বরিশালের একই গ্রামের চার মেধাবী নিয়োগ পেলেন বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে

ষ্টাফ রিপোর্টার ॥ ৩১ তম বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে সদ্য নিয়োগ লাভ করেছেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সাতজন মেধাবী তরুণ-তরুণী। এদের মধ্যে চারজনই হচ্ছেন নারী। মেধাবীদের সাত জনের মধ্যে চারজনই হচ্ছেন একই গ্রামের বাসিন্দা। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার ও তাদের নিজ গ্রামের একটি বরিশালের একই গ্রামের চার মেধাবী নিয়োগ পেলেন বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসেহাইস্কুল থেকে এসএসসি ও দু’জন একই গ্রামের একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কমিশন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের মোঃ জানে আলম (আয়কর), মোঃ সিরাজুল ইসলাম (শিক্ষা), মোঃ খায়রুল ইসলাম (পুলিশ) ও আকলিমা সুলতানা (শিক্ষা) বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগ লাভ করেছেন। এরা চারজনই গৌরনদীর প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। ওই একই এলাকায় (হোসনাবাদ গ্রামেই) তাদের বাড়ি। আকলিমা ও খায়রুল  এইচএসসি পাস করেছেন হোসনাবাদ নিজাম উদ্দিন কলেজ থেকে। এছাড়া গৌরনদীর বিল্লগ্রামের প্রিয়াংকা পাল (প্রশাসন), তাঁরাকুপি গ্রামের সায়মা রাজ্জাকী (পররাষ্ট্র) ও নলচিড়া গ্রামের মনি দাস (স্বাস্থ্য) বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন।

প্রিয়াংকা পাল : উপজেলার বিল্লগ্রামের জীবন পালের কন্যা প্রিয়াংকা পাল বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ লাভ করেছেন। তিনি গৌরনদীর পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সনে এসএসসি, মাহিলাড়া ডিগ্রী কলেজ থেকে ২০০৪ সনে এইচএসসি ও পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রী লাভ করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে প্রিয়াংকা সবার ছোট। তার বাবা পেশায় সামান্য একজন কুমার (মৃৎ শিল্পী)।

সায়মা রাজ্জাকী : গৌরনদীর তাঁরাকুপি গ্রামের আঃ রাজ্জাক সরদারের কন্যা সায়মা রাজ্জাকী বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারে নিয়োগ লাভ করেছেন। তিনি বরিশাল সদর গালর্স হাইস্কুল থেকে ২০০৩ সনে এসএসসি, ২০০৫ সনে অমৃত লাল দে কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরবর্তীতে ইংরেজীতে অনার্স ও এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। তার বাবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিন ভাই-ে বোনের মধ্যে সায়মা সবার ছোট।

মনি দাস : উপজেলার নলচিড়া গ্রামের মৃত মধু সুদন দাসের কন্যা মনি দাস বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি ১৯৯৯ সনে ঢাকার কমলাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০১ সনে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে পরবর্তীতে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন। দু’ভাই-বোনের মধ্যে মনি দাস ছোট। তার বাবা একজন ব্যাংকার ছিলেন।

আকলিমা সুলতানা আঁখি : উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের সৌদী প্রবাসী মোঃ গোলাম ফারুক আকনের কন্যা আকলিমা সুলতানা আঁখি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৯ সনে এসএসসি, ২০০১ সনে হোসনাবাদ নিজাম উদ্দিন কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তীতে ঢাকার সরকারি বেগম বদরুন্নেছা গাস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে গাস্থ্য অর্থনীতিতে অনার্স ও এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সবার ছোট।

মোঃ জানে আলম : উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের মোঃ খলিলুর রহমান আকনের পুত্র মোঃ জানে আলম বিসিএস আয়কর কমিশনে চাকুরি লাভ করেছেন। তিনি একইভাবে হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৮ সনে এসএসসি, ২০০০সনে পাবনার শহীদ মুনসুর কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্স ও এমএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। জানে আলম ৩ ভাইয়ের মধ্যে মেঝ। তার বাবা একজন ডেকোরেটর ব্যবসায়ী।

মোঃ সিরাজুল ইসলাম :  মোঃ সিরাজুল ইসলাম গৌরনদীর হোসনাবাদ গ্রামের ব্যবসায়ী মোঃ আকফাত আলীর পুত্র। তিনি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সনে এসএসসি, ২০০৪ সনে সাভার পিএটিসি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনার্স ও মাষ্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। ৫ ভাইয়ের মধ্যে সিরাজুল চতুর্থ।

মোঃ খায়রুল ইসলাম : মোঃ খায়রুল ইসলাম হোসনাবাদ গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন জমাদ্দারের পুত্র। তিনি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন। খায়রুল ১৯৯৯ সনে হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০১ সনে হোসনাবাদ নিজাম উদ্দিন কলেজ থেকে এইচএসসি ও পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৎস্য বিভাগে অনার্স ও মাষ্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। ২ ভাইয়ের মধ্যে খায়রুল ছোট।

গৌরনদী উপজেলার সাতজন মেধাবী তরুন-তরুনী ৩১ তম বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগ লাভ করায় এলাকাবাসী মহাখুশি। এদেরমধ্যে হোসনাবাদ গ্রামের চারজন বাসিন্দা হওয়ায় আরো খুশি ওই গ্রামের লোকজনের মধ্যে। হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি একটি অজোপাড়া গাঁয়ের বিদ্যাপিঠ হওয়া সত্বেও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন চার শিক্ষার্থী বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগ লাভ করায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দের সীমা নেই।