কুরবানীর ফজিলত

(ক) কুরবানীর পশুর শরীরে যত পশম থাকে, প্রত্যেকটা পশমের পরিবর্তে এক একটি নেকী পাওয়া যায়।
(খ) কুরবানীর দিনে কুরবানীই হলো সবচেয়ে বড় এবাদাত।
(গ)আয়শা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানীর দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোন আমল আল্লাহর কাছে নাই। ঐ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন জবেহকৃত পশুর লোম, শিং, ক্ষুর,পশম সমূহ ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। কুরবানীর রক্ত জমিনে পতিত হবার পুর্বেই তা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদায় পৌছে যায়। অতএব, তোমরা কুরবানির দ্বারা নিজেদের নফস কে পবিত্র কর।
مَا عَمِلَ ابْنُ آدَمَ يَوْمَ النَّحْرِ عَمَلًا أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ هِرَاقَةِ دَمٍ وَإِنَّهُ لَيَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُونِهَا وَأَظْلَافِهَا وَأَشْعَارِهَا وَإِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنْ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ عَلَى الْأَرْضِ فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا
ইবনে মাজাহ ২/১০৪৫, হাদিস ৩১২৬।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের বিশেষ ফজিলত
জিলহজ্জ মাসের দশম তারিখে ঈদুল আদ্বহা অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে বিত্তবানেরা দরিদ্রদের পাশে এসে দাঁড়ায়, অসহায় দুস্থ লোকেরা এই দিনে বিত্তবানদের থেকে পায় বিশেষ সহনুভবতা, সব মিলে একে অপরের সুখ-দুখ, আনন্দ-ব্যদনা বুঝতে সক্ষম হয়, যার ফলে আল্লাহর কাছে এই মাসের ফজিলত অনেক বেশি। ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসুল ইরশাদ করেছেন,
مَا الْعَمَلُ فِي أَيَّامٍ أَفْضَلَ مِنْهَا فِي هَذِهِ قَالُوا وَلَا الْجِهَادُ قَالَ وَلَا الْجِهَادُ إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ يُخَاطِرُ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ بِشَيْءٍ
জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমল অন্য যে কোন দিনের নেক আমলের চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, জিহাদ ও নয় কি ? রাসুলুল্লাহ  বললেন জিহাদ ও নয়, তবে ঐ ব্যক্তি যে নিজের জান ও মাল নিয়ে বের হয়েছে আর ফিরে আসে নি। অর্থাৎ শহিদ হয়ে গেছে।
বোখারী, ১/৩২৯, হাদিস ৯২৬। ফতহুলবারী লিইবনে হাজার, ৩/৩৯০, হাদিস ৯১৬।

কাদের উপর কুরবানী দেয়া ওয়াজিব
১। ১০ই যিলহজ্জের ফজর থেকে ১২ই জিলহজ্জের সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্থ্যাৎ কুরবানীর দিনগুলোতে যার নিকট সদকায়ে ফিতর/ফিতরা
ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থ/সম্পদ থাকে তার উপর কুরবানী কতরা ওয়াজিব।
২। মুসাফিরের উপর (সফর রত অবস্থায় থাকলে) কুরবানী করা ওয়াজিব হয় না।
৩। কুরবানী ওয়াজিব না হলেও নফল কুরবানী করলে কুরবানীর চওয়াব পাওয়া যাবে।
৪। কুরবানী শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয়-সন্তানাদি, মাতা-পিতা ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয় না, তবে তাদের পক্ষ
থেকে করলে তা নফল কুরবানী হবে।
৫। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সে কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করলে সেই পশু করুবানী করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে যায়।
৬। কোন মকসুদের (উদ্দেশ্য) জন্য কুরবানীর মান্নত করলে সেই মকসুদ পূর্ণ হলে তার উপর (গরীব বা ধনী) কুরবানী করা
ওয়াজিব হয়ে যায়।
৭। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানী না করলে কুরবানী দিনগুলো চলে যাওয়ার পর একটা বকরীর
(ছাগল) মুল্য সদকা করা ওয়াজিব।

কোন কোন পশু দ্বার কুরবানী করা জায়েজ
বকরী, পাঠা, খাসী, ভেড়া, দুম্বা, গাভী, ষাড়, বলদ, মহিষ, উট, এই কয় প্রকার গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ।

কুরবানীর পশুর বয়স প্রসঙ্গ
(ক) বকরী, পাঠা, খাসী, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা কম পক্ষে পূর্ণ এক বৎসর বয়সের হতে হবে। বয়স যদি কিছু কমও হয় কিন্ত এরুপ মোটা তাজা যে, এক বৎসর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলেও তাদের চেয়ে ছোট মনে হয় না, তাহলে তার দ্বারা কুরবানী জায়েজ আছে তবে অন্তত ছয় মাস বয়স হতেই হবে। তবে বকরী কোন অবস্থা এক বৎসরের কম হলে চলবে না।

(খ) গরু ও মহিষের বয়স কম পক্ষে দুই বৎসর হতে হবে।

(গ) উট এর বয়স কম পক্ষে পাঁচ বৎসর হতে হবে।

কুরবানীর পশুর স্বাস্থ্যগত প্রসঙ্গ
(ক) কুরবানীর পশু ভাল এবং হৃষ্টপুষ্ট হওয়াই উত্তম।
(খ) যে প্রাণী লেংড়া অর্থ্যাৎ যা তিন পায়ে চলতে পারে-এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারলেও ভর করতে পারে না এরুপ পশু দ্বারা কুরবানী দুরস্ত হবে না।
(গ) যে পশুর একটিও দাঁত নেই তার দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়।
(ঘ) যে পশুর কান জন্ম হতে নেই তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়, তবে কান ছোট হলে অসুবিধা আছে।
(ঙ) যে পশুর শিং মুল থেকে ভেঙ্গে যায় তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়। তবে শিং উঠেইনি বা কিছু পরিমাণ ভেঙ্গে গিয়েছে এরপু পশু দ্বারা কুরবানী জায়েজ আছে।
(চ) যে পশুর উভয় চোখ অন্ধ বা একটি চোখের দৃষ্টি শক্তি এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশী নষ্ট তা দ্বারা কুরবানী জায়েজ নেই।
(ছ) যে পশুর একটি কান বা লেজের এক তৃতীয়াংশ কিংবা তার চেয়ে বেশী কেটে গিয়েছে তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়।
(জ) অতিশয় কৃশকায় ও দুর্বল পশু যার এতটুকু শক্তি নেই যে, জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে পারে তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়।
(ঝ) ভাল পশু ক্রয় করার পর এমন দোষ ত্রুটি দেখা দিয়েছে যার কারণে কুরবানী দুরস্ত হয় না-এরপু হলে সেটিই কুরবানী দেয়া দুরস্ত হবে।
(ঞ) গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েজ। যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সে বাচ্চাও জবাই করে দিতে হবে। তবে প্রসবের নিকটবর্তী হলে সেরুপ পশু কুরবানী দেয়া মাকরুহ।
(ট) বন্ধ্যা পশু কুরবানী করা জায়েজ আছে।

শরীকের মাসায়েল
০১। বকরী, পাঠা, খাসী, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বায় এক জনের বেশী শরীক হয়ে কুরবানী করা যায় না। এগুলো একটা একজনের নামেই কুরবানী হতে হবে।
০২। একটা গরু, মহিষ, উটে সর্ব্বোচ্চ সাতজন শরীক হতে পারে, তবে সাতজনই হতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই, সেক্ষেত্রে সাত/ছয়/পাঁচজন কুরবানী দিতে পারে। তবে কারো অংশ সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম হলে তা হবে না।
০৩। মৃত্যের নামেও কুরবানী হতে পারে।
০৪। রাসুলে কারীম (সাঃ), তাঁর বিবিগণ ও বুযুর্গদের নামেও কুরবানী হতে পারে।
০৫। যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করে না বরং মাংস খাওয়া বা লোক দেখানো ইত্যাদি নিয়তে কুরবানী করে, তাকে অংশীদার বানিয়ে কোন পশু কুরবানী করলে সকল অংশীদারের কুরবানী-ই নষ্ট হয়ে যায়। তাই শরীক নির্বাচনের সময় খুবই সতর্ক থাকা দরকার।
০৬। কুরবানীর পশু ক্রয় করার সময় শরীক রাখার এরাদা ছিল না, পরে শরীক গ্রহণ করতে চাইলে ক্রেতা গরীব হলে তা পারবে না অন্যথায় পারবে।
০৭। যার সমস্ত উপার্জন বা অধিকাংশ উপার্জন হারাম, তাকে শরীক করে কুরবানী করলে অন্যান্য সকল শরীকের কুরবানী অশুদ্ধ হয়ে যাবে।

(সুত্র আহকামে জিন্দেগী)