দক্ষিণাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উন্নয়নে ২৫০ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্প

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে প্রায় ২’শ ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ইনটিগ্রেটেড এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্টিভিটি প্রজেক্ট (আইএপিপি)। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আইএপিপি দক্ষিণাঞ্চলে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি জেলায় ওই প্রকল্পের কাজ চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকেরা কৃষিখাতে অধিক খরচ করেও কাঙ্খিত ফসল পাচ্ছেন না। এখানে কখনো অতি বৃষ্টি, কখনো খড়া। প্রায় প্রতিবছরই এ অঞ্চলে কোন না কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। বর্তমান সরকার তাই জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত এ অঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে প্রায় ২’শ ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। সূত্রে আরো জানা গেছে, এসব জেলার ১৭২টি ইউনিয়নে কৃষকদের মধ্যে উন্নতমানের আধুনিক কৃষি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বরিশালে ৬৭টি, পটুয়াখালীতে ৫০টি, বরগুনায় ৩০টি ও ঝালকাঠিতে ২৫টি ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের সনাক্ত করে কাজ করছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানকল্পে এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্রে আরো জানা গেছে, এ প্রকল্পে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করছে। আর তাদের গবেষণার উদ্ভাবন কৃষকদের মাঝে পৌঁছানোর দায়িত্বে রয়েছে সরকারের পাঁচটি বিভাগ। এগুলো হচ্ছে-কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, প্রাণী সম্পদ অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। এসব সংস্থার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকেরা সরাসরি লাভবান হবেন। কৃষকদেরকে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি, কৃষি পণ্য, কৃষি উপকরণ ও এ সবের ব্যবহার সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা দেয়া হচ্ছে। মূলতঃ দক্ষিণাঞ্চলে পর্যাপ্ত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে আইএপিপি জেলা সমন্বয়কারী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষীরা যাদের জমির পরিমাণ ২.৪৭ একরের নিচে তাদেরকে সনাক্ত করে নিবিড় সেবা প্রদান এবং নিত্য নতুন উদ্ভাবন সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। এ অঞ্চলের পরিবেশের সঙ্গে কৃষকেরা যাতে নতুন উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে পারেন, সে বিষয়ে তাদের জন্য বিভিন্ন কর্মশালারও আয়োজন করা হচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষিখাতে সমৃদ্ধ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আঞ্চলিক প্রকল্প ব্যবস্থাপক কামাল উদ্দিন জানান, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস এবং মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার কারণে এ অঞ্চলে কৃষি উৎপাদন বার বার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এখানকার কৃষিখাত ও দরিদ্র কৃষকেরা। আর এ কারণে আঞ্চলিক পরিবেশের সাথে ক্ষ্যাপ খাওয়া জাত উদ্ভাবন, বাস্তবায়ন ও লভ্য জাতসমূহের চাষে লাগসই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে উৎপাদন বাড়ানোই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। তিনি আরো জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের প্রায় দুই লাখ প্রান্তিক দরিদ্র কৃষকেরা সরাসরি উপকৃত হবেন। যারমধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ থাকবে নারী। কৃষির অন্যান্য উপখাতের সঙ্গে এমন সমন্বয় আগে হয়নি উল্লেখ করে আঞ্চলিক প্রকল্প ব্যবস্থাপক আরো বলেন, ইতোমধ্যে কৃষির এ সকল উপখাতগুলোর কৃষক, মৎস্য চাষী ও গো-খামারীদের নিয়ে আমরা কর্মশালা করেছি। এতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।