আগৈলঝাড়ায় গ্রুপিংএর কারনে ১১ মাস ধরে বিএনপি’র সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ – নির্বাচনে ভরাডুবির আংশকায় নেতা কর্মীরা

আগৈলঝাড়া সংবাদদাতা ॥ বরিশাল-১ আসনের আগৈলঝাড়ায় বিএনপির কার্যক্রম ১১ মাস ধরে বন্ধ থাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছে। একারনে দলীয় নেতাকর্মীরা ত্রিধারায় বিভক্ত হয়ে পরেছে। বিএনপি’র সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন ক্ষমতাসীন দল ও  নিজ দলের প্রতিপক্ষদের হাতে এলাকায় আসলে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এ ঘটনায় তার অনুসারী নেতা কর্মীদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। ঈদ উল আযাহা ও শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান শুভেচ্ছা জানিয়ে নির্বাচনী এলাকায় পোষ্টার দিয়েছে। নিজ দলের প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে পোষ্টার ছেড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দলীয় ও স্থানীয় একাধিকসূত্রে জানা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বিএনপি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ত্রিধারায় বিভক্ত হয়ে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। বরিশাল-১ আসনের চারদলীয় ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান। নির্বাচনের পরে তার সমর্থিত আঃ লতিফ মোল্লাকে আহবায়ক করে আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গঠনের পর কেন্দ্রীয় অপর নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান সমর্থিত নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পরে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ২৭ নভেম্বর গৈলায় লতিফ মোল্লার বাড়ি কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এর পর থেকে বিএনপির রাজনীতিতে গ্রুপিং এর সৃষ্টি হয় এবং ত্রিধারায় বিভক্ত হয়। বিভক্তের কারনে সংঘর্ষের আশংকায় কেন্দ্রীয় বিএনপি গত বছর ৯ অক্টোবর আগৈলঝাড়া বিএনপির দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। আগৈলঝাড়ায় এস.এম আফজাল হোসেনকে সভাপতি ও আবুল হোসেন লাল্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা বিএনপি কমিটি গঠন করে চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর জেলা উত্তর বিএনপি’র সভাপতি মেজবা উদ্দিন ফরহাদ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান অনুমোদন করেন। ওই কমিটি ১৪ সেপ্টেম্বর গৌরনদী ডটকম সহ আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোতে প্রকাশ হলে আগৈলঝাড়া বিএনপির মধ্যে তোলপারের সৃষ্টি হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান সমর্থিত ওই কমিটির সভাপতি এস.এম আফজাল হোসেন সিকদার প্রত্যাখান করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান কেন্দ্রীয় বিএনপির কমিটির কাছে অভিযোগ দেওয়ায় কেন্দ্রীয় বিএনপি বরিশাল জেলা উত্তর সভাপতি ও সম্পাদককে চিঠি দিয়ে নতুন কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেয়।

আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বাচ্চু হাওলাদার গত ৫ অক্টোবর মৃত্যু বরন করায় ওই জানাজায় জেলা উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান অংশ গ্রহণ করেছিলেন। পরের দিন এক শোক সভায়ও তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। শোক সভায় প্রধান অতিথি আকন কুদ্দুসুর রহমান বাচ্চুর পরিবারকে ১লক্ষ টাকা দেয়। গত ৬ অক্টোবর রাতে কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান প্রায়ত বাচ্চুর বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়ে নগদ কিছু অর্থ প্রদান করেন। ৭ অক্টোবর বিএনপির সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন প্রায়ত বাচ্চুর বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা ও কবর জিয়ারত শেষে সদর বাজার দিয়ে ফেরার পথে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের ধাওয়া খেয়ে উপজেলা সদরের বিএনপি নেতার মুদি দোকানে অবরুদ্ধ হয়ে পরেন। এ সময় তার ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ভাংচুরসহ ১২ জন নেতাকর্মীরা আহত হয়। এসময় ক্ষমতাসীন দল ২০০১ সালের সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগে মিছিল করেছিলেন। বিএনপি ক্ষমতার সময় যারা স্বপনের দ্বারা লাভবান হয়েছিলেন জহির উদ্দিন স্বপন অবরুদ্ধ হয়ে পড়লেও তারা কোন সাহায্য সহযোগীতা করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। ২ঘন্টা পরে অবরুদ্ধ থেকে স্বপনকে তার সমর্থক কর্মীরা তাকে গৌরনদী পৌছে দেয়। নিজ দলের প্রতিপক্ষ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান গ্রুপের লোকজন রথখোলা নামক স্থানে স্বপনের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করেছিলেন।

ঈদুল আযহা ও শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে আকন কুদ্দুসুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান ও জহির উদ্দিন স্বপন এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোষ্টার করেছেন। গ্রুপিংএর কারনে জহির উদ্দিন স্বপনের পোষ্টার নিজ গ্রুপের প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন স্থান থেকে পোষ্টার ছিড়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন স্থান থেকে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানেরও পোষ্টার ছিড়ে ফেলেছে নিজ দলের প্রতিপক্ষ সমর্থকরা। আকন কুদ্দুসুর রহমান সামনের নির্বাচনে এমপি মনোনিত হবার জন্যও সবরকম চেষ্টা করে যাচ্ছেন, সব মিলিয়ে গ্রুপিং না মিটিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল থেকে যে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হোক না কেন তারই ভরাডুবির আংশকা করছেন এ আসনের দলীয় নেতা কর্মীরা।