পরকীয়ার টানে ঘরছাড়া প্রবাসীর স্ত্রী – পতিতাবৃত্তির জন্যই বিয়ের প্রলোভন – তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরকীয়ার টানে ঘরছাড়া বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ভুতেরদিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী নারগিস আক্তার মনি ও তার কতিথ প্রেমিক সঞ্জয় সাহাকে গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গ্রেফতারকৃত কতিথ প্রেমিক সঞ্জয় পতিতাবৃত্তি দলের একজন সক্রিয় সদস্য। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে সে ও তার দলের অন্যান্য সদস্যরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেমের নাটক করে গৃহবধূ, যুবতী ও কিশোরীদের ভাগিয়ে এনে আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করিয়ে আসছিলো। চাঞ্চল্যকর এসব অভিযোগের আরো তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য আদালত গতকাল সোমবার গ্রেফতারকৃতদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গৌরনদী উপজেলার সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মাহাবুব জানান, গ্রেফতারকৃত কতিথ প্রেমিক সঞ্জয় সাহা পতিতাবৃত্তি দলের একজন সক্রিয় সদস্য। সে মোবাইল ফোনে পরিচয়ের সূত্রধরে পরকীয়া প্রেমের গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলে গৌরনদী উপজেলার সাকোকাঠী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য খালেক হাওলাদারের কন্যা ও বাবুগঞ্জ উপজেলার ভুতেরদিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী হাবিবুর রহমানের স্ত্রী নারগিস আক্তার মনির (২৯) সাথে। সঞ্জয় সাহা (৩৪) যশোর জেলার কোতোয়ালী থানার বেজপাড়া এলাকার নলডাঙ্গা রোডের বাসিন্দা নিকুঞ্জ সাহার পুত্র। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গৃহবধূ নারগিস আক্তার মনির স্বীকারোক্তির উদ্বৃত্তি দিয়ে এস.আই মাহবুব আরো জানান, নারগিস আক্তার মনির সাথে প্রেমের অভিনয় করে সঞ্জয় বিয়ের প্রলোভন দেখায়। গৃহবধূ তার প্রেমের ফাঁদে পরে সৌদি প্রবাসী স্বামীর নগদ ১৭ লক্ষ টাকা ও ২২ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ ছোট বোন মুক্তা ও ৯ বছরের পুত্র নিরবকে সাথে নিয়ে গত চার মাস পূর্বে গৃহত্যাগ করে। পরবর্তীতে তাদের ঢাকার মীরপুরের পূর্ব কাজিপাড়া এলাকার ৭৩/১ নম্বর ভাড়া বাসার নিয়ে রাখা হয়। সেখানে নারগিস ও তার ছোট বোন নাসরিন আক্তার মুক্তাকে (২৫) দিয়ে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা শুরু করে সঞ্জয় ও তার দলের সহযোগীরা। অর্থের বিনিময়ে ধনার্ঢ্য ব্যক্তিদের মনোরঞ্জনের জন্য সঞ্জয় ও তার দলের লোকজনে প্রতারনার মাধ্যমে সুন্দরী যুবতীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাগিয়ে আনতো। পরবর্তীতে ওইসব সুন্দরী যুবতীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিলাশ বহুল বাসাভাড়া নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা করনো হতো।

পুলিশ আরো জানায়, প্রবাসে বসে নারগিসের স্বামী হাবিবুর রহমান তার স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে দেশে চলে আসেন। পরবর্তীতে হাবিবুর রহমান গৌরনদী থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ গত ৫ অক্টোবর রাতে প্রতারক প্রেমিক সঞ্জয় দাস, প্রবাসীর স্ত্রী নারগিস আক্তার মনি ও তার ছোট বোন নাসরিন আক্তার মুক্তাকে ঢাকার মীরপুর এলাকার ভাড়াটিয়া বাসা থেকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করে। আদালত গৃহবধু নারগিস ও সঞ্জয়ের জামিন না মঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে পাঠিয়ে শিশু নিরবকে তার বাবার জিম্মায় প্রদান করে। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কতিথ প্রেমিকা সঞ্জয় ও ঘরছাড়া গৃহবধূ নারগিসের দেয়া চাঞ্চল্যকর তথ্যের আরো রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ ওইসময়ই রিমান্ডের আবেদন করেন। অবশেষে গতকাল সোমবার ঘরছাড়া গৃহবধু নারগিস আক্তার মনি ও তার কথিত প্রেমিক সঞ্জয় সাহার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বরিশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোছাদ্দেক মিনহাজ গৃহবধু নারগিসকে জেলগেটে ও সঞ্জয়কে গৌরনদী থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, ২০০১ সনে গৌরনদী উপজেলার সাকোকাঠী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য খালেক হাওলাদারের কন্যা নারগিস আক্তার মনির সাথে পার্শ্ববর্তী বাবুগঞ্জ উপজেলার ভুতেরদিয়া গ্রামের সৌদী প্রবাসী হাবিবুর রহমানের বিয়ে হয়। তাদের নাহিদ রহমান নিরব (৯) নামের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।