স্বামীকে খুঁজে না পেয়ে সন্তানদের নিয়ে পাহাড়েই ফিরে গেলো সিমা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ স্বামীকে খুঁজতে বরিশাল নগরীতে এসেছিলেন পাহাড়ি কন্যা ও গৃহবধূ সিমা বেগম। কিন্তু স্বামীর খোঁজ না পেয়ে পুনরায় তাকে ফিরে যেতে হয়েছে পাহাড়ে। তবে যাওয়ার আগে বরিশালের মানুষের ভূয়সী প্রশংসা করে গেছেন ওই পাহাড়ি কন্যা। তিনি বলে গেছেন, বরিশালের মানুষের উপকারের কথা কখনও ভুলবো না।

সূত্রমতে, স্বামীর খোঁজে তার স্বামীর দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সকালে বরিশাল নগরীতে আসেন পূর্বের ফটিকছড়ি ও বর্তমান ভুজপুর থানার মাদারমারা গ্রামের খালেক মিয়ার কন্যা তিন সন্তানের জননী সিমা বেগম (২৬)। তার সাথে ছিলো রিমা (৭), শাওন (আড়াই) ও শামিমস্বামীকে খুঁজে না পেয়ে সন্তানদের নিয়ে পাহাড়েই ফিরে গেলো সিমা (৬মাস) বয়সের তার তিন সন্তান। স্বামী রবিউল ইসলামের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী তাকে খুঁজে না পেয়ে ওইদিন দুপুরের দিকে নগরীর ফরিয়াপট্টি রোডের সম্মুখে অজ্ঞান হয়ে পরে যায় সিমা। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ছুটে এসে মা ও সন্তানদের রাস্তা থেকে তুলে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। তাদের সুস্থ্য করে তোলেন। পরে তাদের খেতে দেয়া হয়। রাতের বেলা মা ও সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের রাখা হয় ফরিয়াপট্টি এলাকার মোল্লা বাড়িতে। গত চারদিন স্বামীর কোন সন্ধ্যান পাননি সিমা। অবশেষে গতকাল রবিবার সকালে লক্ষিপুরের উদ্দেশ্যে সিমা ও তার সন্তানদের তুলে দেয়া হয় সী-ট্রাকে।

ফরিয়াপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী শ্রীবাস চন্দ্র সাহা জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে হঠাৎ করে রাস্তার ওপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সিমা। তার সাথে থাকা তিনটি সন্তাননের শারীরিক অবস্থাও ছিলো খুবই দুর্বল। এ দৃশ্য দেখে তিনিসহ অনেকেই ছুটে গিয়ে তাদের রাস্তা থেকে তুলে এনে সুস্থ্য করেন। পরে সিমার জ্ঞান ফিরে আসার পর জানতে পারেন স্বামীর খোঁজে সে বরিশালে এসেছেন। সিমাকে তার স্বামী যে ঠিকানা দিয়েছে সেখানে রবিউল নামে এক শ্রমিক থাকলেও তিনি সিমার স্বামী নয় বলে জানান ব্যবসায়ী শ্রীবাস চন্দ্র সাহা। চা বিক্রেতা বাবুল হোসেন জানান, ফটিকছড়ি থেকে আসা পাহাড়ী মেয়েটির বরিশালে কোনো আত্মীয়-স্বজন না থাকলেও তার সাথে সবাই আত্মীয়ন্যায় আচরণ করেছে। মেয়েটি বুঝতেই পারেনি এখানে তার আপন বলতে কেউ নেই। বাবুল আরো জানান, মেয়েটির স্বামীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ থাকায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গত চারদিন নগরীর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করেও সিমার স্বামী রবিউলের কোন খোঁজ না পেয়ে অবশেষে গতকাল রবিবার সকালে সিমা ও তার সন্তানদের লক্ষিপুরের উদ্দেশ্যে সী-ট্রাকে তুলে দেয়া হয়। রহিমা বেগম নামের স্থানীয় এক গৃহবধূ বলেন, ‘সিমা নামের পাহাড়ী ওই গৃহবধূর অসহায়াত্বের কথা শুনে পুলিশ, সাংবাদিকসহ অনেকেই আর্থিকভাবে তাকে সহযোগিতা করেছেন। যাওয়ার সময় তাকে ৭ হাজার ৩’শ ২৬ টাকা দেয়া হয়েছে।’

পাহাড়ী কন্যা ও গৃহবধূ সিমা বেগম জানান, ৮ বছর আগে পাশের সোবলছড়ি গ্রামের সিএনজি চালক রবিউল ইসলামের সাথে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। এক বছর আগে বাড়িতে বেড়াতে আসার কথা বলে রবিউল বরিশালে চলে আসেন। ওই সময় তার ছোট সন্তান শামিম তার গর্ভে ছিলো। এরপর থেকে মোবাইল ফোনে রবিউলের সাথে তার কথা হতো। বাড়িতে ঘর উত্তোলন করার অজুহাত দেখিয়ে দীর্ঘদিন অতিবাহিত করলেও গত চার মাস ধরে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর স্বামীর খোঁজে পূর্বে তার দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী (ফরিয়াপট্টি) বরিশালে আসনে সিমা ও তার তিন সন্তান। স্বামীর খোঁজ না পেলেও সিমা বরিশালের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বামীর সন্ধ্যান না পেয়ে যখন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার মতো অবস্থা, ঠিক তখনই আমার আপনজনদের মতো আমার সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় মানুষজন। আমাকে ও আমার সন্তানদের সেবা দিয়ে সুস্থ্য করে তোলাসহ যেভাবে আমাকে আর্থিক সহযোগীতা, চারদিন থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তা আমি কোনদিনই ভুলবো না। একজন অপরিচিত মেয়েকে এ অঞ্চলের মানুষ যেভাবে ভালোবাসা ও স্নেহ দিয়েছেন তা কোনোদিনই ভোলার মতো নয়।