৫০ বছর শিক্ষকতা করেও পেনশন ভাতা পাননি গৌরনদীর প্রবীন শিক্ষক মোসলেম আলী স্যার

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ দীর্ঘ ৫০ বছর শিক্ষকতা করেও পেনশন ভাতা পাননি গৌরনদীর কান্ডপাশা গ্রামের প্রবীন শিক্ষক মোসলেম আলী স্যার (৮০)। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কি দোষ আমার! সারাটি জীবন শিক্ষকতা করে শুন্য হাতে বাড়ী ফিরেছি। কই সরকারতো বিদায় কালে একটি টাকাও আমার হাতে দিলনা। অথচ আমার সারা জীবনটা মানুষের সেবায় বিলিয়ে দিয়েছি। নিজের পরিবার পরিজনের কথা ভুলে পরের ছেলে- মেয়েকে মানুষ করার কাজে সর্বদা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছি। এ প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাত কালে ক্ষোভের সাথে তিনি এ কথাগুলে বলছিলেন।

১৯৫৭ সালে মেট্রিক পাশের পর মাত্র ২০ টাকা মাসিক বেতনে পটুয়াখালী জেলার আমতলী থানার একটি  প্রাইমারী স্কুলে তার চাকুরী জীবন শুরু হয়। শিক্ষকতাকে এক মহান পেশা মনে বহু লোভনীয় চাকুরীর মোহ ত্যাগ করে এ পেশা তিনি বেছে নেন। কিছু দিন আমতলীতে চাকুরী করার পর সেখান থেকে নিজ এলাকার নলচিড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মোসলেম আলী। তিনি ওই স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেছিলেন। তবে শিক্ষাকতার পাশাপাশি তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন। মোসলেম আলী নিজেকে গৌরনদীর প্রথম বিএড শিক্ষক দাবী করে বলেন, সে যুগে বড় কষ্ট করে লেখাপড়া শিখেছি। তখন কোন নোট বই ছিলনা, একটি শব্দ শেখার জন্য ৪/৫ মাইল পায়ে হেটে স্যারদের কাছে গিয়েছি।

গৌরনদীর কান্ডপাশা গ্রামের মৃত আহম্মদ আলী আকনের পুত্র মোসলেম আলী আকন ২ ভাই ২ বোনের সবার ছোট। তবে তার ভাই বোনদের কেউ বেঁচে নেই। বর্তমানে তিনি বসবাস করছেন গৌরনদীর আধুনা গ্রামে। ৬ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক মোসলেম আলী স্যার ৮০ বছর বয়সে ও খালি চোখে বই পড়তে পারেন। ১৯৬০ সালে চাখার কলেজ থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে আইএ পাশ করেন এবং একই কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করেন ১৯৬৩ সালে। পরবর্তি সময়ে বিএড ডিগ্রী লাভ করেন ১৯৮৪ সালে।

জানাগেছে, তৎকালিন সময়ে গৌরনদীর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে একমাত্র তিনিই প্রথম বিএড পাশ প্রধান শিক্ষক। তিনি গৌরনদীর নলচিড়া হাইস্কুল, হোসনাবাদ, চন্দ্রহার, মুলাদীর কাজীর চর ও বাবুগঞ্জের ভুতেরদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত দায়ীত্ব পালন করেছেন।