জগতের দুর্গতি নাশ করতে আসবেন হিমালয় কণ্যা পার্বতী

সৈকত গুহ পিকলু ॥ পর্বতরাজ হিমালয়ের কণ্যা দুর্গতিনাশিনী পার্বতী জগতের সব দুর্গতি নাশ করতে গজে চড়ে মর্ত্যে আসবেন। সব অন্যায়-অনাচার দূর করে দিয়ে মা দুর্গা নৌকায় চড়ে ফিরে যাবেন কৈলাশটিলায়। ২৪ অক্টোবর বুধবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর বোধনের মাধ্যমে শুরু হবে  ৫দিনব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মহাশক্তি মহামায়া ত্রিনয়নী দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে ভক্তি ভরে বরণ করে নিতে বরিশালসহ সারাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু  হবে ষষ্ঠী পূজার । প্রতিদিন সন্ধ্যায় দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ, অধিবাস এবং ভক্তিমূলক গান, শঙ্খ আর উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে ষষ্ঠীর সমাপন। পরের দিন মহাসপ্তমী। মহাঅষ্টমীর দিনে অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। দেবী দুর্গারূপে কুমারী মাকে ৩৫টি পূজামণ্ডপে নিয়ে আসা হবে। সঙ্গে সঙ্গে মাথা নুইয়ে প্রণাম করবেন মণ্ডপে আসা হাজার হাজার পুণ্যার্থী। শঙ্খের ধ্বনি, কাঁসর ঘণ্টা, ঢাকের বাদ্য ও উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে মাতৃরূপিণী কুমারী মাকে পরিয়ে দেয়া হবে পুষ্পমাল্য। পূজা শেষে পুষ্পাঞ্জলি ও প্রার্থনায় অংশ নেবেন পুণ্যার্থীরা। ধর্মীয় রীতি অনুসারে মহানবমী মর্ত্যলোকে দেবীর শেষ দিন। তাই তার আশীর্বাদ পেতে, বিপদ-আপদ, রোগশোকমুক্ত জীবনের প্রত্যাশায় মহানবমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে চলবে আরাধনা। বিজয়া দশমীতে প্রতীমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে দুর্গোৎসব। বিষাদ আর আনন্দের মহাকাব্যিক আবহে বিদায় জানানো হবে দেবী দুর্গাকে। নবমীর রাত থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে বিষাদের ছায়া নেমে আসবে। দেবী বিদায় নেবেন এই বেদনা আঘাত হানে তার ভক্তকুলের মর্মমূলে।

পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আগামী ২৮ অক্টোবর রোববার শেষ হবে। দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সন্ধ্যায় হবে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ, অধিবাস এবং ভক্তিমূলক গান। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নগরীতে থাকবে র‌্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়। দুর্গোৎসব চলাকালে পূজামণ্ডপে প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগআরতি হবে। এছাড়া মণ্ডপগুলোতে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন রয়েছে। হিন্দু শাস্ত্র মতে, এবার মা দুর্গা মর্ত্যে আসবেন গজে চড়ে, আর যাবেন নৌকায় করে। এমন আগমন ও বিদায়ের ফলে পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হওয়ার সম্ভবনা থাকে বলে বিভিন্ন পঞ্জিকায় উলেখ আছে। তবে দেবী হাতির পিঠে চড়ে ফিরলে বসুন্ধরায় শস্যভাণ্ডার পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

বিভিন্ন ধর্মমত গ্রন্থে আছে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। বসন্তকালে তিনি আরাধনা করায় একে বাসন্তীপূজাও বলা হয়। কিন্তু রাজা রাবণের হাত থেকে স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র শরৎকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। তাই এই পূজাকে অকাল বোধন বলা হয়ে থাকে। কালক্রমে এ অকাল বোধনই বাঙালির প্রধান ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়। মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা হচ্ছেন দুর্নতিনাশিনী। সব অন্যায়-অনাচার তিনি দূর করে দেন। পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা বলে তিনি পার্বতী। আবার দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন বলে তার অন্য নাম দুর্গা। আবার তিনিই চণ্ডী মহিষাসুরমর্দিনী। দেবীদুর্গা প্রতি বছর মর্ত্যে আসেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশকে নিয়ে। জগতের সব দুর্গতি নাশ করে মা দুর্গা মর্ত্যে থেকে ফিরে যাবেন কৈলাশটিলায়।

লেখক: চেয়ারম্যান-মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ, আহবায়ক-মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, গৌরনদী উপজেলা শাখা।