দেশের সর্ববৃহৎ জলযান কীর্তখোলা-২ উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইংল্যান্ডের বিখ্যাত একটি শিপইয়ার্ড কোম্পানীর ডিজাইনে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রথমবারের মতো দেশের সর্ববৃহৎ যাত্রীবাহী জলযান কীর্তনখোলা-২ নির্মান করা হয়েছে। লঞ্চটি নির্মান করেছে বাগেরহাট শিপ বিল্ডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গতকাল শুক্রবার এক অনারম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে যাত্রীসেবার জন্য লঞ্চটির উদ্বোধন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কীর্তনখোলা-২ লঞ্চের দুটি পার্টেই তলদেশ থাকায় দূর্ঘটনায় তলদেশ ফেটে লঞ্চ ডুবির কোন আশংকা নেই। লঞ্চটি চলাচলের সময় ইকো দেশের সর্ববৃহৎ জলযান কীর্তখোলা-২ উদ্বোধন - নেই লঞ্চ ডুবির আশংকা - ভেতরেই ইন্টারকম ও সিসি ক্যামেরাসহ এটিএম বুথের মাধ্যমে ব্যাংকিং সুবিধাসাউন্ডার নামের পানির গভীরতা নির্নয় যন্ত্র, সঠিক পথ নির্নয়ে জিপি ব্যবস্থা, ঝড়ের পূর্বাভাস নির্নয়ে শক্তিশালী রাডার ও ওয়ার্লেস ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে অটোমেটিক ফায়ার কন্ট্রোল, পর্যাপ্ত সিকিউরিটি, ম্যানুয়াল, ইলেক্ট্রিক এবং হাইড্রোলিক পদ্ধতিতে লঞ্চ চালানোর ব্যবস্থা।

দেশের মধ্যে একমাত্র সর্ববৃহৎ এ লঞ্চটি নির্মান করতে ঢাকা ব্যাংক ১২ কোটি ৯০লাখ টাকা ঋণ দিলেও লঞ্চটি নির্মানে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেসার্স সালমা শিপিং কর্পোরেশনের স্বত্তাধীকারি মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস। তিনি আরো জানান, বৃহৎ এ লঞ্চটি দৈর্ঘ্য ৩’শ ও প্রস্থ ৫৭ ফিট। লঞ্চটিতে প্রথম শ্রেনীর যাত্রীদের জন্য ৯০টি ডাবল ও ৬০টি সিঙ্গেল কেবিনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য লঞ্চে সাধারনত চারটি ভিআইপি কেবিন থাকলেও এ লঞ্চটিতে রয়েছে ছয়টি ভিআইপি (যা বিজনেস ক্লাস নামে থাকবে) এছাড়া আরো ছয়টি ভিভিআইপি কেবিন রয়েছে। প্রথম শ্রেনী ও ভিআইপি ১২টি কেবিনের প্রত্যেকটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এছাড়া ২২টি স্টাফ কেবিনের পাশাপাশি তৃতীয় শ্রেনীর ১১’শ যাত্রী ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন লঞ্চটিতে নামাজের জন্য মসজিদ, খাবার জন্য দু’টি কেন্টিন ও পর্যাপ্ত টয়লেট ব্যবস্থা রয়েছে। যাত্রীদের বিনোদনের জন্য প্রতি কেবিনে রঙ্গিন টেলিভিশন ও ইন্টারকম যোগাযোগের ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে তৃতীয় শ্রেনীর যাত্রীদের বিনোদনে বড় পর্দার টিভি, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম আর ২২টি সিসি ক্যামেরা। শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে কম্পিউটারাইজড ভিডিও গেমের ব্যবস্থা ছাড়াও সর্ববৃহত এ নৌ-যানটিতে রয়েছে অন্যান্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা। যাত্রীদের সুবিধার্থে এই প্রথম কোন নৌযানে থাকছে এটিএম বুথের মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা। লঞ্চটি নির্মানেও রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

গত ৮ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের ১২ নম্বর এ লঞ্চটি পানিতে ভাসানো হয়। সর্ববৃহত এ নৌযানটি এ রুটে সংযোজন হওয়ায় বছরের স্বাভাবিক সময়ে যাত্রী চাপ কিছুটা কমবে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার থেকে যাত্রী পরিবহনের জন্য দেশের সর্ববৃহত যাত্রীবাহী নৌযান কীর্তনখোলা-২ এর উদ্বোধন করা হয়। মেসার্স সালমা শিপিং কর্পোরেশনের দ্বিতীয় যাত্রীবাহী লঞ্চ কীর্তনখোলা-২ যাত্রী সেবায় নামানো উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় বরিশাল আধুনিক নৌ-বন্দর সংলগ্ন টার্মিনালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী মোঃ শাহজাহান খান। লঞ্চটির উদ্বোধন করেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরন।

বরিশাল জেলা পরিষদের প্রশাসক আলহাজ্ব ডাঃ মোখলেসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস-এমপি, লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম), কনফিডেন্ট গ্র“পের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিম, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান ড. মোঃ শামসুদ্দোহা খন্দকার, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার ফজলে রশিদ, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডার জোবায়ের আহমেদ প্রমুখ।

কীর্তনখোলা-২ লঞ্চের স্বত্বাধিকারী মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌসের পক্ষে তার বড় ভাই মনিরুল আহসান মনির লঞ্চটির সার্বিক বিষয়াদী উপস্থাপন করেন।

উল্লেখ্য, বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে বর্তমানে ১১ টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে। এগুলো হলো সুন্দরবন-৭ ও ৮ এবং সুরভী-৭ ও ৮, কীর্তনখোলা-১, কালামখান, দ্বীপরাজ, পারাবত-২, ৭, ৯ ও ১১। এ রুটে ১২ নম্বর লঞ্চ হিসেবে যাত্রী পরিবহনের জন্য উদ্বোধন করা হলো কীর্তনখোলা-২। সুন্দরবন-৭ লঞ্চকে টপকিয়ে এখন থেকে এ লঞ্চটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বাধুনিক যাত্রীবাহী নৌযান।