বরিশালের কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল – হত্যা নয় ছাঁদ থেকে পরেই মারা গেছে কেয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালের গৌরনদী পৌর সদরের চরগাধাতলী গ্রামের গৃহবধূ ও কলেজ ছাত্রী কেয়া মনি বেগমের (২৪) ছাঁদ থেকে পরে বরিশালের কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল - হত্যা নয় ছাঁদ থেকে পরেই মারা গেছে কেয়ামৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে নানা ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার পল্লবী থানার ডিওএইচএস এলাকার ভাড়াটিয়া বাসার সাত তলার ছাঁদ থেকে পরে কেয়ার মৃত্যুর ঘটনায় পল্লবী থানায় দায়ের করা হয়েছে একটি হত্যা মামলা। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে কেয়ার স্বামী, শশুড়, দেবর ও কেয়ার তথাকথিত মিডিয়া অফিসের দু’স্টাফকে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় আসামিরা পরিকল্পিত ভাবে কেয়া মনিকে হত্যা করেছে। তবে ময়নাতদন্তের রির্পোটে নির্যাতন করে হত্যার কোন আলামত পাওয়া যায়নি। ছাঁদ থেকে পরে মৃত্যুর বিষয়টি শুধু উল্লেখ রয়েছে।

বিশেষ অনুসন্ধানে পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী, এজাহার ও কেয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী পৌর এলাকার চরগাধাতলী মহল্লার আব্দুস ছালাম গাজীর পুত্র ঢাকার গার্মেন্টস ও বাইনিং ব্যবসায়ী খোরশেদুল আলম মিলনের সাথে উপজেলার মাহিলাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জবেদ আলী সরদারের কন্যা কেয়া মনির সামাজিক ভাবে গত সাত বছর পূর্বে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে তাওহীদ হাসান মাহিম নামের চার বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। কেয়া মনি মাহিলাড়া ডিগ্রী কলেজের বিএ শেষবর্ষের ছাত্রী হিসেবে অধ্যায়নরত ছিলো। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রী কেয়া মনিকে নিয়ে মিলন ঢাকার পল্লবী এলাকার ১৬/৮/এ নং দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া বাড়ির নিচতলায় বসবাস করে আসছিলো। সম্প্রতি সময়ে মিলন ব্যবসায়ীক কাজে ব্যস্ত থাকায় মাঝে মধ্যে মধ্যরাতে বাসায় ফেরার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেয়ার সাথে তার মনোমালিন্য দেখা দেয়। মিলনকে সন্দেহ করতে থাকে কেয়া। এনিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দা¤পত্য কলহ চরম আকার ধারন করে। এরজেরধরে কেয়ার মৃত্যুর একমাস পূর্বে স্বামীর সাথে অভিমান করে একমাত্র পুত্র সন্তানকে নিয়ে রামপুরা বাড্ডা এলাকার খালার বাসায় যাওয়ার কথা বলে কেয়া তার স্বামীর বাসা থেকে বেড়িয়ে আসে। ওইসময় (২০ আগষ্ট) কৌশলে কেয়া মনি পল্লবী থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে একটি সাধারন ডায়েরী করেন। পরবর্তীতে স্বামীর অগোচরে বাবা-মায়ের সহযোগীতায় কেয়া ঢাকার পল্লবী থানার ডিওএইচএস এলাকার ৩১ নং রোডের ৫৯৪ নং বাড়ির ষষ্ট তলায় ফ্লাট বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় ছিলো কেয়া মনির তথাকথিত মিডিয়া অফিস।

রহস্যজনক এ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই মোঃ এবাদ আলী জানান, গত ১ অক্টোবর থেকে ডিওএইচএস’র ওই বাসার ভাড়ার চুক্তি হলেও গত ১৪ সেপ্টেম্বর কেয়া মনি তার সন্তান মাহিম ও কাজের ছেলে ফয়সালকে (১১) নিয়ে ওই বাড়িতে ওঠেন। একই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ছিলো কেয়ার মিডিয়া অফিস। ঘটনার দিন গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টা ২০ মিনিটের দিকে ভাড়াটিয়া বাড়ির সাত তলার ছাঁদ থেকে কেয়া মনি নিচে পরে যায়। মুর্মুর্ষ অবস্থায় স্থানীয়দের সহায়তায় কেয়াকে তার অফিসের স্টাফ আব্দুর রহিম মিরাজী ওরফে রনক ও আরমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কত্যর্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করে। এ খবর পেয়ে পল্লবী থানা পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছে কেয়া মনিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা তারই অফিসের স্টাফ আব্দুর রহিম মিরাজী ওরফে রনক ও আরমানকে আটক করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই রিয়াদ হোসেন বাদি হয়ে কেয়ার স্বামী খোরশেদুল আলম মিলন, তার ভাই রাজু গাজী, বাবা আব্দুস সালাম গাজী, গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহিম মিরাজী ওরফে রনক ও আরমানকে আসামি করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বাদি উল্লেখ করেন, তার বোনকে পরিকল্পিত ভাবে আসামিরা হত্যা করেছে। এসআই মোঃ এবাদ আলী আরো জানান, মামলার তদন্তের কাজ শেষ হয়নি। বিধায় তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে তিনি আর কিছুই বলতে পারবেন না।

সূত্রমতে, পুলিশ গ্রেফতারদের আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা সত্বেও হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে ছাঁদ থেকে পরে কেয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। এমনকি গ্রেফতারকৃতরা রিমান্ডে জানিয়েছে মিলনকে তারা কোনদিনই দেখেননি কিংবা চিনেওনা। অথচ মামলায় এজাহারে গ্রেফতারকৃতরা মিলনের বন্ধু বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, ময়নাতদন্তের রির্পোটে নির্যাতন করে হত্যার কোন আলামত পাওয়া যায়নি। ছাঁদ থেকে পরে মৃত্যুর বিষয়টি শুধু উল্লেখ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে কিছু বলা যাবে না। তবে তদন্ত শেষে যে দোষী হবে তার বিরুদ্ধেই কেবল আদালতে চাজর্শীট দাখিল করা হবে।