষ্ঠা ২৩, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান)

‘তখন রাজনীতি শুরু করেছি ভীষণভাবে। সভা করি, বক্তৃতা করি। খেলার দিকে আর নজর নাই। শুধু মুসলিম লীগ, আর ছাত্রলীগ। পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচার ‍উপায় নাই।’ (পৃষ্ঠা ১৫, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান)

‘(১৯৬৯ সালের) ৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, “একসময় এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে।…….একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোন কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই।….. জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি- আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান’-এর পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’। (পৃষ্ঠা ২৯৭, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান)

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।……….প্রত্যেকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের

যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।……..রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’ (পৃষ্ঠা ২৯৮, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান)

‘মুসলমান এই উপ-মহাদেশ শাসন করেছে প্রায় সাতশ’ বছর। বৃটিশ বণিক সম্প্রদায় দেশী মীরজাফরদের সাথে ষড়যন্ত্র করে সেই মুসলমানদের পরাজিত করে প্রায় দু’শ বছর শাসন ও শোষণ করেছে। বর্ণ-হিন্দুদের সাথে যোগসাজসে ইংরেজ শাসকরা পরাজিত মুসলিম জাতিকে সম্পূর্ণ পদানত, লাঞ্ছিত ও পর্যুদস্ত করার নানা পন্থা অবলম্বন করে। এই উভয় শত্রুর হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য মুসলমান সুদীর্ঘকাল সংগ্রাম করে। শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তান আন্দোলন গড়ে তোলে। এই আন্দোলনের ফলে পাকিস্তান নামে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলমান ভাবল, পাকিস্তান সৃষ্টি হলেই তাদের দুঃখ-দৈন্যের চির অবসান ঘটবে।’ (পৃষ্ঠা ৫, অবরুদ্ধ নয়মাস, আতাউর রহমান খান)

‘তা ঘটে নাই। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই দেখা গেল একদল শোষকের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে আমরা আরেক দল শোষকের হাতে পড়ে গেছি।’ (পৃষ্ঠা ৫, অবরুদ্ধ নয়মাস, আতাউর রহমান খান)

শেখ মুজিবুর রহমান: http://en.wikipedia.org/wiki/Sheikh_Mujibur_Rahman

আতাউর রহমান খান: http://en.wikipedia.org/wiki/Ataur_Rahman_Khan

{loadposition AD105}